বাংলাদেশে এই প্রথম এসেছেন। এখানেও যে আপনি জনপ্রিয়, তা কি টের পেয়েছেন?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, সেটা এয়ারপোর্টে পা রেখেই কিছুটা বুঝেছি। ইমিগ্রেশন যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আমার দিকে চেয়ে যেভাবে অভ্যর্থনার মতো করে হেসেছিলেন, তাতেই বুঝতে পারছিলাম, তাঁরা আমাকে চেনেন।
তারপর ইমিগ্রেশন ক্রস করে যখন আমি বের হতে যাচ্ছি, তখন ওখানকার আর্মড ফোর্সেসের লোকেরা ছিলেন। সেখানে তাঁদের অফিসে বসে আমাকে কফি খেয়ে আসতে হয়েছে।
আপনাদের এখানে আসার সময় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমাকে দেখে তিনটি বাইক দাঁড়িয়ে গেল। ছবি তোলা হলো। এসব হচ্ছে।
সবাই হাসিমুখে রিকগনাইজ করেন। সম্মান দেন। আমি বুঝতে পারি, কোথাও না কোথাও আমার একটা সম্মানের জায়গা তৈরি হয়েছে।
এই সম্মানপ্রাপ্তিতে কি আপনার মধ্যে অহম আসে? নিজের মধ্যে অহংকারমতো কিছু টের পান?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, আসে না। আমি আসতে দিই না। আজকে যেটা ঘটে গেল, আমি কালকে তা ভুলে যাই।
আপনি এখন সিনেমার, কিন্তু শুরুটা তো থিয়েটারে...
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমার বাবা (শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়) বড় অভিনেতা হলেও বাড়িতে তাঁর প্রভাব প্রায় ছিলই না। বাড়িতে ফিল্ম নিয়ে আলোচনা বা ফিল্মের লোকজন নিয়ে পার্টিফার্টি কিছুই হতো না।
আমার অভিনয়ের শুরুটা হয়েছিল থিয়েটার থেকে। বাবার উৎসাহেই থিয়েটারে গিয়েছিলাম। কারণ, থিয়েটারের ডিসিপ্লিন থাকাটা দরকার।
থিয়েটারের অদ্ভুত একটা ডিসিপ্লিন আছে, যেটা শুধু অভিনয়সংক্রান্ত নয়।
সত্যজিতের ‘নায়ক’ ছবির একটি দৃশ্যে উত্তমকুমার অভিনীত ‘অরিন্দম’ চরিত্রটিকে আমরা প্রথমে থিয়েটারের হিরো হিসেবে পাই। একপর্যায়ে সে সিনেমায় নায়কের অভিনয় করার প্রস্তাব পায়। তখন অরিন্দমকে তার থিয়েটারের গুরু শঙ্করদা বলেন, তাঁর সিনেমায় যাওয়া চলবে না। শঙ্করদা বলেন, সিনেমায় গ্ল্যামার আছে ঠিকই, কিন্তু সেটা আর্টের যথার্থ জায়গা নয়।
কারণ, সিনেমায় অভিনেতারা পরিচালকদের হাতের পাপেট হয়ে থাকে। এডিটিং প্যানেলের লোকের কাছে সে পুতুল হয়ে থাকে। কিন্তু থিয়েটারে অভিনেতারা সরাসরি দর্শকের সঙ্গে কানেক্টেড হতে পারে।
শঙ্করদার কথাটা কি ঠিক? মানে সিনেমা কি আসলেই যথার্থ আর্টের জায়গা নয়?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: শঙ্করদা নামের ওই ক্যারেক্টারের মুখের ওই সংলাপটা একদমই ভুল কথা। সত্যজিৎই সেটা দেখিয়েছেন।
আমি সত্যজিৎকে ক্রেডিট দেব এ জন্য যে তিনি দেখিয়েছেন, থিয়েটারের কিছু ক্রিটিক্যাল ব্যাপারস্যাপার থাকে, যেগুলো হয়তো সম্পূর্ণ ঠিক নয়।
আদতে থিয়েটারের সঙ্গে সিনেমার চিরকালের একটা সংঘাত রয়ে গেছে। সংঘাতটা কিন্তু সিনেমা যাঁরা করেন, তাঁদের দিক থেকে সেটা আসে না। আসে থিয়েটার যাঁরা করেন, তাঁদের দিক থেকে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা মনে করেন, তাঁরা অনেক বেশি উচ্চতর কিছু। তাঁরা মনে করেন, তাঁরা উচ্চতর মিডিয়ামের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কোনো মিডিয়ামকে ছোট করা উচিত নয়।
আগে থিয়েটার ও সিনেমার এই দূরত্বটা অনেক বেশি ছিল। আগে এমন একটা চল ছিল যে থিয়েটার যাঁরা করতেন, তাঁরা ঠিক করেই নিতেন যে ফিল্মে যাবেন না।
অনেকে বলেন, সিনেমায় ভুল করলে বারবার টেক করা যায়। কিন্তু থিয়েটারে সে সুযোগ নেই। কিন্তু ভাবুন, থিয়েটারে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা কিন্তু অনেক দিন ধরে রিহার্সাল করে যাচ্ছেন।
কিন্তু ফিল্মে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। সে যেদিনই যাচ্ছে, সেদিনই সিনে নামছে। ফলে এটা একটা আলাদা আর্ট—এটা আপনাকে মানতে হবে।
আপনি অন্য এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ‘দেয়া নেয়া’ ছবির ‘দোলে দোদুল দোলে ঝুলনা’ গানে উত্তমকুমার আর তরুণকুমার যেভাবে ঠোঁট মিলিয়েছেন, তা বিস্ময়কর। কিন্তু সেই লিপ মেলানোর জন্য তাঁদেরও তো রিহার্সাল দিতে হয়েছে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, তা দিতে হয়েছে। কিন্তু দেড় মাস ধরে তো নয়। এমনকি এক দিন ধরেও তো নয়।
আজকাল যেসব সিরিয়াল চলছে এবং তাতে যাঁরা অভিনয় করছেন, তাঁরা তো আগের দিনও স্ক্রিপ্ট হাতে পান না। যেদিন সেটে যাচ্ছেন, সেই দিনই তাঁদের হাতে সিন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেদিনই ১২ পাতার একটা সিন শুট হয়ে যাচ্ছে।
