১০০ পালা নিয়ে যাত্রা উৎসব শুরু
করোনা কেড়ে নিয়েছিল উৎসবের জৌলুশ। দুই বছর উৎসবে থাবা বসিয়েছে এই মহামারি। এরই মধ্যে তৃতীয় ঢেউ কাটিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ফিরছে হারানো জৌলুশ। কাটছে ভয়, মানুষ মিলছে উৎসবে। গতকাল শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ যাত্রা উৎসব ২০২২’।
সারা দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন যাত্রাদলের সম্পৃক্ততায় নির্মিত হয়েছে ১০০টি নতুন যাত্রাপালা। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে যাপিত জীবন কিংবা কাহিনীনির্ভর বৈচিত্র্যময় বিষয়ের ওপর তৈরি হয়েছে এই যাত্রাপালাগুলো। এসব পালা নিয়েই যাত্রা উৎসব। সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির মাঠে সূচনা হওয়া সর্ববৃহৎ উৎসবটি ছড়িয়ে যাবে দেশব্যাপী। ঢাকা থেকে শুরু হওয়া উৎসবের আমেজ ছুঁয়ে যাবে খুলনা, যশোর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, সিলেট, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়। সব মিলিয়ে সারা দেশের ২৮টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসব।
গতকাল রাতে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মাঠের প্যান্ডেলে ঘেরা মঞ্চে উৎসবের সূচনা হয়। যন্ত্রশিল্পীদের পরিবেশিত ক্ল্যারিওনেট, কর্নেট ও বাঁশির সুরে মঞ্চে আসেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্জিয়া আক্তার। একাডেমির সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান।
আলোচনায় অন্য বক্তারা বলেন, দেশের লোকজ সংস্কৃতির আদি রূপ হচ্ছে যাত্রাপালা। জাতীয় সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে যাত্রাপালায়। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পমাধ্যমের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এই যাত্রা উৎসব। কারণ, এই উৎসবের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রাদল ও যাত্রাশিল্পীদের সম্মিলন ঘটছে।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দিজীবনভিত্তিক যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’। শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরি যাত্রাদল পরিবেশিত পালাটি লিখেছেন মাসুম রেজা। সারা দেশের যাত্রাশিল্পীদের সম্মিলনে সজ্জিত পালাটির নির্দেশনা দিয়েছেন সাইদুর রহমান। একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারে বঙ্গবন্ধুর বন্দিজীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে পালাটি।
প্রচলিত কাঠামোর বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে বিন্যস্ত হয়েছে যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’।
বঙ্গবন্ধুর জেলজীবনের ঐতিহাসিক দিনগুলো পর্যায়ক্রমে ১১টি দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। গল্পের মাধ্যমে ইতিহাসের সত্য ও তথ্যের সম্মিলনে ঘটনায় গ্রহণ করা হয়েছে চ্যালেঞ্জ। সত্যকে মেলে ধরার সেই সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধুর সমান্তরালে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইয়াহিয়া কিংবা জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ তুলে আনা হয়েছে প্রাসঙ্গিক চরিত্রগুলো। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের ঘটনার সূত্র ধরে বিস্তৃত হয়েছে যাত্রাপালাটির কাহিনী।
আজ রোববার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মঞ্চস্থ হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রযোজিত যাত্রাপালা ‘বিসর্জন’। তৃতীয় দিন সোমবার মঞ্চস্থ হবে মিলন কান্তি দে নির্দেশিত চট্টগ্রামের যাত্রাপালা ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে’।