মনে হয়েছিল, আমার জীবনে আর সুখ আসবে না: আরমীন মুসা
কোক স্টুডিও বাংলার ‘দেওরা’ গানে অন্যদের পাশাপাশি নজর কেড়েছেন সংগীতশিল্পী আরমীন মুসা। তাঁকে ঢাকার মঞ্চে অভিনয়েও দেখা গেছে। শিগগিরই আসছে নতুন গান। এসব নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
প্রশ্ন :
হইচই শোনা যাচ্ছে।
আম্মার বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে হেঁটে আমার বাসায় যাচ্ছি। এতে প্রতিদিনের হাঁটাও হয়ে যায় আরকি।
প্রশ্ন :
নতুন গান কবে মুক্তি দেবেন?
শিগগিরই দেওয়ার চেষ্টা করছি। দিনক্ষণ এখনো ঠিক করিনি। মনে হয় আগস্টের কোনো একটা সময়ে করব। দেখা যাক।
প্রশ্ন :
শেষ গান কোনটা ছিল?
দেওরা (হাসি)। কোক স্টুডিওর কাজ। তার আগে আমি তো বিদেশে শো করেছি। বার্কলের অ্যালবামটা নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম। সত্যি বলতে প্যান্ডামিকের পর এটা প্রথম কাজ।
প্রশ্ন :
কোক স্টুডিওর একাধিক গানে আপনাকে পাওয়া গেছে। কোন গানটিকে এগিয়ে রাখবেন?
অবশ্যই ‘দেওরা’। এই গান থেকেই বেশি সাড়া পেয়েছি। কাজ করেও সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি। প্রীতম হাসানের সঙ্গে কাজ করে এত আরাম, এত পেশাদার। অনেক ভালো লেগেছে। আমরা অনেক ক্লিয়ার কাট কথা বলি। আমি অনেক নিয়ম মেনে চলা মানুষ। আমরা সকাল নয়টায় স্টুডিওতে ঢুকতাম, যেখানে বাংলাদেশে আমি আজ পর্যন্ত কোনো স্টুডিওতে বেলা দুইটার আগে ঢুকিনি। ৯–৫টা কাজ, এরপর সন্ধ্যায় যে যার মতো করে ফিরে যাও। আড্ডা দাও। আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্টুডিওতে ঢুকতেই ঘণ্টা পার। এরপর চা খাও। কম্পিউটার অন করো। আমার সব সময় অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে খুবই ঝামেলা হয়, স্টুডিওতে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখে। এরপর আবার ৪৫ মিনিট সিগারেট খেতে চলে যায়। সে তুলনায় প্রীতম অনেক পেশাদার। তবে বিষয়টা এমন না যে আমরা মজা করি নাই। আমরা তো ৩০ জনের টিম ছিলাম, সবাই ভীষণ মজাও করেছি।
প্রশ্ন :
‘দেওরা’ গানে আপনার নাচের স্টাইল প্রশংসিত হয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটা যে এত জনপ্রিয় হয়েছে, আমি জানিও না। কারণ, আমি তখন জামিল আহমেদ স্যারের নাটকের মহড়া নিয়ে ব্যস্ত। সকাল সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বের হতাম। সারা দিন শিল্পকলায় থাকি। রাতের বেলা ফেরার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় যা একটু–আধটু দেখেছি। পরে আমাকে প্রীতম বলল, আপু, আপনার নাচের ক্লিপ টিকটকে দিয়েছিলাম, ওটা দশ মিলিয়ন ভিউ হয়ে গেছে। আমি বললাম, কী বলো! তবে গানটাকে মানুষ এত ভালো বাসছে, ইসলাম উদ্দিন পালাকার সাহেবের উপস্থিতি, আমাদের হারমোনিজ অ্যান্ড কোরিওগ্রাফি, আমরা সত্যিই অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।
প্রশ্ন :
আপনি কি প্রথমবার অভিনয় করলেন?