এটাও কিন্তু শিল্পীর একটা অদ্ভুত ক্ষমতা।
কিন্তু এটা কি আর্টের প্রতি একধরনের অবিচার নয়?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আর্টের প্রতি অবিচার হলেও এখন যদি সিস্টেমটাই এ রকম হয়ে যায়, তাহলে তার মধ্য থেকে কাজ বের করে নেওয়াটাই আর্ট।
মানে, আমার হাতে অত সময় নেই। আগে একটা সিরিয়ালের জন্য তিন মাস-ছয় মাস সময় দেওয়া হতো। এখন ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। সেই চাপ অ্যাডাপ্ট করার ক্ষমতাও তো থাকতে হবে।
এই তাড়াহুড়ো কি আর্টের সাসটেইনেবিলিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না? মানে বলতে চাইছি, আগের একটা বড় ধারাবাহিক নাটক বা সিরিয়াল দেখলে মনের মধ্যে গল্পটা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে যেত, এখনকার সিরিয়ালগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মনের ওপর তো ফেলতে পারছে না।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সেটা তো সাবজেক্টের ওপর নির্ভর করছে। আমি আমার অভিনয়ের জায়গা থেকে বলতে পারি, সাবজেক্ট বাছাই করা বা অভিনয়ের জন্য যে সময়টা দিতে হবে, সে সময়টা কেউ দিচ্ছে না।
মানে, প্রডিউসারদের তরফ থেকে সে সময়টা নেই। আমি জুন মাসে ডিসাইড করছি, আমি একটা ছবি করব আগস্টে। আমার সেখানে স্ক্রিপ্টও লেখা নেই। কেন? এর জন্য পুরো সিস্টেমেই গন্ডগোল লেগে গেছে।
আপনার অভিনীত একটা ছবি ‘আশ্চর্য প্রদীপ’, যেটি দীর্ঘদিন আমার মনের মধ্যে থাকবে। ওটা একটা রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী ছবি। পুঁজিবাদী সমাজের বিস্তার নিয়ে তার গল্প।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, ওটা সাহিত্যনির্ভর একটা ছবি। শীর্ষেন্দুর গল্প অবলম্বনে।
তো, আমরা যাঁরা মধ্যবিত্ত, আমরা যাঁরা একটু-আধটু লেখাপড়া করার চেষ্টা করি, তারা হয়তো এসব ওপরের গল্পের পাশাপাশি অন্তর্নিহিত গল্পটা বুঝতে পারি। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির নিচের দিককার দর্শক এসব ছবির অন্তর্নিহিত ভাব সম্ভবত বুঝতে পারেন না।
তাহলে কি আপনার অভিনীত ছবির পরিচালকেরা সেই অন্ত্যজ শ্রেণিকে মাথায় রাখছেন না?
ওই মানুষগুলো কি এখন তাঁদের জন্য বোধগম্য সিনেমা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না? তাঁদের জন্য কোন প্ল্যাটফর্ম থাকবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন না। তাঁরা নিজেদের মতো করে ইউটিউবে ছবি দেখে নিতে পারবেন। ওটিটি কিংবা টিভি রয়েছে। টিভিতে তাঁরা সিরিয়াল দেখতে পারছেন।
ওটিটি যদি কেউ সাবস্ক্রাইব করে, তাহলে খুব কম পয়সায় সেখানে সিনেমা দেখার সুযোগ রয়েছে।
মুশকিল হচ্ছে, আমাদের সময়ে, আমরা যাঁরা সিনেমা দেখে বড় হয়েছি, বড় বড় পর্দার সামনে সিটি মেরে সিনেমা উপভোগ করেছি, তখন আমাদের কত টাকা খরচ হয়েছে? কিচ্ছু না।
আমি ৯০ পয়সায় সিনেমা দেখেছি। তখন আমাকে টিফিনের জন্য ৫ টাকা দেওয়া হতো। সেখান থেকে ১ টাকা বাঁচিয়ে সিনেমা দেখতাম। তো, সেই হলগুলো তো এক এক করে বন্ধ হয়ে গেল। সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে গেল।
এখন মাল্টিপ্লেক্সে, আপনি যাঁদের কথা বলছেন, তাঁরা যেতে পারছেন না। তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মাল্টিপ্লেক্সে তাঁরা ৪০০-৫০০ টাকায় টিকিট কেটে দেখতে পারবেন না সিনেমা।
ধরুন, তাঁকে সেই ৪০০ বা ৫০০ টাকা দেওয়া হলো এবং বলা হলো, ‘যাও, তুমি আজ সিনেমা দেখে এসো।’ কিন্তু সে তো এই গল্পের সিনেমা উপভোগ করতে পারবে না। কারণ, এই গল্পগুলো তো তাদের নয়।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, এটা তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এটা তো আপনাকে বুঝতে হবে, আমি যে সিনেমাটা করব, সেখান থেকে আমি কী পাচ্ছি? বহু বছর ধরে তো দেখে আসছি, সেই শাশুড়ি-বউমা-ননদ ফ্যামিলি পলিটিকস।
এগুলো তো তারা সিরিয়ালেই দেখতে পাচ্ছে। এসব দেখার জন্য তাকে আবার সিনেমা হলে আসার দরকারটা কী?
সেই শাশুড়ি এখনো বউমার দুধের বাটিতে বিষ মেশাচ্ছে, বাড়ির নারীরা ঝগড়া করছে; বাড়ির পুরুষেরা কোনো কাজে যায় না; তারা সোফায় বসে সেই ঝগড়া শুনছে; তারা একবার মুখ বাঁকাচ্ছে; একবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে—এগুলো তো সিরিয়ালেই পাওয়া যাচ্ছে। সিনেমায় এসব গল্পের দরকার কি আছে?
গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে...
