আমাকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়: ডলি জহুর

অভিনয়শিল্পী ডলি জহুরের আজ জন্মদিন। দিনটি উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে চ্যানেল আইয়ের তারকাকথন অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানা গেল তাঁর জন্ম, মৃত্যুভাবনাসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

ডলি জহুর
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

বাসার বাইরে মনে হয়?

রাস্তায়। চ্যানেল আইয়ের ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। প্রযোজক অনন্যা রুমা তো নাছোড়বান্দা। বলল, আপনার জন্মদিন আমাদের চ্যানেলে উদ্‌যাপন করব। তাই যাওয়া।

প্রশ্ন :

টেলিভিশন চ্যানেলে জন্মদিনের এমন আয়োজন কেমন লাগে?

বুড়াকালে কিসের জন্মদিন। আমি তো দিনটা বিশ্বাসও করি না। কাউকে বোঝাতেও পারি না, জন্মদিনটা আবার কী। তারপরও দেখি অনেককে উদ্‌যাপন করতে। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন হয়, এটাও তেমন একটা অনুষ্ঠান। আহামরি কিছু নয়। আমার কাছে আলাদা কিছু মনে হয় না।

ডলি জহুর
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

জন্মের এই দিনটা বছর ঘুরে ফিরে আসে, এই দিনটায় কী ভেবেছেন।

একটা বছর শেষ হয়ে গেল। আমাকে আল্লাহ যে সময়টা বরাদ্দ করেছেন, সেখান থেকে একটা বছর শেষ হয়ে গেল। তাই এখানে শুভ জন্মদিন বলে কোনো লাভ নেই। ভাবতে থাকি, জীবনে কীই-বা এমন শুভ কিছু করলাম।

প্রশ্ন :

তার মানে জীবন চলে যাচ্ছে, কী করলাম, এটা আপনাকে খুব ভাবায়?

ওসব আমি ভাবি না। ভাবতে চাই-ও না। আমি মনে করি, সময়ের গতিতে এসব চলবে। তবে আমি প্রতিনিয়ত ভাবি, আমার সময় যেকোনো মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে। অল্প বয়সে ভাবতাম না, এত তাড়াতাড়ি কি চলে যাব? বিয়ের পর আমার স্বামীর ব্যাপারেও ভাবতাম, ওর তিনটা বড় ভাই আছে। কখনোই চিন্তা করি নাই, সে-ই আগে চলে যেতে পারে। মনে আসেই নাই। আল্লাহর কী পরিকল্পনা, সবার ছোট হয়ে সে-ই আগে মারা গেল। তারপর অন্য ভাইয়েরাও গেল। এখন আমার ভাশুরও বেঁচে নাই।

প্রশ্ন :

মৃত্যুচিন্তা কি আপনাকে ভাবায়?

আগে আমার মৃত্যুভাবনা সেভাবে কাজ করত না। ছোটবেলা থেকে ধর্মচর্চা করি। আমার সব সময় মনে হতো, জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু তো যেকোনো সময় হতে পারে। কিন্তু এখন মৃত্যুচিন্তা এত গভীরভাবে মনে হয়, এটা আগে হতো না। আমার অনেক বন্ধুরা চলে গেছে, আত্মীয়স্বজনের অনেকেও মারা গেছে। আমার ছোট ভাই আর বোনও মারা গেছে। আমরা হয়তো মনে করি যে এখন তো মারা যাওয়ার কথা না, কিন্তু আল্লাহর কখন কাকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা, সেটা তিনিই শুধু ভালো করে জানেন। মৃত্যুর কথা ভাবলে, একদম স্বাভাবিক লাগে। অনেকে বলে না, এই কাজটা তো করা হলো না। ওই কাজটা তো করা হলো না। আমি তো এসব নিয়ে তেমন কিছুই ভাবি না। কত কিছু পড়ে থাকে মানুষের। কত টাকাপয়সা, বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স রেখে মানুষ হুট করেই চলে যায়, তাই না। আমিও আমার সবকিছু রেখে একদিন চলে যাব, সবাইকে ছেড়ে। যেতে হবে, এটাই সত্যি। তাই মৃত্যু নিয়ে অকারণ টেনশন করার কিছুই নাই। আমি সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, কোরআন শরিফ পড়ি। সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি।

ধানমন্ডি ভূতের গলি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার কাছে জন্মের স্বার্থকতা কী?

আমি একজনের কাছে যেভাবে গ্রহীত হব, অন্যজনের কাছে কীভাবে গ্রহীত হব, এটা পুরোটাই আপেক্ষিক। তবে আমি মাঝেমধ্যে নিজেকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি। এই যে এত পুরস্কার পাই, প্রায়ই ভাবি, আমি কি এসব পাওয়ার যোগ্য ছিলাম। খোদার কসম। অনেকে এ-ও বলে, এটা তোমার বিনয়। সত্যিই এটা আমার বিনয় না। কয়দিন আগে, আমাকে যখন আজীবন সম্মাননা দিল, তখন আমার মনে হলো, এটা আমার এত তাড়াতাড়ি পাওয়া ঠিক হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, পুরস্কারের চেয়ে একজন দর্শক আমাকে ভালো লেগে হাসি দেয়, সেটাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার। আমাকে দেখে কেউ মুখ কালো করল না, বিরক্ত হলো না, মুখ ফিরিয়ে নিল না—এটাই বড় পাওয়া।

প্রশ্ন :

ছোটবেলায় কি অভিনয়শিল্পী হতে চেয়েছিলেন?

আমার শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা কখনোই ছিল না। নাচ, গান, অভিনয় সবকিছুই এমনিতে করতাম। করতে করতে একদম ভাসতে ভাসতে জোয়ারের ঠেলায় অভিনয়ে চলে আসছি।

ডলি জহুর

প্রশ্ন :

কিন্তু ছোটবেলায় কিছু একটা তো হতে চেয়েছিলেন?

আমার বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার বানাবে। আমার মনের মধ্যে কখনোই কাজ করেনি, না আমি ডাক্তার, না ইঞ্জিনিয়ার বা দায়িত্বশীল কিছু হব। সব সময় চেয়েছি স্বাধীনচেতা হব। এখনো আমি স্বাধীনচেতা। আমাকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি এ-ও মনে করি, আমাকে কেন জোর করে কিছু বলতে হবে। আমাকে কিন্তু কোনো কাজ দেওয়া হলে, সাধ্যের মধ্যে থাকলে আমি করি। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের মধ্যে কারও কোনো রোগী দেখতে হবে, সারা রাত ধরে কিংবা কয়েক দিন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দেখতে হবে—আমি সেবা করব। পাহারা দেব। সাধ্যমতো একটা রোগীকে দেখব। আমার জীবনের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে। স্বাধীনতার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তখন আমরা ভাইবোনেরা মিলে ঢাকা মেডিকেলে যেতাম। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করতাম। হাত মুখ ধোয়াইয়ে দেওয়া, কাপড়চোপড় চেঞ্জ করে দেওয়া, খাওয়াদাওয়া করানো, ওষুধ খাওয়ানো—এসব করতাম। তখন থেকেই পরিচিতজনদের কারও হাসপাতালের খবর পেলে আমি কাজটা করি।

প্রশ্ন :

কোনো অপূর্ণ স্বপ্ন রয়েছে কী?

সব কথার শেষ কথা, কোনো শিল্পী বলবে না, আমার তৃষ্ণা মিটে গেছে। কোনো শিল্পীই বলবে না, এখন আর আমার কোনো স্বপ্ন নেই।