মাঝে আমি ব্ল্যাকমেলিং এর শিকার হয়েছিলাম: চিত্রনায়িকা রত্না
দীর্ঘদিন পর আবার সিনেমার শুটিংয়ে ফিরেছেন চিত্রনায়িকা রত্না। চিরচেনা নিজের অঙ্গনে ফিরলেও এবারের ফেরার মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম বললেন তিনি। শুটিংয়ে ফিরেই জানালেন, এবার আর প্রতারিত হতে চান না ‘ইতিহাস’খ্যাত এই চিত্রনায়িকা। দীর্ঘদিন পর কাজে ফেরা, শুটিংয়ের পরিবেশ—এসব নিয়েই কথা হলো এই অভিনেত্রীর সঙ্গে
প্রশ্ন :
ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘নাটক, ছবি যেখানেই কাজ করতে যাই, চলচ্চিত্রের একটা প্রোডাকশনের লোক পেলেও কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করে’, আপনি শুটিংয়ে ফিরেছেন?
হ্যাঁ। এই তো অনেক দিন পর ফিরলাম নিজের আঙিনায়। ১৩ মে সিনেমার শুটিং শুরু করেছি। আগে আমার অংশগুলোর শুটিং হচ্ছে। এরপর ঢাকায় ছয় দিনের শুটিং হবে। এরপর কক্সবাজারে গানের শুটিংয়ে অংশ নেব।
প্রশ্ন :
ছবিটি সম্পর্কে কিছু বলবেন?
গল্পটা ভালো লেগেছে। সামাজিক একটা মেসেজ আছে। সিনেমার নাম ‘কিশোর গ্যাংস্টার’। পরিচালক মোসাদ্দেক রহমান। আমার সহ–অভিনেতা রাসেল রাজ। তিনি নতুন। গল্পে দেখা যাবে আমি গ্রামে ঘুরতে এসেছি। পরে কিশোর গ্যাংদের কেন্দ্র করে গল্প এগিয়ে চলে। গ্রাম–শহর মিলিয়েই শুটিং হবে। আমার সঙ্গে ডন, রেবেকা, আমির সিরাজীসহ আরও অনেকে আছেন।
প্রশ্ন :
প্রায় চার বছর পর শুটিংয়ে ফিরে কেমন লাগছে, কাজের জায়গাটা কেমন দেখছেন?
এটা তো আমার এক আশ্রয়স্থল। আমার কাজের প্রাণকেন্দ্র। ছোটবেলা থেকে কাজ শিখেছি। যখন আমি কাজ শুরু করি, তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। বোঝার চেষ্টা করেছি। সেভাবেই সিনেমায় নাম লিখিয়েছিলাম। এখন ম্যাচিউর একটা এজে এসেছি, ভালো ফিডব্যাক দিতে পারব। তখন হয়তো পারিনি। অভিনয় দক্ষতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি মনে করি সেই শিক্ষা থেকে এখন কিছু দেওয়ার সময়।
প্রশ্ন :
তাহলে বলা যায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না?
এখন কাজের আগ্রহটা আগের চেয়ে আরও বেশি। তবে শুটিংয়ের বাজেট অনেক কমে গেছে। যে কারণে হয়তো সব সিনেমা করা সম্ভব হবে না। দেখা যায় আগে শুটিংয়ে আমরা যে টাকার নাশতা খেতাম, এখন সেই টাকা নিয়ে অনেকে শুটিংয়ে নামেন। ভালো গল্প–চরিত্র হলে কাজ করে যেতে চাই।
প্রশ্ন :
আপনি বলেছিলেন ভালো পরিবেশ না পেলে ফিরবেন না?