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, আমি ছিলাম সেখানে। অনিল কাপুর ছিলেন, অনুরাগ কাশ্যপ ছিলেন। ফ্রেঞ্চ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ছিল ওটা।
সেখানে অনুরাগ কাশ্যপ বলেছিলেন, বলিউডের সিনেমার প্রথম পতন ঘটেছে একতলা ভবনের ছাদ থেকে মাটিতে।
আর বাংলা সিনেমার পতন ঘটেছে অনেক উঁচু বহুতল ভবনের ছাদ থেকে একেবারে মাটিতে। মানে, আমরা এত উঁচুতে ছিলাম; আর সেখান থেকে যে পতনটা হয়েছে, সেটা অভাবনীয়।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: দেখুন, আমার বাবা বলেছিলেন, উত্তমকুমার মারা যাওয়ার পর কলকাতার সিনেমায় দেড় বছর কোনো শুটিং হয়নি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। এবং তারপর ধীরে ধীরে কিছু ছবি এল।
তারপর ইন্ডাস্ট্রির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু তারপর নব্বইয়ের দশকে এমন একটা সময় এল, যখন অরিজিনাল কোনো গল্প পাওয়া যাচ্ছিল না। বাংলাদেশি ছবির রিমেক হচ্ছিল তখন ওখানে।
সাউথের ছবি রিমেক হচ্ছিল। একজন ডিরেক্টর একটি সেটে তিনটি ছবির শুটিং একসঙ্গে করে ফেলছিলেন বাজেট বাঁচানোর জন্য। তাহলে পতন ঘটবে না কেন?
পতনের হাইটটা অনেক বেশি ছিল। কারণ, আমাদের যে গৌরবময় সময় ছিল, সেখান থেকে হঠাৎ এত নিচে পতিত হয়েছিলাম যে সেটা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আপনি যে গৌরবময় সময়ের কথা বলছেন, সে সময় বেশির ভাগ ছবি বাণিজ্যিক তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছবিগুলো সাহিত্যনির্ভর ছিল।
কিন্তু সেখান থেকে আমাদের পতন ঘটল। তার মানে কি আমাদের ভোক্তা, অর্থাৎ দর্শকদের রুচির ও পতন ঘটেছিল?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: একদম তাই। নব্বইয়ের দশকে রুচিশীল দর্শক আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখেনি। ঋতুপর্ণ ঘোষ আসার পর আবার রুচিশীল দর্শক হলে ফিরেছে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উনিশে এপ্রিল’ আসার পর একটা মোড় ঘুরল।
প্রথম আলো :
তার মানে ঋতুপর্ণ ঘোষ একটা টার্নিং পয়েন্ট?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: এক্সাক্টলি।
ঋতুপর্ণ ঘোষের আগে যে একটা শূন্যতা ছিল...
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সেটা অঞ্জন চৌধুরীর মতো কিছু নির্মাতা এসে মেকআপ দিয়েছিলেন। তারপর একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো...কেমন যেন সিস্টেমটাই পাল্টে গেল।
একজন হিরো একজন প্রডিউসারের সঙ্গে টাইআপ করে ঠিক করলেন বছরে পাঁচটা ছবি তাঁর সঙ্গেই করবেন। আমরা দেখতে পেলাম, একজন ডিরেক্টর চারটি দেয়ালে চারটি ছবির শুটিং করছেন একই দিনে।
তো, এ দিয়ে তো সিনেমার মান ভালো হতে পারে না।
একটু আগে বলছিলেন না যে সিনেমার মান পড়ে যাচ্ছে; তো ওই পড়াটা ওখান থেকেই শুরু হয়েছিল। এই সবকিছু বাজেট কমানোর জন্য। সেটা বাংলা ছবির জন্য ক্ষতি করেছিল; ভালো কিছু হয়নি।
এ মুহূর্তে আপনার অভিনীত মেঘে ঢাকা তারা বলা যায় রুচিশীল দর্শকদের জন্য একটা উপভোগ্য ছবি। এই টাইপের ছবি যদি এখন মুক্তি পায়, আবার একই সঙ্গে যদি ‘কেজিএফ’টাইপের হাই বাজেটের ছবি আসে, তখন আমাদের যে তরুণসমাজ তারা তো ‘কেজিএফ’টাকেই বেছে নেবে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: কারণ, তাদের সঙ্গে তো ঋত্বিক ঘটকের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা তো ইতিহাসটা জানেই না। এবং খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, এতটাই অবক্ষয় হয়েছে যে আমি যেসব জার্নালিস্টকে ফেস করি...ধরুন যেখানে একটা ছবির প্রিমিয়ার হচ্ছে, সেখানে আসা সাংবাদিকদের অনেকেই থাকেন, যাঁদের বাংলা ছবি সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই নেই।
সেখানে তাঁরা বোকা বোকা কিছু প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। ‘এই ছবিতে আপনার চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন’-টাইপের। সেটা ‘ফেলুদা’র তোপসেই হোক, বা ‘ব্যোমকেশ’-এর অজিতই হোক। তাঁরা একই প্রশ্ন ক্রমাগত করে যাচ্ছেন।
আমি তখন তাঁদের বলি, যাঁরা এখানে সিনেমা দেখতে এসেছেন, তাঁরা ওই সিনেমার মূল গল্পের বইগুলো পড়ে এসেছেন।
ফলে আমার চরিত্র সম্বন্ধে এই দর্শকদের কিছু বলতে হবে না। এই অবক্ষয় শুধু সিনেমায় হয়নি। সব ক্ষেত্রেই হয়েছে। পলিটিকস থেকে সিনেমা—যেকোনো ক্ষেত্রেই এ ধরনের অবক্ষয় রয়েছে।
তো কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে যে এটার মানে কী, ওটার মানে কী।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সমস্যা হলো, এখন সিস্টেমের বাইরে কাউকেই কিছু বলতে দেওয়া হচ্ছে না। যেকোনো ক্ষেত্রে এই অবস্থা চলছে।
না, আমি এ ক্ষেত্রে আশাবাদী।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: এ বাবা..., আশা নিয়েই তো বাঁচতে হবে।
‘মেঘে ঢাকা তারা’ ও ‘কেজিএফ’-এর মতো ছবি যদি একই সঙ্গে বিভিন্ন হলে মুক্তি পায়, তাহলে দেখা যাবে সব বাঙালি ‘কেজিএফ’ দেখতে চলে যাবে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সেটা ইয়াং জেনারেশন।
সেই ইয়াং জেনারেশনই কিন্তু প্রত্যাশা করছে, আমরাও ভিএফএক্স দিয়ে ‘কেজিএফ’-টাইপের সিনেমা তৈরি করব।
আমরাও ওই বিপুল অর্থের সিনেমাটিক এক্সপেরিয়েন্সের ভেতর দিয়ে যাব। আমার কথা হচ্ছে, বাংলা গল্প বলার জন্য কি এত বিগ বাজেটের দরকার আছে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমি যেটা বুঝি—যে গল্পটা ইমোশনালি দর্শকের সঙ্গে কানেক্ট করে, সেটা বিগ বাজেট হতে পারে, শর্ট বাজেট হতে পারে, কিন্তু আমাকে ইমোশনালি টাচ করতে হবে।
