২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জীবনের এই পর্যায়ে এসে ভালোবাসার টান বেশি করে টের পাই: মাহফুজ আহমেদ

নব্বইয়ের দশকের টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। অসংখ্য নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। হয়েছেন দর্শকনন্দিতও। দুই যুগের বেশি সময় অভিনয় করে অর্জন করেছেন খ্যাতি ও মানুষের ভালোবাসা। অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন ছোট্ট চরিত্র দিয়ে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক ‘কোন কাননের ফুল’–এ ছোট্ট একটি চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। এরপর হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে অভিনয় তাঁর পরিচিতি বাড়িয়ে দেয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। শুধু তা–ই নয়, সাংবাদিকতা থেকে অভিনয়ে এসে নিজেকে টেলিভিশন নাটকের প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে। শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমির মতো অভিনয়শিল্পীদের বিপরীতে অভিনয় করে যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। আজ ২৩ অক্টোবর সফল এই অভিনেতার জন্মদিন।
মাহফুজ আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ। তবে আমি কিন্তু জন্মদিনের এই সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠিনি। তাই এটা পালনও করা হয় না। আমি শিক্ষকের সন্তান। নোয়াখালীতে কেটেছে। এরপর ঢাকায় এসে পড়াশোনা ও সাংবাদিকতা শেষে অভিনয় শুরু করি। ছোটবেলা থেকে যেহেতু জন্মদিন পালন করিনি, তাই এই ব্যাপারটায় একরকম সংবোচবোধ কাজ করত।

প্রশ্ন :

আপনি না হয় পালন করেন না। কিন্তু এখন তো এই দিনটিতে ফেসবুকে আপনাকে নিয়ে নানান ধরনের কথাবার্তা লেখা হয়। নিশ্চয় চোখে পড়ে।

এসব চোখে পড়ে। তখন মনে হয়, জীবনটা বৃথা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ে আছি, জীবনের এই পর্যায়ে এসে ভালোবাসার টান বেশি করে টের পাই। মানুষের এই ভালোবাসা আমাকে কাতর করে, দুর্বল করে। সবাই যেভাবে লেখালেখি করে, ভালোবাসা দেখায়, তাতে মনে হয়, আমি যা না, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু পেয়েছি।

মাহফুজ আহমেদ

প্রশ্ন :

আপনি কি এখন ঢাকায়, নাকি অস্ট্রেলিয়াতে।

এখন ঢাকায় আছি। পরিবার আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। ছেলেমেয়ের স্কুল ছুটির আগে আমি সিডনি ছুটে যাই-ই। ওই সময়টায় ওদের সঙ্গে কাটাতেই হবে আমার। এর বাইরেও থাকি। আমার কাছে মনে হয়, পরিবারের সঙ্গে অর্থবহ সময় কাটানো সবচেয়ে জরুরি। তাই তো দুই দেশ মেনটেইন করতে হলেও আমি ছেলেমেয়েদের ছুটির সময়টায় পুরোপুরি তাদের সঙ্গে থাকি। পরিবার ছাড়া ওই সময়টায় আর কিছু ভাবি না। মা-বাবারা বুঝি এমনই হয়। অর্থবহ সময় কাটানোর কারণে আমি এসব উপলব্ধি করতে পেরেছি। দীর্ঘ সময় কাটানোর চেয়ে অর্থবহ সময় কাটানো বেশি জরুরি।

প্রশ্ন :

আপনার সন্তানদের খবর বলুন।

আমার মেয়ের বয়স এখন ১১, ছেলের ৯। দুজনেই স্কুলে যায়। সিডনিতে থাকা অবস্থায় যখনই ওদের স্কুল থাকে, ওদের আমি নিয়ে যাই, নিয়ে আসিও। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। ওরা বের হলে দৌড়ে আসে। আমি জড়িয়ে ধরি। আদর করি। এই সময়টুকু আমার জীবনের সেরা সময় মনে হয়। স্কুলের সামনে যে দাঁড়িয়ে থাকি—আমাদের দেশে যেমন স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনি পৃথিবীর সবখানে এভাবে অভিভাবকেরা কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকেন, বসে থাকেন। তবে ওখানকার ছেলেমেয়েরা তো এত আবেগ দেখায় না, কিন্তু আমার ছেলেটা দৌড়ে এসে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাবা বাবা বলতে থাকে। এই আনন্দের সঙ্গে অন্য কোনো আনন্দের মিল নেই।

স্ত্রী মিমির সঙ্গে অভিনয়শিল্পী মাহফুজ আহমেদ

প্রশ্ন :

অভিনয়ে আপনি অনিয়মিত।

বিভিন্ন নাটকের মন্তব্যের ঘরে যখন ঢুঁ মারি, অবাক হই। মন্তব্যগুলো আমাকে আবেগতাড়িত করে। উন্মুখ হয়ে থাকি, কবে ফিরব। নতুন করে ফিরব। যে চরিত্রটা আমার কাছে মানুষ প্রত্যাশা করে, সে জন্যই আসলে অপেক্ষা করছি।

প্রশ্ন :

সেটা আসলে কবে?

খুব তাড়াতাড়ি ফিরব।

প্রশ্ন :

ছোট, নাকি বড় পর্দা দিয়ে ফিরবেন?

বড় পর্দা। ‘প্রহেলিকা’ দিয়েই ফিরব। এটা আমার খুব পছন্দের একটা চরিত্র। চরিত্রের প্রয়োজনে আমি নিজেকে তৈরি করছি। একেবারে নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে। এই ছবিটা করার পর আমি যদি দেখি, দর্শকের ভালোবাসা যেখানে ছিল, মানে দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি, তারপর আমি কন্টিনিউ করব। আরেকটা কথা, এখন কিন্তু বড় পর্দা–ছোট পর্দা বলে এখন আর কিছু নেই। ভালো গল্পে কাজ করব। আমি আমার পছন্দের চরিত্র পেলে কাজ করব। এখন তো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে  ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমি তো উন্মুখ হয়ে বসে আছি কাজ কাজ করার জন্য। ভালো চরিত্র এবং পছন্দের চরিত্রের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছি। তাই নিজেকে তৈরি করছি। আগেও নিজেকে তৈরি করেছি, এখনো করছি।

স্ত্রী আর ছেলেমেয়ের সঙ্গে মাহফুজ আহমেদ

প্রশ্ন :

এই সময়ে এসেও নিজেকে তৈরি করছেন!

তৈরি এই জন্য বলছি, মানসিকতার একটা পরিবর্তন আনতে হবে। এখনকার যারা দর্শক, তারা ভালো ভালো কাজ দেখছে। একই সময়ে নেটফ্লিক্স দেখছে, চরকিও দেখছে। দেশি–বিদেশি ভালো ভালো কাজের সঙ্গেই ওরা বেশি পরিচিত। এখনকার কনটেন্ট মানে হচ্ছে গ্লোবাল কনটেন্ট। এখন আর আগের মতো করে কিছু করলে হবে না। এখন ওই মাত্রার অভিনয় যদি না দিতে পারি, দর্শক কিন্তু খেলো মনে করবে। কারণ, এখনকার দর্শকেরা অনেক পরিণত। তারা সারা পৃথিবীর খোঁজখবর রাখছে। বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র যদি রূপায়ণ করতে না পারি, ছুড়ে ফেলে দেবে দর্শক। এখন আসলে মেধা বিচারের সময়।