সত্য কথা বলতে কি, মাঝখানে চলচ্চিত্র একটি ডেস্ট্রয়েড অবস্থায় ছিল। এখন দেখছি আগের চেয়ে ভালো সিনেমা হচ্ছে। সিনেমা নিয়ে সবার মধ্যে একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আমি হয়তো আরও কিছু সিনেমা করব। যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরা আমাদের মতো পরিবেশ নিশ্চিত করে নিচ্ছেন। এমনকি বাজেটের বিষয়েও। আমাকে যে মেনটেইন করতে পারে, সে ধরনের কাজগুলো করছি। আমার কাজ করে ভালোই লাগছে।
প্রশ্ন :
বলেছিলেন ভালো গল্প না হলে ফিরবেন না? আপনি কি এই গল্প নিয়ে আশাবাদী?
আমি বেকার থাকলেও ভালো গল্প না হলে ফিরতাম না। যে কারণে ফিরিনি। কারণ, মাঝে আমি নিজে ব্ল্যাকমেলিং এর শিকার হয়েছিলাম। দুই তিনটা সিনেমায় কাজ করে আমার সঙ্গে এমনটা হয়েছিল। একটি সুন্দর মেয়ে, আগে কাজ করতাম, সেখান থেকে আমি রত্না হয়েছি। কাজের জন্য দু–চারজন আমার নামটা জানে। সেই রত্না নামটা যেন কলুষিত না হয়। সেই চেষ্টা করব। সেই ‘ইতিহাস’–এর নায়িকা রত্না এটা যেন বজায় থাকে।
প্রশ্ন :
এর আগে শুটিংয়ে কী হয়েছিল খুলে বলবেন?
আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, আমাকে যেভাবে পর্দায় থাকার কথা ছিল, কিন্তু সিনেমা রিলিজের সময় আমি তার উল্টোটা পাই। এমনকি পরে দেখি ছবির মান ও অন্যান্য পরিবেশ, অনেক কিছু বদলে গেছে। অডিয়েন্সের কাছে আমি লজ্জিত হয়েছি। এ ধরনের কাজগুলো আমি আর করব না। এখন জেনেবুঝে কাজ করতে চাই। আমি আর কোনো ধরনের প্রতারিত হতে চাই না। আগে সহজ–সরল মনে পা বাড়াতাম, এখন অনেক সতর্ক হয়ে পা বাড়াব। কাজী হায়াত সাহেব, মোহাম্মাদ হান্নান সাহেবসহ অনেক ভালো নির্মাতার সিনেমায় অভিনয় করে রত্না হয়েছি। কোনো বাজে কাজ আমি আর করব না।
প্রশ্ন :
ইতিহাস সিনেমা দিয়েই শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিলেন, পরে শাকিব খান, ফেরদৌস, মারুফদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। এবার আপনি জুটি হয়েছেন নতুন নায়কের সঙ্গে। বর্তমানে দর্শক সিনেমা কম দেখছেন, সেখানে আপনার সিনেমা কতটা দর্শক ফেরাতে পারবে?
দেখুন, দর্শক সিনেমা ফেরাতে পারে। সিনেমা দর্শক ফেরাতে পারে। আমি আমার সিনেমা দিয়ে দর্শক ফেরাব, এটা বলছি না। এই দুঃসময়ে আবার পিছিয়েও তো থাকা যায় না। আমাদের তো কাজ করতে হবে। আশা করছি প্রযোজক যে পরিমাণ লগ্নি করেছেন, সেটা চার থেকে ছয় ডবল হয়তো, বেনিফিটেড হবেন না। কিন্তু ইনভেস্ট ফিরে আসবে। প্রযোজক মনঃক্ষুণ্ন হবেন না। কিছুটা হলেও খুশি থাকবেন।
প্রশ্ন :
বলা হয় অভিমানে শুটিং থেকে দূরে ছিলেন? আসলে কি তাই?
না না, আসলে সে রকম কিছু না। ল বিষয়ের ওপর পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিলাম। ব্যবসায় সময় দিয়েছি। আর সেই সময় অল ওভার ফিল্ম তো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল। এসব কারণেই ফেরা হয়নি।