সেটা আমি প্রমাণ পেয়েছি আমার লাস্ট যে সিনেমাটা কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে, সেটা থেকে। সে ছবিটার নাম ‘এটা আমাদের গল্প’।
ছবিটাতে কিছুই তেমন নেই, শুধু ইমোশন আছে। সেটাই ইতিমধ্যেই ৫০ দিন পার করে ফেলেছে এবং হাউসফুল হয়েছে।
ফলে ইমোশনালি কানেক্ট করতে হবে। সিনেমাটা তো শুধু ভিজ্যুয়াল নয়। অডিও ও ভিজ্যুয়াল মিলিয়েই সিনেমা। আমরা হাসাতে পারছি কি না, কাঁদাতে পারছি কি না, ভাবাতে পারছি কি না, সেটা খুব জরুরি।
ধরুন, ওই সব প্রযুক্তি আমাদের হাতে এসে গেল। তখন কি আমরা বাংলা সিনেমায় ‘কেজিএফ’-এর মতো অ্যাকশনধর্মী সিনেমা করতে গিয়ে হলিউড কিংবা বলিউডকে নকল করতে থাকব?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আসলে রিমেক বা রিমিক্সের চল ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। গানের ক্ষেত্রে তো হয়েছেই। পুরোনো গানের রিমিক্স করে প্রচুর মানুষ রোজগার করছেন। কিন্তু নতুন কিছু ভাবার জন্য তো পড়াশোনাটা থাকতে হবে।
আবার ভাবনাচিন্তা করার সময়টা আমাদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। কারণ, সময়টা দেওয়া হচ্ছে না।
সিনেমার অর্থ দাঁড়িয়েছে রিক্রিয়েশন বা সাধারণ বিনোদন। এই বিনোদনের অর্থ এখানে আনন্দ এবং হাসাহাসি বা কমেডি।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সেটাও তো হচ্ছে না। কমেডিটাও তো হচ্ছে না। ভাবনাচিন্তা করার সময়টা আমাদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। সময় দেওয়া হচ্ছে না।
আপনি ইমোশনের কথা বললেন। এ প্রসঙ্গে আমি বলি, ফিল্মকে আমরা স্থূল বিনোদনের টুল বানিয়ে ফেলেছি। এন্টারটেইনমেন্টের অর্থ যেন শুধু হাসাহাসির জায়গায় নিয়ে গিয়েছি।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আরে বাবা, সেটাও তো আমরা করতে পারছি না। লোক হাসাতেও তো পারছি না।
আমাকে প্রাণভরে কাঁদাতে পারছে—এমন ছবি এখন চোখে পড়ছে না।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: প্রাণভরে কাঁদাতে গেলে দর্শকের সঙ্গে ইমোশনালি কানেক্টেড হতে হবে। কাঁদানো হোক, হাসানো হোক, রাগানো হোক, ভাবানো হোক—সবচেয়ে বড় কথা, অডিয়েন্সকে তো ইমোশনালি যুক্ত করতে হবে।
‘অশনিসংকেত’-এর মতো ওই রকম ইমোশনালি ইনভলভ করার মতো ফিল্ম এখন হচ্ছে না।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না। এখানেও আমার আপত্তি আছে। আমাকে কেন ওর মতো ভাবতে হবে? ভাবনার জায়গাটাতেই তো আমার গন্ডগোল লাগছে। আমি এমন কোনো সাবজেক্ট কেন ভাবতে পারব না, যেটি অন্যদের মতো নয়?
যেমন এখানে আমি যে কাজ করতে এসেছি, সেই ‘গুলমোহর’ ওয়েব সিরিজটিকে শুধু বাংলাদেশ কেন, পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ রিলেট করতে পারবে।
এই গল্পে আমার ভিটেমাটির কথা আছে। এই ভিটেমাটির কথা দিয়ে ঋত্বিক ঘটক এত বড় ডিরেক্টর হয়েছিলেন। এটা ইমোশনাল জায়গা। আমার পুরোনো ভিটে, সেটা যারা জবরদখল করেছে, সেটা আবার আমি কী করে বের করব...এসব গল্প।
এই যে ‘গুলমোহর’, যেটা নিয়ে আমি কাজ করতে এখানে এসেছি, সেখানে কিন্তু ইমোশনালি কানেক্ট করতে পারবে বহু মানুষ।
প্রধান বিষয় হলো, আমি যেটা ভাবছি, সেটা দর্শককে ভাবতে হবে, তাদের সঙ্গে কানেক্ট করতে হবে। আমি যেটা বুঝছি, সেটা দর্শককে বোঝাতে হবে। সেই বোঝানোর পদ্ধতিতে গিয়ে কোথাও একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এক্সিকিউশনে গিয়ে গড়বড় লেগে যাচ্ছে।
এই যে ‘গুলমোহর’, যেটা নিয়ে আমি কাজ করতে এখানে এসেছি, সেখানে কিন্তু ইমোশনালি কানেক্ট করতে পারবে বহু মানুষ। প্রধান বিষয় হলো, আমি যেটা ভাবছি, সেটা দর্শককে ভাবতে হবে, তাদের সঙ্গে কানেক্ট করতে হবে। আমি যেটা বুঝছি, সেটা দর্শককে বোঝাতে হবে। সেই বোঝানোর পদ্ধতিতে গিয়ে কোথাও একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এক্সিকিউশনে গিয়ে গড়বড় লেগে যাচ্ছে।
এটা ভুল, নাকি অযোগ্যতা?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: অযোগ্যতার জন্যই ভুল। আমি কাজ করার আগে প্রথমে গল্প দেখি। কী সিরিজে কাজ করব, গল্পটা ইন্টারেস্টিং লাগলে আগে আমি তাঁকে ‘হ্যাঁ’ বলে দিই। কিন্তু পরে গিয়ে দেখি, যেভাবে কাজটি হবে বলে আমি ভেবেছিলাম, সেভাবে আসলে হচ্ছে না।
এক্সিকিউশন ঠিকমতো না হওয়ায় আসল জায়গা হারিয়ে যাচ্ছে। কাজেই যেটা ভেবেছিলাম, সেটা হলো না। ফলে এখন আমি স্ক্রিপ্ট দেখি। দেখার পর তাকে বলি, ‘স্ক্রিপ্ট পাল্টাবে না তো? স্ক্রিপ্ট না পাল্টালে আমি আছি।’
এবার অন্য প্রসঙ্গে একটু কথা বলি। রাজনীতিতে আসছেন কবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আসছি না। রাজনীতিতে আসার অফার পেয়েছি, কিন্তু আমি আসছি না। আমার যতটুকু রাজনীতি অভিনয়ের মধ্যে আছে, সে রাজনীতি নিয়েই আমি থাকতে চাই।
আপনি একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবির শুটিংয়ের সময় আপনি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সেটা আমি রিয়েলাইজ করিনি, সেটা আমার বাড়ির লোকেরা রিয়েলাইজ করেছিল।
সিনেমাটি দেখার সময় আমি নিজে ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আপনার অভিনয়কে ওখানে কোনোভাবেই অভিনয় মনে হচ্ছিল না।
একেবারে স্বাভাবিক কথাবার্তা মনে হচ্ছিল। এই ঘোরের মধ্যে যাওয়ার ভেতরও তো একটা বেদনাবোধ আছে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাওয়া...
