অক্সফোর্ডে পড়তে যাচ্ছেন মঞ্চের ‘আনা ফ্রাঙ্ক’

আনা ফ্রাঙ্ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর্য মেঘদূতম্যাড থেটারের সৌজন্যে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। হিটলারের বাহিনী নেদারল্যান্ডস দখল করেছে। ১৯৪২ সালের ৬ জুলাই ফ্রাঙ্ক পরিবার আশ্রয় নেয় গোপন কুঠুরিতে। পরিবারের ছোট মেয়ে আনা ফ্রাঙ্কের বয়স তখন ১৩। খোলা হাওয়া নেই, আলো নেই। মানুষের ভিড়েও আনা নিঃসঙ্গ, তার মনের কথা বলার মতো কাউকে পায় না। তার সব কথা সে লিখে রাখে ডায়েরিতে, ডায়েরিটাই হয়ে ওঠে তার প্রিয় বন্ধু।

আর্য মেঘদূত
ম্যাড থেটারের সৌজন্যে

১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট বন্দিজীবনের ৭৬১তম দিনে হিটলারের বাহিনী গোপন কুঠুরি থেকে আনাকে বন্দিশিবিরে নেয়। ঠান্ডায়, শ্বাসকষ্টে ভুগে ভুগে বন্দিশিবিরে আনার মৃত্যু হয়। বোনের হাত ধরে, শেষ বিকেলের আলোয়, স্কার্টে ঢেউ তুলে তার আর বাড়িতে ফেরা হয় না। এই আনা ফ্রাঙ্ক চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন তরুণ অভিনয়শিল্পী আর্য মেঘদূত। আনা ফ্রাঙ্ক নাটকে একক অভিনয় করেছেন তিনি।

প্রযোজনাটি ঢাকার নাটক পাড়ায় বেশ সাড়া ফেলেছে। মঞ্চনাটকের বিদগ্ধজনেরা এই নাটকের একমাত্র চরিত্র আর্য মেঘদূতের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন।

ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডে ভর্তি হয়েছেন আর্য মেঘদূত। তার আগে শেষবারের মতো ‘আনা ফ্রাঙ্ক’ নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল ম্যাড থেটার। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটির প্রদর্শনীর কথা ছিল। যদিও সেদিন শেষ পর্যন্ত প্রদর্শনীটি হয়নি। শিল্পকলা একাডেমিতে সেদিন নাটক মঞ্চায়নের পরিবেশ ছিল না।

ম্যাড থেটারের প্রযোজনায় নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন আসাদুল ইসলাম ও নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী আনিসুল হক।

আর্য মেঘদূত
ম্যাড থেটারের সৌজন্যে

২০২১ সালে প্রথমবারের মতো এই নাটকে অভিনয় করেন আর্য মেঘদূত; তখন তিনি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। অভিনেত্রী আর্য মেঘদূত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনা ফ্রাঙ্ক আমার ভীষণ পছন্দের মানুষ। তার ডায়েরি আগেই পড়েছিলাম, তাকে বন্ধু মনে করতাম। দুজনের বয়সও কাছাকাছি। লকডাউনের মধ্যে পাপা (আসাদুল ইসলাম) চিত্রনাট্য করে আমাকে বললেন, “তুমি চরিত্রটা করবে।” তখন কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। ঘরবন্দী সময়ে আনার বন্দিশিবিরের দিনগুলোর সঙ্গে রিলেট করতে পারছিলাম।’

আর্য মেঘদূত যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়ার পর নাটকটির আর কোনো প্রদর্শনী হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, এটি একক চরিত্রের নাটক।

যুক্তরাজ্যে গিয়েও নাটকচর্চার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এই তরুণ অভিনেত্রী বলেন, ‘সব সময়ই নাটকের সঙ্গে থাকতে চাই। থিয়েটার ক্লাবের সঙ্গে জড়িত থাকার ইচ্ছা আছে। নাটক আমার জীবনেরই অংশ। নাটক থেকে দূরে থাকব না।’

এর আগে ২০১৫ সালে ম্যাড থেটারের নদ্দিউ নতিম নাটকে অভিনয় করেন আর্য মেঘদূত। তবে মঞ্চে অভিষেক আরও আগে, শৈশবে। পাঁচ বছর বয়সে রূপবতী নাটকে ছোট্ট একটা দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি।

আর্য মেঘদূত
ম্যাড থেটারের সৌজন্যে

আনা ফ্রাঙ্ক একক চরিত্রের নাটক। আর্য মেঘদূতের দেশত্যাগের পর নাটকটির প্রদর্শনী চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

২০২১ সালের অক্টোবরের ছিল ওই নাটকের প্রথম প্রদর্শনী। এ পর্যন্ত ৮টি প্রদর্শনী হয়েছে। এ বছর বিখ্যাত নাট্য উৎসব এনএসডি আয়োজিত ‘ভারত রঙ মহোৎসব ২০২৪’–এ বাংলাদেশের অন্যতম নাটক হিসেবে ভারতের ডিব্রুগড় ও দিল্লিতে ২টি মঞ্চায়ন হয়েছে।

আর্য মেঘদূত
ম্যাড থেটারের সৌজন্যে

গত বছর ভারতের গৌহাটিতে আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে নাটকটি।
মেঘদূতের বাবা আসাদুল ইসলাম ও মা সোনিয়া হাসান মিলে ২০১৫ সালে নাটকের দল ম্যাড থেটারের যাত্রা শুরু করেন। মেঘদূতের ভাষায়, জন্মের পর থেকেই নাটকের মহড়া দেখে বেড়ে উঠেছেন তিনি।

অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্য ও আঁকাআঁকির প্রতিও আগ্রহ রয়েছে মেঘদূতের।