প্রথম আলো :
পর্দায় আপনি ‘ভদ্র ছেলে’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ‘টিকিট’-এ নাকি আপনাকে প্রেমিক আর ভদ্র ছেলে মনে হয়নি?
হা হা। টিকিট দেখার পর এই কথা অনেক শুনতে হচ্ছে। এবার প্রেমিক আর ভদ্র ছেলে থেকে বের হয়েছি। এসব চরিত্রেই দর্শক বেশি দেখে অভ্যস্ত। তাঁরা আমাকে এভাবে দেখার কথা কেউ ভাবতেই পারেননি। সবাই বলছেন বখাটে রংবাজ, ডাকাত তথা খল চরিত্রগুলোয় নিয়মিত কাজ করতে। এই সিরিজে আমি চেষ্টা করেছি সবকিছু থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে হাজির হতে। সেখানে সফল হয়েছি।
প্রথম আলো :
তাহলে আগে কি অনুরোধে একই ধরনের চরিত্রে বারবার অভিনয় করেছেন?
সেটা আমি বলব না। বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু সেটা ব্যাটে–বলে কাজে আসেনি। কখনো দেখা গেছে অভিনয় ভালো করেছি; সেটা প্রচার পায়নি। কখনো গল্প ক্লিক করেনি। দর্শকদের কাছে পৌঁছায়নি। কিন্তু এবার ব্যাটে–বলে মিলে গেছে। এবার নিরীক্ষাধর্মী একটি কাজ করেছি। পরিচালকেরা এখন খল চরিত্রের জন্যই বেশি ডাকছেন।
প্রথম আলো :
আপনি তো নিজেও পরিচালনায় আসতে চেয়েছিলেন। তখন কি মনে হয়েছিল খল চরিত্রে অভিনয় করবেন?
আমি অমিতাভ রেজা ও গৌতম কৈরি ভাইয়ের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। তখন পরিচালনার ইচ্ছা ছিল। এখনো আছে। কিন্তু সে সময় থিয়েটার করতাম। শৈশব থেকেই মা-বাবার যাত্রায় অভিনয় দেখেছি। পরবর্তী সময়ে আমারও শখ হয় অভিনয় করার। সেই শখ পূরণ করতে গিয়ে আটকে গেলাম অভিনয়ে। এটিই হয়ে গেল পেশা। আমার কাছে সব সময় যেকোনো চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আলাদা একটি ধারার মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে চাইনি। গল্পে ব্যতিক্রম কিছু পেলে চরিত্র নিয়ে অনেক সময় দিই।
প্রথম আলো :
কোনো কাজ কখন চ্যালেঞ্জিং মনে হয়?
এবারের (‘টিকিট’) কথাই যদি বলি, একটা বাসের মধ্যে দর্শকদের আটকে রাখা কঠিন ছিল। লোকেশনে বৈচিত্র্য কম। এখানে চরিত্র ও গল্পের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। না হলে দর্শক সরে যাবেন। যে কারণে দিনের পর দিন পরিচালক ভিকি জাহেদের সঙ্গে বসতে হয়েছে। কোথায় কী অভিব্যক্তি, চরিত্রায়ণ, ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হয়েছে। শুটিংয়ের সারা রাত জেগেছি। পুরো সময় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছি।
প্রথম আলো :
আর কী মজার ঘটনা ঘটেছে?
এবার গল্পের প্রয়োজনে পুরো শুটিং ছিল রাতে। এটা কষ্টের হলেও মজাও ছিল। এর মধ্যে দুটি ঘটনার কথা বলব—শুটিংয়ের সময় দেখি, আমাদের লাইটের কোনো লোক নেই। তাঁদের খুঁজতে গিয়ে দেখি, শুটিংয়ের পাশে একটি মেয়ে রাতে খুব কাঁদছে। সে পানিতে ঝাঁপ দেবে। পরে জানতে পারলাম, মেয়েটিকে জিনে বা ভূতে ধরেছে। সবাই বলল, ভূত। সবাই একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় ঘটনা, রাতে আমাদের শুটিংয়ের বাসটি অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এটাও অনেক ভীতিকর ছিল। বলা যায় দুটি ঘটনাই রহস্যজনক, অলৌকিক।
প্রথম আলো :
পরে কি হয়েছিল মেয়েটির?
আমরা একটু ভয় পেয়ে যাই। মেয়েটি পুকুরে লাফ দেয় কিনা এই নিয়ে চিন্তা করছিলাম। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মেয়েটির অভিনয়ে নতুন। তিনি একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে এসেছিলেন।
প্রথম আলো :
আগের চেয়ে অভিনয়ে কম দেখা যায় কেন?
বাজেটসহ বেশ কিছু কারণে নাটকে অভিনয় কমিয়ে দিয়েছি। নাটক কম করলে মনে হয় পর্দায় নেই। এর বাইরে এখন ওটিটি ও সিনেমায় বেশি কাজ করছি। এ ছাড়া আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। সেখানে আমার কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে, তারা ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে চায়। পেশাগত জায়গায় কীভাবে নিজেদের এগিয়ে নেবে—সেই জায়গায় স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা, ফিকশন তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটাকে প্র্যাকটিস ম্যাচ বলা যায়। আমি তরুণদের নিয়ে আশাবাদী।
প্রথম আলো :
অবসর কীভাবে কাটে?
শিক্ষকতায় সময় দিই। আমার শিক্ষার্থীরা যারা ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের সঙ্গে বসি, সহযোগিতা করি। মন খারাপ থাকলে কবিতা লিখি। সব ব্যর্থ প্রেমিকই কবি। যে জীবনে কষ্ট আছে, গভীর ভাবনা আছে, সেখানেই কবিতার জন্ম হয়। আমার জীবনেও কষ্ট আছে। তবে কবিতা লিখতে আমার ভালো লাগে। কবিতা হলো কি না, দেখি না। নিজের লেখা বারবার পড়তে অনেক ভালো লাগে। কেউ প্রশংসা করলে বাড়তি পাওয়া। আর এখন নিজেকে প্রচুর সময় দিই। চেষ্টা করি, বছরে দুবার ঘুরতে যেতে।