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, তা নয়। আমি সে রকম কিছু করিনি। তবে আমার স্ত্রী বলেছিলেন, ‘যত দিন ছবিটার শুটিং হয়েছে, তত দিন তোমার ধারেকাছে যাওয়া যেত না।’ তবে সেটা আমি বুঝিনি।
সেটা বুঝেছিলাম ডাবিংয়ের পরে। ডাবিংয়ের পরে মনে হলো, কিছু একটা ঘাড় থেকে নেমে গেল। এ ধরনের অবস্থা সব ছবির ক্ষেত্রে হয় না।
এবার একটু থিয়েটারের ব্যাপারে যদি বলেন। পশ্চিমবঙ্গের থিয়েটারের কথা আমি জানি না। তবে আমাদের এখানকার থিয়েটার খারাপ নয়—এটা বলতে পারি। ওখানকার থিয়েটারের কী অবস্থা?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালোই হচ্ছে। আসলে থিয়েটারের কিছু দর্শক আছেন, যাঁরা থিয়েটারের ভেতর থেকে কখনোই বেরোবেন না। থিয়েটারে লাইভ পারফরম্যান্স তো! চোখের সামনে জলজ্যান্ত মানুষেরা রয়েছেন।
এটা একটা ডিফিকাল্ট মিডিয়াম ডেফিনেটলি। থিয়েটারে আপাদমস্তক পুরোটা দেখা যাচ্ছে। আপনি কিছু লুকোতে পারবেন না। কিন্তু সিনেমায় লুকাতে পারবেন।
এখন নতুন যাঁরা ট্যালেন্ট নিয়ে আসছেন, তাঁরা তো বেঁচে যাচ্ছেন। একটার পর একটা সিরিয়ালে অভিনয় করে যাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা দেখা যাচ্ছে, একটা সিরিয়ালে কেউ একজন হোর্ডিং হয়ে যাচ্ছেন। তারপর রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে নিজেকে হোর্ডিংয়ে দেখতে পেয়ে হয়তো ভাবছেন, ‘হোর্ডিংয়ে অত বড় ছবি আমার, আমিও নিশ্চয়ই অত বড়!’
থিয়েটারের বাইরের লোক এসে সরাসরি যাঁরা সিনেমায় বা টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করেন, সেটা তাঁদের জন্য কতটা...
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: যাঁদের মধ্যে সত্যিকার ট্যালেন্ট আছে, তাঁদের জন্য ওটা কোনো ম্যাটার করে না। তবে অনেকে আছেন, যাঁদের শুধু চেহারা দেখে কোডিং করে দেওয়া হচ্ছে এবং আনফরচুনেটলি তাঁদের শেখার স্কোপ খুব কম। কারণ, সময় নেই।
আমরা যখন টেলিভিশন শুরু করেছি, তখন একটা সিন নিয়ে আমরা বসতাম। আলোচনা করতাম। তারপর শুটিংয়ের আগে তার রিহার্সাল হতো।
তারপর শুটিং হতো। ভালো না লাগলে আবার হতো। এখন সব বদলে গেছে।
এখন নতুন যাঁরা ট্যালেন্ট নিয়ে আসছেন, তাঁরা তো বেঁচে যাচ্ছেন। একটার পর একটা সিরিয়ালে অভিনয় করে যাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা দেখা যাচ্ছে, একটা সিরিয়ালে কেউ একজন হোর্ডিং হয়ে যাচ্ছেন।
তারপর রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে নিজেকে হোর্ডিংয়ে দেখতে পেয়ে হয়তো ভাবছেন, ‘হোর্ডিংয়ে অত বড় ছবি আমার, আমিও নিশ্চয়ই অত বড়!’ এরপর যে টাকাটা তিনি অভিনয় থেকে পাচ্ছেন, সেটা হয়তো তাঁর বাবা কোনো দিন কামাননি; তাঁর দাদা কোনো দিন কামাননি। এতে তাঁর লাইফস্টাইল বদলে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, একটা সিরিয়াল করার পর তাঁকে দ্বিতীয়বার আর ডাকা হচ্ছে না। কারণ, দেখা গেল তাঁর ভেতরে কিছু নেই চেহারাটা ছাড়া। তো, যখনই তাঁকে অফ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন তাঁর জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কারণ, তত দিনে তিনি অনেক টাকা খরচা করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন; বাড়ির লোকের তাঁর কাছে এক্সপেক্টেশন অনেক বেড়ে গেছে। আচমকা কাজ বন্ধ হওয়ায় টাকা আসাও বন্ধ।
অনেকেই আছেন, যাঁরা ডিপ্রেশনে পড়ে যান। অনেক সময় খবরের কাগজে দেখতে পান, কেউ কেউ শেষমেশ সুইসাইড করছেন।
এর মানে তাঁর পেছনে কোনো গ্রুমিং ছিল না।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, ছিল না। তাঁর আয়-উপার্জন দেখে প্রথমে তাঁর মা-বাবা খুবই উদ্বেলিত হচ্ছেন। তিনি পড়াশোনা করুন বা না করুন, তা নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামাচ্ছেন না। কারণ, তাঁর টাকাটা মা-বাবা পেয়ে যাচ্ছেন। মাঝখান থেকে হঠাৎ যখন তাঁর কাজটা চলে যাচ্ছে, তখন তিনি অস্থিরতায় পড়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু থিয়েটার থেকে যদি তিনি আসতেন, তাহলে তাঁর সেই সেলফ অ্যাসেসমেন্টটা নিশ্চয়ই হতো।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, সবাই থিয়েটার থেকে এলেই যে ঠিক থাকবেন, তা নয়। আমাদের বড় বড় থিয়েটার পার্সোনালিটি; তাঁরাও কিন্তু সিনেমায় অভিনয় করেছেন; তবে বেশির ভাগ টেকেননি।
