বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে যুক্তরাজ্যপ্রবাসীদের অবদান নিয়ে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু সেসব কাজে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নারীদের অবদানের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে। ইতিহাসের সেই উপেক্ষিত অধ্যায়েই আলো ফেলল ‘হোয়েন ম্যাডোনা ওয়াজ ডায়িং’। গত রোববার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে নাটকটি মঞ্চস্থ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ইউকে। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল আয়োজিত মুক্তি ও স্বাধীনতা নাট্য উৎসবের এটি ছিল শেষ পরিবেশনা।
স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলা, হত্যা ও নির্যাতনের খবর হাজার হাজার মাইল দূরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা বাঙালি নারীদের কীভাবে ব্যাকুল ও সংগ্রামী করে তুলেছিল, নাটকে সেই গল্প উঠে এসেছে। দেশে থাকা প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তাঁরা, ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই কিছু একটা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলতে ঐক্যবদ্ধ হন। মিছিল, সমাবেশ, প্রতিবাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহে দিনরাত কাজ করে গেছেন তাঁরা। ঘণ্টাব্যাপী ওই মঞ্চনাটকে উঠে আসে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নারীদের সেসব তৎপরতার কথা। নাটকটি পরিচালনা করেছেন রেডব্রিজ কাউন্সিলের কাউন্সিলর সাইদা সায়মা আহমেদ।
নাটকটি দেখতে এসেছিলেন তৎকালীন নারী আন্দোলনকারীদের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস রহমান। অনুষ্ঠানে তিনি সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করেন। উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান ও কবি শামীম আজাদ। সমাপনী এ আয়োজনে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যালি ক্যাম্পবল বলেন, এ নাটক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাঙালি নারীদের অবদান নিয়ে তাঁকে নতুন জ্ঞান দিয়েছে। স্কটিশ এই শিক্ষক হাসির ছলে বলেন, তিনি এখন জানেন, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য কী কী করতে হবে এবং কার কাছে পরামর্শ চাইতে হবে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জন বিগস বলেন, বাংলাদেশিদের সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি পূর্ব লন্ডনের বৈচিত্র্য তুলে ধরতে এ উৎসব একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন।
পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আয়োজনে নভেম্বর মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা নাট্য উৎসব’। আয়োজনটি সাধারণত ‘আ সিজন অব বাংলা ড্রামা’ নামে পরিচিত। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এবার ওই ভিন্ন নামকরণ।