সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র সংস্কৃতির হাতে নেই, রাজনীতির কাছে চলে গেছে: মামুনুর রশীদ

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবনের সামনে দুই দিনব্যাপী আনর্ত নাট্যমেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরাপ্রথম আলো

বাংলাদেশ নামক সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র এখন আর সংস্কৃতির হাতে নেই বলে মন্তব্য করেছেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবনের সামনে দুই দিনব্যাপী আনর্ত নাট্যমেলার উদ্বোধনের সময় তিনি এই মন্তব্য করেছেন। থিয়েটারবিষয়ক পত্রিকা ‘আনর্ত’ এই মেলার আয়োজন করেছে।

মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নাট্যকর্মীরা এই অনুষ্ঠানে এসেছেন। আমাদের এই শীতের সকালটাকে উষ্ণ করে দিয়েছে। আমরা আমাদের এই বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলাম। কিন্তু সেই সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রটি এখন আর সংস্কৃতির হাতে নেই। রাজনীতির কাছে চলে গেছে। এর মধ্যেও আনর্ত যে সাহস দেখিয়েছে, বিশাল নাট্যকর্মীদের একত্র করেছে, এটা আমাদের জন্য পরম গৌরবের, আনন্দের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আজ ও কাল অনেক নাট্য মঞ্চস্থ হবে। অভিনয়ের জায়গাগুলোতেও নতুন করে ভাবার প্রয়োজন আছে। উপযোগী মঞ্চের অভাব আছে সারা দেশেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও সেই অভাব আছে। সবাই মিলে সমস্যার সমাধান করব। নাটক জেগে উঠুক এই জনপদে।’

প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, নাটক আমাদের সমাজ পরিবর্তনের একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আসলে সমাজ পরিবর্তন হঠাৎ করে করা যাবে না। আমাদের যে মনোজাগতিক পরিবর্তনে বাঙালির যে লুক্কায়িত সাহিত্য-সংস্কৃতি, তা যদি আমরা বর্ধিত করতে পারি, তবেই মনে হয় আমরা আবার ফিরে আসব বাঙালির সংস্কৃতিতে।

এবারের নাট্যমেলায় থিয়েটারের ‘প্রত্যক্ষ’ ও ‘নেপথ্য’ শাখায় অবদানের জন্য তিন গুণী শিল্পীকে ‘আনর্ত’ পুরস্কার দেওয়া হয়
প্রথম আলো

এ সময় উপস্থিত সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)  মো. হুমায়ুন কবীর, নাট্যজন তারিক আনাম খান, মলয় ভৌমিক, গাজী রাকায়েত, বন্যা মির্জা, আব্দুস সেলিম, আহমদ ইকবাল হায়দার, মোহাম্মদ বারী, মাসুম রেজা, সালাহউদ্দিন লাভলু, অরুণা বিশ্বাস, ওয়াহিদা মল্লিক জলি। এ ছাড়া ভারত থেকে অংশুমান ভৌমিক, মলয় মিত্র, সঞ্চয়িতা বসু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরপর মঞ্চে এবারের নাট্যমেলায় থিয়েটারের ‘প্রত্যক্ষ’ ও ‘নেপথ্য’ শাখায় অবদানের জন্য তিন গুণী শিল্পীকে ‘আনর্ত’ পুরস্কার দেওয়া হয়। যাত্রা-সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের স্ত্রী ও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী অরুণা বিশ্বাসের মা জ্যোৎস্না বিশ্বাস, থিয়েটারসংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্বদরবারে পরিচিত করার জন্য বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভসের নির্বাহী পরিচালক বাবুল বিশ্বাস এবং থিয়েটারের আলোকশিল্পী আবু তাহেরকে পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবনের সামনে মেলা চত্বরে, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসিতে এসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে
প্রথম আলো

পুরস্কার পেয়ে তাঁরা নিজেদের অনুভূতি তুলে ধরেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে এসে জ্যোৎস্না বিশ্বাস সিরাজউদ্দৌলার সেই ডায়ালগ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। বাবুল বিশ্বাস ও আবু তাহের স্মৃতিচারণা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে থাকছে ‘নাট্য আড্ডা: নাট্যচর্চায় নাটকীয় স্মৃতিচারণা’, ‘নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর: কী পেয়েছি, কী পাইনি’, ‘থিয়েটারের কাগজ: যতরকম দায়’ শীর্ষক বৈঠক; আনর্ত স্বীকৃতি ২০২৪ প্রদান;  মঞ্চনাটক ‘পারো’ (দেশ নাটক, ঢাকা), ‘ওয়ান ফ্রাইডে মর্নিং’ (মধ্যমগ্রাম নৃত্যবিতান, ভারত), ‘কহে ফেসবুক’ (আরণ্যক, ঢাকা) ও ‘মূল্য-অমূল্য’ (অনুস্বর, ঢাকা); পালানাটক ‘কালিন্দীর গীত’ (সারথি থিয়েটার, গাইবান্ধা), পথনাটক ‘সুনাগরিকের সন্ধানে’ (অনুশীলন, রাবি) ও ‘বহমান’ (সমকাল, রাবি); গানের আসর ও দর্শক-অভিনেতা-নির্মাতার আড্ডা ইত্যাদি।
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবনের সামনে মেলা চত্বরে, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসিতে এসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।