কারণ, থিয়েটার ও সিনেমা—দুটি আলাদা মাধ্যম। সেটা বোঝা বা ব্যালান্স করাটা খুবই জরুরি। জিনিসটা মেনটেইন করতে বড় বড় অভিনেতাও পারেননি। থিয়েটারের বড় বড় অভিনেতা বাংলা সিনেমায় এসে জায়গা করতে পারেননি।
ডিরেক্টরের সঙ্গে ভাবনার জায়গা না মিললে কী করেন?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমি একটু আগে যা বলছিলাম, সেটাই করি। স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ের সময় ঠিক করে নিই, কাজটা করব কি না। পরে ডিরেক্টর সম্পর্কে একটা ধারণা রাখতে হয়। সেই অনুযায়ী রাজি হতে হয়। এরপর বাকিটা তো আর আমাদের হাতে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে যে কাজ করতে করতে বুঝে গেছি, এটা হলো না।
এটি হলে শুধু একা ডিরেক্টরের ক্ষতিগ্রস্ত হন, তা তো নয়, এটায় তো অভিনেতা হিসেবে আপনারও ক্ষতি হলো। আপনারও বাজার নষ্ট হলো।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, ওটা তো আমার হাতে নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি, একজন অভিনেতাকে পর্দায় দেখতে দেখতে তাঁর সম্বন্ধে মানুষের একটা ধারণা হয়ে যায়। কাজেই সেখানে একটা হিট বা একটা ফ্লপ খুব বেশি ম্যাটার করে না।
যেমন উত্তমকুমারকে বলা হয়েছিল ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’। একটা সময়ের পরে গিয়ে। কিন্তু যেদিন তিনি চলে গেলেন, সেদিন গোটা পশ্চিমবঙ্গ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তার মানে ‘নায়ক’ সিনেমার সেই শঙ্করদার কথা মিথ্যা? পরপর দুটি সিনেমা ফ্লপ করলে গভীর খাদে পড়ে যেতে হয়...এই কথা মিথ্যা?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: একদমই মিথ্যা। শঙ্করদার ওই কথাটা আসলে থিয়েটারের মানুষদের একটা ধারণামাত্র।
আপনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সেই সময়ে যাঁরা উত্তমকুমারের মতো লিজেন্ড ছিলেন, তাঁরা এখনো লিজেন্ড।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, তাঁরা এখনো লিজেন্ড।
তাঁরা তো একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে দিয়ে গেছেন।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: তাঁদের থেকেই তো আমরা শিখেছি। অ্যাটলিস্ট আমি শিখেছি বলতে পারব।
এখন আমরা হয়তো সেই লেভেলে যেতে পারব না, কিন্তু সেখানে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা কিন্তু দেখা যাচ্ছে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: দেখুন, উত্তমকুমার, রবীন্দ্রনাথ বা সত্যজিৎ রায়—ওনারা তো বারবার আসেন না। ওটা ছেড়ে দিচ্ছি আমি। কিন্তু ওই যুগে অনেকেই তো ছিলেন। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসী চক্রবর্তীর মতো প্রত্যেকেই নিজস্ব একটা জায়গা তৈরি করেছিলেন। প্রত্যেকেই কমেডিয়ান।
মানে কমেডিয়ান হিসেবে তাঁদের গায়ে ছাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকেরই নিজস্বতা আছে। সেই একটা নিজস্বতাও তো তৈরি করতে হবে। আমাকে বলতে হবে, ‘এটা আমি। আমার কাছ থেকে আপনি এটা এক্সপেক্ট করতে পারবেন।’
এটা একটা ডিফারেন্ট ব্যাপার। ওই সময়ের অভিনেতারা একটা কালেকটিভ অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন। সে সময় একজন আরেকজনের সম্পূরক হিসেবে কাজ করেছেন।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, একজন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের কো-অ্যাক্টর হিসেবে যাঁদের আমরা দেখছি, অনেক সময় তাঁদের মধ্যে একটা সমান্তরাল ধারা পাচ্ছি না।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, অনেকেই আছে। কিন্তু সবাইকে এক জায়গায় আনা—এটা তো ডিরেক্টর কিংবা প্রডিউসারদের কাজ। এ বিষয়ে তাদেরই ভাবতে হবে। সমস্যা দাঁড়িয়েছে দু-চারজনের বাইরে আর কাউকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। সেটা না হলে কী করে এগোবে?
এ বিষয়ে ব্যতিক্রম মনে হয়েছে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’কে। সেখানে প্রতিটি চরিত্রকেই...
