ছোটবেলায় বাসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাংলা সিনেমা দেখতাম: সুনেরাহ

গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে দীপংকর দীপন পরিচালিত অন্তর্জাল। এতে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি ছবিতে অভিনয় শুরুর ঘোষণাও দিলেন। এসব নিয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
সুনেরাহ বিনতে কামাল
ছবি : সুনেরাহর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

অন্তর্জাল–এর শুটিং শুরুর সময় বিষয়বস্তু ও অভিনয়শিল্পীর কারণে বেশ সাড়া ফেলেছিল। মুক্তির পর কতটা সাড়া ফেলেছে বলে মনে করেন?

আমি তো বলব, খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি, এতটা প্রত্যাশা করিনি। এটা তো আমার দ্বিতীয় ছবি। অন্তর্জাল দেখতে এ প্রজন্মের মানুষজন পরিবার নিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি। প্রত্যেকে এসে আলাদাভাবে বলছে, ‘নায়িকারা এ রকম চরিত্রে কাজ করতে চায় না; কিন্তু তুমি সুন্দরভাবে ব্যাপারটা ম্যানেজ করেছ।’ হল ভিজিটে গিয়ে তো পরিচিত অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। একই সময়ে যেহেতু শাহরুখ খানের জওয়ান চলছে; ভেবেছি, ওরা বুঝি সেটিই দেখতে এসেছে। জানতেও চেয়েছিলাম অনেকের কাছে। উত্তরে তারা বলেছে, ‘নাহ, আমরা অন্তর্জাল দেখতে এসেছি।’ এসব যখন দেখছি, তখন তো অবশ্যই ভালো সাড়াই বলব।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

ছবিটি দেখার পর দর্শকেরা কী বলছেন?

অনেকে বলেছেন, এ রকম সিনেমা বাংলাদেশে আগে হয়নি। অনেকে লোকেশন পছন্দ করছে। কাস্টিংও ভালো লেগেছে জানিয়েছে। গল্প ভালো। পরিবার নিয়ে দেখার মতো, বাচ্চারাও মজা পাচ্ছে। আমার মনে হয়, দেশের দর্শকেরা এ ধরনের ছবি চায়।

সুনেরাহ বিনতে কামাল
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এ ছবি আপনার অভিনয়জীবনে কতটা প্রাপ্তি যোগ করেছে?

আমি বলব, মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় আরও কাজ করতে চাই। এই ছবিতে আমার জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় ছিল। কাজের ধরনটা বুঝতে পেরেছি। প্রস্তুতির জন্য কী করতে হয় শিখলাম। এই ছবির পর আমার এ–ও মনে হচ্ছে, আমি বড় হয়ে যাচ্ছি। আজ আজরা (র‌্যাম্প মডেল আজরা মাহমুদ) আপু একটি অনুষ্ঠানের শুটিংয়েও আমাকে এমনটা বলেছেন।

প্রশ্ন :

এমনটা বলার কারণ কী

তিনি তো আমাকে সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছেন, যখন আমি র‌্যাম্প মডেলিং করতাম। তখন ও লেভেল শেষ করছি মাত্র। সেই হিসাবে তার চোখের সামনে বড় হয়েছি। তিনি আজ বললেন, আমি নাকি সব সময় বেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

সুনেরাহ বিনতে কামাল
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

আপনার পরিবারের সদস্যরা অন্তর্জাল ছবিটি দেখেছেন? দেখলে কী বলেছেন?

আব্বু তো দেখতে পারেননি। তিনি ঢাকায় নেই। খুব ব্যস্ত। আম্মুকেও নিয়ে যেতে পারিনি। কারণ, এরই মধ্যে নেক্সট ছবির চিত্রনাট্য পড়তে হচ্ছে। এত মোটা পাণ্ডুলিপি, এখনো পড়ে শেষ করতে পারিনি।

প্রশ্ন :

নতুন ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলবেন?

বলব না। তবে এটুকু বলছি, ভালো কাজ। গল্প পড়ে আমি মুগ্ধ। পরের মাস থেকে কাজটা শুরু করব।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

বিনোদনমাধ্যমে কাজে আপনার পরিবার কতটা সাপোর্ট করে?

