স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে গেছে
আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ কম ছিল নির্মাতাদের। হাত পাকাতে কেউ কেউ নির্মাণ করতেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। কিন্তু এখন ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সুবাদে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেরও বাজার গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত পাঁচ মাসে ঢালিউডে সিনেমা নির্মাণ নেই বললেই চলে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের শুটিং ছিল না একেবারেই। সিনেমা হল বন্ধ থাকার কারণে মুক্তি পায়নি কোনো সিনেমা। ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাণের চাকা। তবে এই সময়ে ঘরবন্দী তারকাদের দিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের যেন জোয়ার এসে যায়। বড় পর্দা ও ছোট পর্দার অনেক তারকা নির্মাতা নানা স্বাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সেখানে বড় পর্দা ও ছোট পর্দার অনেক অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন। গত পাঁচ মাসে প্রায় দুই ডজন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে।
কোয়ারেন্টিন ১, কোয়ারেন্টিন ২, লকডাউন, করোনা বলে কিছু নেই, কানেকশন, অক্সিজেন, একা, করোনার ফুল, মধ্যনায়ক, লাস্ট অর্ডার, প্রেসার কুকার, দায়িত্ব, কাগজের পাখি, তাহাদের ভালোবাসা, খোলা জানালা, আইসোলেশন, ওয়েটিং, বাফার জোনও টোনাটুনি রাগ করো নাসহ বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে এই ঘরবন্দী সময়ে। এরই মধ্যে অনেকগুলো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের এমন হিড়িক পড়ার কারণ হিসেবে নির্মাতারা দেখিয়েছেন বড় আয়োজনে শুটিং না করতে পারার সীমাবদ্ধতাকে। তাঁদের ভাষ্য, করোনার কারণে বড় ইউনিট নিয়ে আউটডোরে গিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা ছিল অসম্ভব। কিন্তু নিজেদের ঘরেই মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় কিংবা ছোট পরিসরে আউটডোরে শুটিং করে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন নির্মাতারা। বেশির ভাগ গল্পে উঠে এসেছে করোনাকালীন বাস্তবতার গল্প। আবার কোনো কোনো ছবিতে উঠে এসেছে ব্যতিক্রম সব কাহিনিও।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম মনপুরা ও স্বপ্নজালখ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের। গত দুই ঈদে দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘করোনা ছড়িয়ে পড়লে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজ করতে পারিনি। ঘরে বসেই ছিলাম। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র করার প্রস্তাব এল, তাই বানিয়ে ফেললাম। তা ছাড়া ঘরে বসেই যেহেতু বানানোর সুযোগ ছিল, তাই সুযোগটা নিয়েছি। আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রচারের জায়গা ছিল কম। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউব—এ ধরনের ছবি প্রকাশিত হওয়ার বড় মাধ্যম। এগুলো জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। এ কারণেই বেশি বেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে।’
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন ছুঁয়ে দিলে মন সিনেমার পরিচালক শিহাব শাহীনও। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে আমাদের এখানে। তবে এই করোনাকালে অনেক বেশি কাজ হয়েছে। অনেক ভালো ছবিও নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিন সেলিম, নূরুল আলম আতিক, দীপংকর দীপন, সাফায়েত মনসুরের কাজ বেশ পছন্দ হয়েছে।’
পোড়ামন টু ও দহন ছবির নির্মাতা রায়হান রাফিও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে কিছুদিন পরপরই প্রযুক্তির পরিবর্তন আসছে। দর্শকের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও সিনেমাশিল্পের পরিবর্তন হচ্ছে। ছোট ছোট গল্প নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা পছন্দ করছেন দর্শক। তা ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের ধারণা, একসময় সিনেমা প্রদর্শনীর অভাবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ কম ছিল নির্মাতাদের। কিংবা হাত পাকাতে কেউ কেউ নির্মাণ করতেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। কিন্তু এখন ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সুবাদে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেরও বাজার গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে।