সংবাদপাঠক মা চেয়েছিলেন মেয়ে গানের জগতে নাম লেখাবেন। গানের স্কুলেও ভর্তি করিয়েছিলেন মেয়েকে। কিন্তু সাত বছর ধরে পেশাদার অভিনয়শিল্পী নাবিলা ইসলাম। ১ ডিসেম্বর বঙ্গবিডিতে মুক্তি পাওয়া ‘গার্লস স্কোয়াড সিজন ৩’ সিরিজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাবিলা। এখন ব্যস্ত ভালোবাসা দিবস ও ঈদুল ফিতরের নাটকের শুটিংয়ে। গত বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন।
প্রথম আলো :
কিছুদিন আগে ‘বিয়ে করেছি’ এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত জানালেন, সেটি ছিল নাটকের প্রচারণা। আসলে এমন নেতিবাচক প্রচারণা থেকে কতটা সাড়া পান?
শুটিংয়ের সময়ে ‘বিয়ে-কাণ্ড’ ঘটিয়ে নাটকের প্রচারণা ভালো হলেও আমার অবস্থা খারাপ হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিয়ের সেই ফেসবুক পোস্টে সহকর্মী ও বাসার সবাই কনফিউজড হয়ে যান। আমার আম্মুকেও অনেকে ফোন করেন। এরপর আম্মু আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাকি বিয়ে, তোমার নাকি এনগেজমেন্ট...। তাঁর সহকর্মীরাও নাকি এমনটি বলেছেন। আমাকে অনেকে ফোন করে বলেছেন, ‘নাবিলা, এটা আবার কী হইল! কিছুই তো জানালে না।’ কেউ আবার বললেন, ‘এ রকম কইরো না। এটা কিন্তু ঠিক নয়। তোমার বর তো অনেক ভালো ছিল। কেন এমনটি করতে গেলে! আবার কী হইল!’
প্রথম আলো :
আপনার স্বামী কী বলেছেন?
সে কিছুই বলেনি। বলতে পারেন, ও এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নাটকের মধ্যে এ ধরনের ব্যাপারস্যাপার ঘটে, এটা সে জানে (হাসি)। তবে আমার বরকেও অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, অনেকে তাকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আপনাদের মধ্যে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়েছে?’ সে বলেছে, ‘আমি কিচ্ছু জানি না ভাই। এটা তাদের নাটকের প্রজেক্ট, তারাই ভালো জানে।’
প্রথম আলো :
এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে কী উপলব্ধি হয়েছে?
প্রথমে খুব মজা পাচ্ছিলাম। ফান হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। পরে যা হয়েছে, তাতে বিরক্তও হলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এসব আর নয়।
প্রথম আলো :
‘গার্লস স্কোয়াড সিজন ৩’-এ কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
আমরা তো সিজন ওয়ান থেকে কাজ করছি। যারা এত দিন কাজ করেছে, সবাই বন্ধুর মতো। শুরুতেই ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে আবার...কাজটা না মজার মধ্য দিয়ে করি। বুঝতেও পারি না। মজাটা বাকিরাও পায়।
প্রথম আলো :
এখন তো বেশির ভাগ শিল্পী ভালোবাসা দিবস ও ঈদুল ফিতরের কাজ করছেন। আপনি...
কাজ তো অনেক করছি, কোনটা যে কিসের কাজ, জানি না। তবে কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের কাজ যেমন করলাম, ভালোবাসা দিবসেরও করেছি। আবার এমন কয়েকটি কাজও করেছি, পরিচালকেরা এসবের ব্যাপারে কিছুই বলেননি।
প্রথম আলো :
‘যুদ্ধজীবন’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হয়েছে আপনার। কী অবস্থা এখন ছবিটির?