আমরা তিন ভাইবোন। বড় বোন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ছোট ভাই মা–বাবাসহ আমি দেশে আছি। তাঁরা সবাই খুব খুশি। আমার মা তো গৃহিণী। বাবা পুলিশে চাকরি করতেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি হয়ে রিটায়ার্ড করেছেন। তবে এই কাজে বড় বোন সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তির পর থেকে বাবা পুরোপুরি সাপোর্ট করেন। তার আগপর্যন্ত কনফিউজড ছিলেন, পেশা হিসেবে কেমন কী হবে...এসব আরকি।

প্রশ্ন :

বাবা পুলিশের চাকরির কারণে তো আপনাকে নিশ্চয় দেশের নানা প্রান্ত থাকতে হয়েছে?

না, আমরা ঢাকাতেই ছিলাম। আব্বুই চাকরির কারণে নানা জায়গায় থাকতেন। আমরা ছুটির সময় যাওয়া–আসার মধ্যে থাকতাম। কারণ, আমাদের ভাইবোনদের স্কুল তো ঢাকাতেই ছিল। ছুটিতে সবাই মিলে আবার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘিতে। এখন অবশ্য দাদা–দাদি কেউ বেঁচে নেই। নানা–নানি আছেন, তাঁরা রংপুরে থাকেন। তাঁরা দুজনেই আমাকে নিয়ে খুবই হ্যাপি। ছোটবেলা থেকে যা যা করেছি, সবকিছুতে তাঁদের সাপোর্ট ছিল।

সুনেহরা বিনতে কামাল
ছবি : সুনেহরার সৌজন্যে

প্রশ্ন :

আপনার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম, পরিবারে কেউ বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেননি। সিনেমার প্রতি আগ্রহ জন্মাল কীভাবে?

বলতে পারেন, বুদ্ধি হওয়ার আগে থেকেই আমি সিনেমাপাগল ছিলাম। সব সময় টেলিভিশনে সিনেমা দেখতাম। তবে আড়াই বছর বয়স থেকে নাচ শিখেছি। আম্মু আমাকে বাফা (বুলবুল ললিতকলা একাডেমি) ওয়াইজঘাট শাখায় গানের ক্লাসে ভর্তি করিয়েছিলেন। এক মাস পর আম্মু গিয়ে দেখেন, আমি নাচের ক্লাসে ক্লাস করছি। কোর্স শেষেও নাচের প্র্যাকটিস করে গেছি।

প্রশ্ন :

বলছিলেন, সিনেমাপাগল ছিলেন। তা সিনেমা হলে গিয়েই কি সিনেমা দেখেতেন?

বাসায় বসে সারা দিন বাংলা সিনেমা দেখতাম। ছোটবেলায় আমার বাসার গৃহকর্মীর সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাংলা সিনেমাই দেখতাম। বাংলা সিনেমা দেখতে আমার খুব ভালো লাগত। শাবনূর আপু, শাবানা ম্যাম, জসিম স্যার, রাজ্জাক স্যার, সালমান শাহ—সবার সিনেমাই দেখতাম। মান্না আঙ্কেলের সিনেমাও দেখতাম। কারণ, মান্না আঙ্কেলের ছেলে সিয়াম আবার আমাদের স্কলাস্টিকা স্কুলে পড়ত। ওই জায়গা থেকে তাঁর সিনেমা দেখতে বেশি ভালো লাগত। স্কলাস্টিকায় সিয়াম আমার সিনিয়র হলেও সে আমার ভালো বন্ধু ছিল। মাঝে বেশ কয়েক বছর সিনেমা দেখা হতো না। পরিবেশও ভালো ছিল না। ভালো মানের সিনেমা তৈরিও হতো না। কয়েক বছর ধরে আবার ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে। সিনেমার সবকিছু আবার অনেক ইমপ্রুভ হচ্ছে। প্রোডাকশনও ভালো হয়েছে।

সুনেহরা বিনতে কামাল
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনার প্রথম ছবি ‘ন ডরাই’–এ নায়ক শরীফুল রাজ, পরের ছবিতে ‘অন্তর্জাল’–এ নায়ক সিয়াম—এরপর কাকে নায়ক হিসেবে চান?

নেক্সট ছবিতে চেষ্টা করব নায়ক যেন না থাকে। সব ছবিতে নায়ক থাকতে হবে, তার কি কোনো কথা আছে। আমার যদিও চিন্তা আছে, তারপরও দেখা যাক কী আছে ভাগ্যে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

সিনেমা নিয়ে স্বপ্নটা কী?

কাজ তো করতে চাই। মাত্র তো শুরু। ভালো কাজের অংশ হয়ে সবার মনে জায়গা করে নিতে চাই।