তাঁর প্রতিক্রিয়া দারুণ ছিল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক ছবি মুজিব এখন মুক্তির অপেক্ষায়। তবে মুক্তির তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ছবিটি পরিচালনা করছেন ভারতের খ্যাতনামা পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। বাংলাদেশ–ভারত যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হয়েছে। শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। তাতে উঠে এসেছে এই ছবিকে ঘিরে নানা কথা।
প্রশ্ন :
ছবিটির নাম বদলে ফেলে যে ‘মুজিব’ রাখা হলো, এর কারণ কী?
আসলে ‘মুজিব’ মানে তো ‘যিনি জবাব দেন’। তাই এর চেয়ে ভালো নাম আর কী হতে পারে।
প্রশ্ন :
বলিউডে অসংখ্য বাঙালি অভিনয়শিল্পী আছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ ছবির প্রায় সব অভিনেতা–অভিনেত্রীই বাংলাদেশের। এর কারণ কী?
প্রায় কেন? পুরোটাই বলতে পারেন। ছোটখাটো কিছু চরিত্রের জন্য ভারতের অভিনয়শিল্পী নিয়েছি। ছবিটা বাংলায় তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলাদেশের শিল্পীদের এই ছবির সঙ্গে অনেক বেশি আবেগ জড়িয়ে থাকবে। তাই আমাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের নেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন :
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক গভীর আবেগের। তাই এই ছবিকে ঘিরে প্রত্যাশাও থাকবে প্রচুর। একজন পরিচালক হিসেবে সে প্রত্যাশা পূরণ করা কতটা কঠিন ছিল?
এখানে বড় প্রশ্ন হলো, কতটা ভালোভাবে আপনি ছবিতে বিষয়টা তুলে ধরতে পেরেছেন। আমি মনে করি, আমরা সেটা করতে পেরেছি। আমরা যথেষ্ট ভালোভাবে কমিউনিকেট করেছি। আশা করছি, কোনো সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের একঝাঁক অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
দারুণ অভিজ্ঞতা। তাঁরা প্রত্যেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া অভিনেতা। সবাই অত্যন্ত পেশাদার। তাঁরা প্রচুর মহড়া দিয়ে এসেছিলেন। কাজের প্রতি তাঁদের প্রবল উৎসাহ ছিল। বাংলাদেশের শিল্পীদের সঙ্গে আমাদের কাজে কোনো সমস্যা হয়নি। শুধু একটাই অন্তরায় ছিল, ভাষা। আমি বাংলা বলতে পারি না। তবে সেটাও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। দোভাষী আমাদের সে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিলেন। (সশব্দ হাসি)
প্রশ্ন :
‘মুজিব’ ছবির শুটিং মুম্বাই ছাড়াও বাংলাদেশে হয়েছে। বাংলাদেশে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয়ে ওদের বন্দোবস্ত ছিল দুর্দান্ত। শুটিং করতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি। সত্যি বলতে কী, বাংলাদেশের শুটিং নিয়ে শুরুতে আমি একটু উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ, সেখানে জনঘনত্ব বেশি। ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশ সরকার আর এফডিসি আমাদের জন্য দারুণ ব্যবস্থা করেছিল। খুবই সাহায্য করেছিল তারা। ঢাকার রাস্তায় গাড়ির জটলা বেশি। শুটিংস্থল আমাদের হোটেল থেকে দূরে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এত সুন্দর ব্যবস্থা করেছিল যে আমরা কোনো যানজটই পাইনি। আমরা পুরো ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পেয়েছিলাম। গাড়ির আগেপিছে সাইরেন বাজানো গাড়ি থাকত। ব্যবস্থা ছিল রাজকীয় (সশব্দ হেসে)। নিরাপত্তাব্যবস্থাও দুর্দান্ত ছিল। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন :
এই ছবির কিছু ঝলক কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখেছেন? তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
হ্যাঁ, তিনি কিছু ঝলক দেখেছেন। এটা তো তাঁরই পারিবারিক ছবি। তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল দারুণ। তিনি আমার কাজ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। আমার কাজ তিনি দেখেছেন। সত্যি বলতে, তিনি আমাকে এই ছবি তৈরির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি যেভাবে চাই, সেভাবেই বানাতে পারি।
প্রশ্ন :
‘মুজিব’ ছবিটিতে কি বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবন তুলে ধরা হয়েছে, নাকি তাঁর জীবনের বিশেষ কিছু ঘটনাকে ভিত্তি করে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে?
এটাকে নিশ্চিতভাবে বায়োপিক বলতে পারেন। দেখুন, একজন মানুষের জীবনে বহু ঘটনা ঘটে। সবকিছু তো আর আমরা পর্দায় তুলে ধরতে পারব না। তাঁর জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোই তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর দু-তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা আমরা ছবিতে তুলে ধরেছি। বিশ্বের ১০টা সেরা বক্তৃতার মধ্যে তাঁর একটা বক্তৃতাও তো আছে।
প্রশ্ন :
এই ছবির জন্য আপনি কতটা শৈল্পিক স্বাধীনতা পেয়েছেন?
বলতে পারেন, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছি। আমার কাজে কেউ কখনো হস্তক্ষেপ করেননি।
প্রশ্ন :
অতিমারির মধ্যে শুটিং করেছেন। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমাদের প্রযোজনা সংস্থা এবং প্রযোজনা ডিজাইনার দারুণ ছিল। তারাই সব পরিকল্পনা করেছে। আমাকে কখনো সেটে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়নি। কলকাতা, মুম্বাই, ঢাকা—সব জায়গাতেই দারুণ ব্যবস্থা ছিল।
প্রশ্ন :
‘মুজিব’ ছবিটির আগেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অতিমারিতে হতে পারেনি। ছবিটি মুক্তির নতুন কোনো তারিখ কি স্থির করা হয়েছে?
হ্যাঁ, তারিখ অনেকবার বদলেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। প্রযুক্তির সমস্যা ছাড়াও নানা কারণে দেরি হয়েছে। এখনই মুক্তির তারিখ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। কারণ, কাজ এখনো শেষ হয়নি।
প্রশ্ন :
এর আগে আপনি মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহরুকে নিয়ে ছবি করেছেন। এখন করছেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। আমরা কি বলতে পারি, এটা আপনার পছন্দের ঘরানা?
না, না, সে রকম কিছু নয়। ইতিহাসের পাতায় তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। তাই তাঁদের নিয়ে ছবি তৈরি করতে উৎসাহিত হয়েছি।