কদিন আগে সেকেন্ড লটের কাজ শেষ হলো। প্রথম ছবিতে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছি ফেরদৌস ভাইকে। তিনি তো এখন এমপি ইলেকশন করছেন। নেতা হয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মনোনয়নের খবর পেয়ে খুব খুশি। আরেক লটের কাজ আছে। ফেরদৌস ভাই ফ্রি হলে কাজটি শেষ করব আমরা।
প্রথম আলো :
প্রথম ছবিতে সহশিল্পী হিসেবে ফেরদৌসকে পাওয়ার ব্যাপারটি আপনার দৃষ্টিতে কেমন?
সত্যি বলতে আমি এমন একটা চরিত্র বা গল্পে নিজেকে দেখতে চেয়েছি। সহশিল্পী হিসেবে ফেরদৌস ভাইকে পাওয়ার বিষয়টি খুবই আনন্দের। তাঁর ব্যাপারে আগে অনেক গল্প শুনেছি, তাঁর অনেক শো দেখেছি। তিনি সিনেমায় অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যখন কাজ করতে গেলাম, দেখলাম, তিনি সত্যি খুবই চমৎকার, ফ্রেন্ডলি, আন্তরিক ও সহযোগিতাপরায়ণ; কাজের ক্ষেত্রে যা খুবই দরকার। তিনি বড় পর্দার একজন মানুষ, আমি ছোট পর্দার, কিন্তু কোনোভাবেই তা বুঝতে দেননি।
প্রথম আলো :
অভিনয়ের শুরুটা কবে কীভাবে?
২০১৬ সালের শেষ দিকে পেশাদার অভিনয়ের শুরু হলেও প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই ২০১১–১২ সালে, ‘লিটল অ্যাঞ্জেল আই অ্যাম ডায়িং’ নাটক দিয়ে। তখন আমি চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। কাজটা ছিল ওয়াহিদ তারেক ভাইয়ের সঙ্গে, তিনি চট্টগ্রামের। আমাদের সম্পর্কও বড় ভাই ও ছোট বোনের মতো। অনেক আগে থেকে চেনাজানা ছিল। ওই সম্পর্ক থেকে একদিন তিনি বললেন, ‘একটা চরিত্র আছে, করে দে।’ চট্টগ্রামে শুটিং হয়। আমিও তখন এত কিছু বুঝি না, জানিও না। তাই করে দিয়েছি। এরপর আমি পড়ালেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে পড়াশোনার ফাঁকে ইফতেখার ফাহমী, আশুতোষ সুজন ভাইয়ের দু-একটা খণ্ড নাটকে কাজ করেছি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে করতাম। অভিনয় নিয়মিত করব কি করব না মাথায় ছিল না।
প্রথম আলো :
কী হতে চেয়েছিলেন জীবনে?
আমার আসলে অভিনয় করতে ভালো লাগত। কিন্তু আমি কনফিউজড ছিলাম। কী করব, কীভাবে করব। আমার আম্মু (নাসরীন ইসলাম) তো বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদপাঠক, তিনি সরকারি কর্মকর্তা, বাবা করপোরেট জব করেন। অভিনয়ে মায়ের প্রভাব ছিল। তবে মায়ের পছন্দ ছিল গান, যেটা আমি পারতাম না। তাই গান ভালো লাগত না। আম্মু সবকিছু শিখিয়েছেন, গানে ফাঁকি দিয়ে অভিনয়ে চলে এসেছি।
প্রথম আলো :
রূপচর্চাবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। আপনার অনুষ্ঠানে এমন কাউকে অতিথি হিসেবে চান, যাঁর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের।
২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে উপস্থাপনা করছি। বাংলাদেশের সব তারকার সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয়েছে। সাদিয়া ইসলাম মৌ ও জয়া আহসান আপু আমার অনেক প্রিয়। তাঁদের সঙ্গে আড্ডা হয়েছে। দেশের বাইরে অবশ্য বাকি আছেন শাহরুখ খান। তবে শাহরুখ খানের সঙ্গে আড্ডা নয় সারা দিন বসে কফি খেতে চাই।