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: ওটা দুর্দান্ত কাজ। সেখানে প্রতিটি ক্যারেক্টার স্টাবলিসড।
সারফুদ্দিন আহমেদ: ছবিটার প্রতিটি সংলাপ উইটি, মাপা মাপা।
কৌশিক আহমেদ: এই ছবি কিছুদিন পরপর দেখলে আবার নতুন করে দেখার মজা পাওয়া যায়।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: কিছু ছবি থাকে, যা হঠাৎ করে দেখলাম, চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে দেখে গেলাম। তারপর আবার দেখা যায়। এই ছবিগুলোই আসলে থেকে যায়।
কৌশিক আহমেদ: যেমন ‘বাঞ্ছারামের বাগান’।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, ওটাও এখনো দেখলেও ভালো লাগে।
কৌশিক আহমেদ: ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ও ‘আশ্চর্য প্রদীপ’—সিনেমা দুটি দেখলে মনে হয় যে না বাংলা সিনেমার একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড়াচ্ছে। সব শ্রেণির পেশার মানুষের কাছে এই দুটি ছবি ভালো লাগবে।
সারফুদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, এই ছবি দুটির নানা ধরনের অ্যাঙ্গেল আছে। যে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণটা ধরতে পারবে না, তার জন্য এই সিনেমা দেখতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, যেটা সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর মধ্যে আছে। আমি ছোটবেলায় ‘হীরক রাজার দেশে’ এক রকম দেখেছি। তখন দেখে মনে হয়েছিল, খুব মজার ছবি।
বড়বেলায় দেখলাম যে ওরে বাবারে, এ তো অনেক কথা বলে। যতবার দেখি, নতুন একটা কিছু বেরিয়ে আসে। সে সময় হলওয়ালারা এই ছবিকে বাচ্চাদের ছবি বলে চালিয়েছিল। কিন্তু বাচ্চাদের ছবি এটা মোটেই নয়। এই ছবি বাচ্চারা এনজয় করবে, কিন্তু বড়দের ভাবাবে।
সারফুদ্দিন আহমেদ: ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ অনেকটা সে রকম। ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ অনেকটা সে রকম।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: তবে এ ধরনের ছবির স্ক্রিপ্ট লেখাটা খুবই কঠিন, কারণ ভেতরে হাস্যরসও তো থাকতে হবে। আপনার রিডটা ভেতরে থাকতে হবে। বেশির ভাগ লোকের ভেতরে এখন ওটা নেই। বেশির ভাগ লোকই ক্যালকুলেশনে আক্রান্ত। এখানেই ইমোশন শেষ।
এখন সিনেমা বানানোর আগেই নির্মাতারা ভাবছেন, ছবিটি বানিয়ে কোন চ্যানেলে বেচব, কত টাকা আসবে। এগুলো না ভেবে স্ক্রিপটা নিয়ে ভাবলে বোধ হয় আরও বেশি কাজে দিত।
কৌশিক আহমেদ: বাংলাদেশে এসে তো কাজ করলেন। তো, আমাদের এখানকার শুটিংয়ের প্রক্রিয়া দেখে আপনার কী মনে হয়?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: শুটিংয়ের প্রক্রিয়ায় কোনো ডিফারেন্স নেই। এখানে আমি যে কাজটা করতে এসেছি, অর্থাৎ ‘গুলমোহর’ সিরিজে, এরা প্রত্যেকেই কাজটি করছে খুব বিশ্বাস নিয়ে। যে কাজটি যিনি করছেন, সে কাজে সবাইকে খুব আন্তরিক মনে হলো।
তাঁদের দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা চান যে কাজটি যেন ঠিকমতো হয়। প্রত্যেকেই তাঁর কাজকে নিয়ে ইনভলভ ছিলেন। শুধু শাওকি যে একা কাজটা করছিলেন, তা নয়, সবাই ছিলেন। শাওকি এবং যে চার-পাঁচজন তাঁর সহকর্মী তাঁদের প্যাশনটা ছিল অন্য লেভেলের। তাঁদের মধ্যে একজন অনিম।
আমি শুনেছি, তাঁরা শুরুর দিকে নাকি বিয়েবাড়ির ছবি তুলতেন। বিয়েবাড়িতে ভিডিও করতেন। যে টাকাটা তাঁরা পেতেন, সেই টাকা দিয়ে তাঁরা ক্যামেরার লেন্স কিনতেন এই ভেবে যে ভবিষ্যতে আমি সিনেমা তৈরি করব। এটা তো গ্রেট প্যাশন। তো এটা তো কাজে দেবেই।
সারফুদ্দিন আহমেদ: তার মানে আশা তো আছে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আশা তো থাকবেই। কিছু মানুষের কাজ করার প্যাশন চিরকাল থাকবেই। কিন্তু মুশকিল হলো, হলগুলো তো চলে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি ভালো কাজ করব। কিন্তু আমি দেখাব কোথায়?
কৌশিক আহমেদ: আমি যখন নাইন-টেনে পড়তাম, তখন আমাদের এখানকার পপুলার রাইটার হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর বই পড়তাম।
আমার মামারা বা অন্য অনেক সিনিয়র আমার সমালোচনা করতেন। ধুর! হুমায়ূন আহমেদের বই! হালকা জিনিস! তারপর আমি অন্য বই পড়া শুরু করি। এই ধরুন, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু, এই সব। তাঁদের বই।
তো আমার কাছে মনে হয় যে সাহিত্যের সমালোচনাটা হওয়া খুব জরুরি। মানে পাঠককে গাইড করা জরুরি। সেই গাইডেন্সের কারণে সে বুঝতে পারে যে, তার পাঠের বাইরেও কিছু ক্ল্যাসিক ব্যাপার আছে। এই গাইডেন্স তো মিডিয়ার ক্ষেত্রেও থাকা উচিত।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: দেখুন, আমি মনে করি, একটি দেশে দুটি চ্যানেল থাকা উচিত। একটা গভর্নমেন্টের পক্ষে বলবে, একটা গভর্নমেন্টের এগেইনস্টে বলবে। কিন্তু আপনি দেখছেন, কতগুলো মিডিয়া?
এই এতগুলো চ্যানেল! মালিকেরা সব নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। যেমন আমার কথা বলি, আমি সকালবেলা উঠে প্রতিটি চ্যানেল খুলে দেখি কী নিউজ দেখাচ্ছে। আমি বুঝতে পারি, একই ঘটনা একেকটি চ্যানেল একেকটি অ্যাঙ্গেল থেকে দেখাচ্ছে।
এ দেখাচ্ছে এদিক থেকে, ও দেখাচ্ছে ওদিক থেকে। এর মধ্যে আমায় কী করতে হবে, সেটা আমাকেই ভেবে নিতে হবে।
সারফুদ্দিন আহমেদ: ষাটের দশক, সত্তরের বা আরও পরে আশির দশক পর্যন্ত আমাদের এখানকার সিনেমায়, গল্পে রাজনৈতিক বক্তব্য থাকত। একধরনের রাজনৈতিক অ্যাকটিভিজম বেশ জোরালো অবস্থায় ছিল।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: সেটা থিয়েটারেও ছিল। আমাদের ওখানে পিপলস থিয়েটার ছিল। সেটা এখন নেই। কিন্তু আপনি যে অ্যাকটিভিজমের কথা বলছেন, তার পেছনে তো আদর্শ থাকতে হবে। কোথায় আদর্শ? কোনটা আদর্শ?
