শুরু হলো 'শিল্পের শহর ঢাকা'
ঢাকার বয়স কত হবে? শোনা যায়, ঢাকার ৪০০ বছরের বেশি ঐতিহ্য আছে। কিন্তু সেই ঐতিহ্যে গর্ব যতটা, তার চেয়ে বেশি বদনাম যানজট, জনজট আর দূষণের। হারিয়ে যাচ্ছে মানবিক আবেগ-অনুভূতি। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে শুরু হয়েছে ‘শিল্পের শহর ঢাকা’ শীর্ষক কর্মসূচি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পের সংযোগ ঘটাতে একাডেমির তিন দিনের এই আয়োজনটি শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টিস্নাত সকালে শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয়েছে অভিনব এই আয়োজন। বেলা ১১টায় ‘শিল্পের শহর ঢাকা’ শিরোনামের এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারী ১৫ জন শিল্পীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন ‘শিল্পের শহর ঢাকা’-এর কিউরেটর শিল্পী মাহবুবুর রহমান।
একাডেমির মহাপরিচালক উদ্বোধনে বলেন, নাগরিক নানা সংকটে আজ এই শহরের ঐতিহ্য মানুষ ভুলতে বসেছে। যানজটের চাপে মানবিক আবেগগুলো অনেকখানি উপেক্ষিত। শহরবাসীকে ঢাকার ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে, মানুষের মধ্যে শিল্পবোধ ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করা হয়েছে এ কর্মসূচি। তিনি জানান, প্রথমবারের মতো এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের ১৮তম আসরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে এই শিল্পমাধ্যমটি। সেপ্টেম্বরে মাসব্যাপী এ আয়োজন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি বাংলাদেশের তরুণ পারফরম্যান্স আর্ট শিল্পীদের নিয়ে আয়োজন করছে ‘শিল্পের শহর’ নামের নতুন এ উদ্যোগ।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের মূল আসরে বাংলাদেশি ১৫ জন শিল্পীর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাচিত ১৪ শিল্পী তাঁদের পারফরম্যান্স প্রদর্শন করবেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, শিল্পী তাঁর শারীরিক উপস্থাপনার ভিত্তিতে যে শিল্পনৈপুণ্য প্রদর্শন করেন, সেটিই পারফরম্যান্স আর্ট। পাশ্চাত্যে এর আবির্ভাব ৬০-এর দশকে। বাংলাদেশে এই শিল্পচর্চা শুরু আশির দশকে। সাংগঠনিকভাবে পরবর্তীকালে পারফরম্যান্স আর্টের চর্চা থাকলেও দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক আসর হিসেবে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে এর অন্তর্ভুক্তকরণ বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় এক নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে।
সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব শেষে সুমনা আক্তার পরিবেশন করেন দিনের প্রথম পারফরম্যান্স আর্ট। এরপর একাডেমির সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের সামনে থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত নিজের পরিবেশনা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে হাজির হন সুজন মাহাবুব। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে নিজের পরিবেশনা উপস্থাপন করেন শিল্পী আবু নাসের রুমী। দোয়েল চত্বর প্রাঙ্গণে অবস্থিত ঢাকা গেটে ছিল শুভ সাহার পরিবেশনা। দোয়েল চত্বরের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পরিবেশনা উপস্থাপন করেন শিল্পী ইমরান সোহেল। টিএসসি থেকে শহীদ মিনার হয়ে আবারও টিএসসিতে এসে শেষ হয় সঞ্জয় চক্রবর্তীর পরিবেশনা। জাতীয় জাদুঘরে ছিল অসীম হালদারের পরিবেশনা। দিনের শেষ পরিবেশনাটি ছিল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে; যা পরিবেশন করেন জাহিদ হাসান।
কাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০টায় পুরান ঢাকার লালকুঠির সামনে পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করবেন ফারাহ নাজ মুন। সাড়ে ১১টা থেকে জুয়েল এ রব শ্যামবাজারে, সাড়ে ১২টায় জয়দেব রোয়াজা এবং অর্পিতা সিংহ লোপা বিউটি বোর্ডিংয়ে নিজেদের পারফরম্যান্স আর্ট নিয়ে হাজির হবেন। শনিবার শেষ দিনে সৈয়দ কমলাপুর স্টেশনে মুহাম্মদ জাকির, গুলশানে ফারহানা আক্তার এবং সংসদ ভবন এলাকায় সরকার নাসরিন নিজেদের পরিবেশনা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে হাজির হবেন।
‘শিল্পের শহর ঢাকা’র প্রথম আয়োজন তিন দিনের পারফরম্যান্স আর্ট। এই কর্মসূচির পরেই বাউল পদযাত্রার আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাউলদের নিয়ে ‘শিল্পকলা একাডেমি’ বাউল দল গঠন করা হয়েছে। এখানে থেকে ১০০ জন বাউল এই পদযাত্রায় অংশ নেবেন। পরে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাউলগান করবেন তাঁরা। সব এলাকায় স্থানীয় শিল্পীরাও এতে যোগ দেবেন। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেবে এসব কর্মসূচিতে। ‘শিল্পের শহর’ কর্মসূচিতে প্রতি ১৫ দিন পরপর পর্যায়ক্রমে নাটক, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। আগামী শীতে এই কর্মসূচির আওতায় উন্মুক্তস্থানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
‘শিল্পের শহর’ কর্মসূচিটি একসময় ছড়িয়ে পড়বে দেশের সব কটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে। তিন মাস অন্তর প্রতিটি জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানালেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবলের সংকট আছে। নইলে প্রতি মাসেই অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিতাম আমরা।’