হ্যাঁ, প্রথমবার। তা–ও জামিল আহমেদ স্যারের তত্ত্বাবধানে থেকে। ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নাটকে। এখানে ১১টা গানও করেছি। স্যারের নির্দেশনায় আমি কম্পোজ করেছি। আমার ঘাসফড়িং কয়্যার গান করেছে, আর আমি ছিলাম মঞ্চে।
প্রশ্ন :
জীবনের প্রথম অভিনয়, তা–ও জামিল আহমেদের মতো গুণী নির্দেশকের সঙ্গে...
আমার ভাগ্যটাই আসলে ভালো। অনেক বছর ধরে ভাবছি অভিনয় করব। যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসার পরই প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং থেকে কোর্স করেছি কয়েকবার। আমাকে অনেকেই বলেছে, আপনি এটা করেন, ওটা করেন। আরেকটু ওজন কমান, আপনাকে এই কাস্টিং দেব, ওই কাস্টিং দেব। আরেকজন পুরো সিনেমার প্রস্তাবও দিয়েছেন। কিন্তু স্যারের ওখানে আমার ওসব কন্ডিশনও ছিল না। ক্লাস করেছি, অডিশন দিয়েছি—তারপর আমাকে নিয়েছেন। স্যার কখনো আমার নামও শোনেননি। বাকিরা যেভাবে গেছে, আমিও সেভাবে গেছি। এখানে কেউ আমাকে মোটাও হতে বলেনি, শুকাইতেও বলেনি। যে যার মতো ছিল, সে তার মতো চরিত্র পেয়েছে।
প্রশ্ন :
অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এই ডেডিকেশন আমি কোথাও কখনো দেখি নাই। আমি যেমন নাটক শেষ হওয়ার পর পাঁচ দিন ছুটি নিছি। কিন্তু অন্য কারও এমন সুযোগ ছিল না। থিয়েটার কর্মীদের মধ্যে অন্য রকম একটা ব্যাপার আছে। আমি দুটো ঈদ ওদের সঙ্গে কাটিয়েছি। দেখা যায়, আমাদের গানে গ্ল্যামারের একটা ব্যাপার আছে, কিন্তু থিয়েটারে ওটা নেই। ওদের মধ্যে শুধু ভাবনা কাজ করে, নেক্সট সিনটায় কী কী লাগবে। সব কাজ নিজেরাই করে। ওরা সবাই গান করে, নাচ করে, অভিনয়ও করে। সবাই কস্টিউম সেলাইও করে। সবাই চেয়ার সরাচ্ছে। জীবন গঠন ও গড়নের জন্য থিয়েটারচর্চার প্র্যাকটিসটা দারুণ। শিল্পের জন্য যেসব করা যায়, থিয়েটার করতে গিয়ে নতুন উপলব্ধি হয়েছে।
প্রশ্ন :
নতুন গান সম্পর্কে বলুন।
মাঝে, পাঁচ-ছয় বছর আগে, আমি একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, আমার জীবনে আর সুখ আসবে না। আগের মতো তো আর ভালো থাকব না। কিন্তু তারপরও তো ভালো ছিলাম। ২৫ বছর বয়সে অনেক মানুষ লাইফ পার্টনার পেয়ে যায়। জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। কিন্তু আমি পাই নাই। এখন মনে হয় দ্যাটস ওকে। জীবন এত বড়, যেকোনো সময় ভালোবাসা আসতে পারে। নতুন গানের এই–ই বিষয়বস্তু, নাম ‘ব্যাক ফর মি’।
প্রশ্ন :
টানা তিন দিনের কনসার্টের আয়োজন করছেন। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
গত বছর থেকে ‘ব্যাক ফর মি’ শীর্ষক কনসার্টের একটি সিরিজ শুরু করেছিলাম। সেটা শেষ করতে পারিনি। অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় সময় বের করতে পারিনি। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিজটি শেষ করতেই এই কনসার্ট। আগামী ৪ আগস্টের কনসার্ট হবে ঢাকার ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ এবং ৫ তারিখে বনানীর যাত্রাবিরতিতে। ৬ তারিখের ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া আরও একটি কনসার্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে জানাব।