এখনো পলিটিক্যাল ছবি হচ্ছে। তবে এখনকার পলিটিক্যাল ছবিগুলো হচ্ছে এই রকমযে আগের গভর্নমেন্ট কী কী ভুল করেছিল, সেই ভুলগুলো নিয়ে গল্প ফাঁদতে হবে, যাতে ওই গভর্নমেন্ট আর ফেরত না আসে।
এই প্রচেষ্টা চলছে। তখন একটা ছিল যে ওই সমাজের থেকে ওই ক্ষমতাশীল পার্টির এগেইনস্টে কথা বলা যেত। এখন রুলিং পার্টি বিরুদ্ধে কেউ কোথাও কোনো কথা বলতে পারবে না। সে রকম কিছু বানালে তা দেখাতে পারবে না।
সারফুদ্দিন আহমেদ: তার মানে সেই আগের অবস্থায় আমরা ফিরতে পারব না?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: দেখুন ইতিহাস বলছে, ক্ষোভ জমতে জমতে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ থেকে বিপ্লব হয়। বিপ্লব কবে হবে, সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতে ওয়েট করতে থাকুন।
সারফুদ্দিন আহমেদ: আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি আপনাকে পলিটিক্যাল আলোচনায় টেনে আনার চেষ্টা করছি।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না না, আমি তো পলিটিক্যালি কোনো জায়গায় কখনো থাকি না। পলিটিকসে আমি নেই। হ্যাঁ, ভোট আমি দিই। ডেফিনেটলি ভোট দিই। ভোট দেওয়াটা আমার কর্তব্য এবং আমি সিক্রেট ব্যালটে বিশ্বাস করি।
সারফুদ্দিন আহমেদ: এটা আপনার পলিটিক্যাল অবস্থান?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: অ্যাবসোলিউটলি। আমি কাউকে সামনাসামনি প্রশংসাও করি না, গালাগালিও করি না। আমি কাউকে পলিটিক্যালি ইনফ্লুয়েন্স করতেও চাই না। আমি অমুক পার্টিকে খারাপ বলে চারটে লোককে ইনফ্লুয়েন্স করব কেন? মানুষ যতক্ষণ না নিজেরা কনসাস হবে, ততক্ষণ সমাজের কিছুই বদলাবে না, এটা ধরে নিন এবং যতক্ষণ তারা কনসাস না হবে, ততক্ষণ যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে।
সারফুদ্দিন আহমেদ: ‘আমি কাউকে ইনফ্লুয়েন্স করি না, আমি গোপন ব্যালটে ভোট দিই’—এটাও তো একধরনের আপনার নীরব অ্যাকটিভিজম।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: মানুষকে শোধরাতে হবে ইন জেনারেল। মানুষকে সাপ্রেস করতে করতে একসময় সে প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকে। একদিন সেটা বিপ্লবে রূপ নেয়। মার খেতে খেতে একসময় ব্যাঙও লাথি মারা শুরু করে।
বাইরে আসতে গেলে একটা ফোন তো সঙ্গে রাখতেই হয়। বাইরে গিয়ে শুটিং করতে হয় তো। ফোন ছাড়া তো সম্ভব নয়। তবে ফোনটা আমার সঙ্গে থাকে না, ব্যাগে থাকে। আমি সারা দিন একবারও দেখি না। ওই রাত্তিরবেলা দু-একবার খুলে দেখব, কে কী কোথায় মেসেজ-ফেসেজ পাঠিয়েছে। সেই অনুযায়ী জবাব দেব। সারা দিন ফোন নিয়ে বসে থাকায় আমার পোষাবে না।
সারফুদ্দিন আহমেদ: আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, চলচ্চিত্র সোসাইটিকে বদল করে। সমাজ বদলায়। অমুক তমুক। আসলে কি তা করে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমার মনে হয় না। সিনেমা সমাজ বদলায়—এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। এখন এত কিছু মানুষের হাতে এসে গেছে যে, কোনো একটি বিষয়ের ওপরে কনসেন্ট্রেট করা মানুষের পক্ষে আর সম্ভব নয়।
সারফুদ্দিন আহমেদ: আমি কোথাও পড়েছিলাম, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ফোন ব্যবহার করেন না; মানে মুঠোফোন ব্যবহার করেন না।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: না, বাইরে আসতে গেলে একটা ফোন তো সঙ্গে রাখতেই হয়। বাইরে গিয়ে শুটিং করতে হয় তো। ফোন ছাড়া তো সম্ভব নয়। তবে ফোনটা আমার সঙ্গে থাকে না, ব্যাগে থাকে। আমি সারা দিন একবারও দেখি না। ওই রাত্তিরবেলা দু-একবার খুলে দেখব, কে কী কোথায় মেসেজ-ফেসেজ পাঠিয়েছে। সেই অনুযায়ী জবাব দেব। সারা দিন ফোন নিয়ে বসে থাকায় আমার পোষাবে না।
কৌশিক আহমেদ: ফাইনালি ফিল্ম নিয়ে দু-চার লাইন বলুন।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: ফিল্ম জ্ঞান ঝাড়ার জায়গা নয়। ফিল্ম এন্টারটেইনমেন্টের জায়গা। হ্যাঁ, তবে এন্টারটেইনমেন্টের মধ্য দিয়ে যদি আমি কিছু করতে পারি, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু জ্ঞান দেওয়ার জায়গা ফিল্ম নয়। মানে কেউ নিজের পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে হলে গিয়ে জ্ঞান কিনতে যাবে, এটা হতে পারে না। জ্ঞান দিতে চাইলে সত্যজিতের মতো দিতে হবে। খেলার ছলে দিতে হবে। ‘হীরক রাজার দেশে’র মতো।