কলকাতায় ‘রাঢ়াঙ’–এর অনন্য এক প্রাপ্তি
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে চলছে আরণ্যকের জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘রাঢ়াঙ’। দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির নাটকটির দিনে একটি শো করে আসছেন আরণ্যকের দলপ্রধান মামুনুর রশীদ। প্রায়ই অনুরোধ পেতেন পরপর দুটি শো করার। কিন্তু নানা বিবেচনায় একই দিনে দুটি শো করা হয়নি। তবে এবার বাধ্য হয়ে বিদেশি ভক্তদের অনুরোধে এক দিনে দুটি করে শো করতে হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর ছয়টি শো নিয়ে কলকাতার দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছিল বাংলাদেশের রাঢ়াঙ।
কলকাতার কল্যাণী মঞ্চে ‘রাঢ়াঙ’–এর প্রথম প্রদর্শনী হয় ছয় দিন আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। পরের দিন মধ্যমগ্রাম ও বেলঘরিয়ার মঞ্চে শো হয়। দলের সদস্যরা জানান, কলকাতার প্রতিটি মঞ্চের দর্শকের আসন কানায়–কানায় পূর্ণ ছিল। কেউ কেউ আসন না পেয়ে সিঁড়িতে বসেছেন, কেউ দাঁড়িয়েই নাটক উপভোগ করেছেন। মামুনুর রশীদ, চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, জয়রাজ, সুজাত শিমুল প্রমুখ অভিনয় করেছেন ‘রাঢ়াঙ’–এ। শিল্পীরা জানান, প্রতিটি শো শেষে দর্শকেরা এগিয়ে এসে কথা বলেন। শিল্পীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান।
‘রাঢ়াঙ’ নিয়ে এটাই সেরা অভিজ্ঞতা মামুনুর রশীদের কাছে। বরেণ্য এই নাট্যব্যক্তিত্ব বলেন, ‘মঞ্চনাটকের প্রতি দর্শকদের এমন ভালোবাসা, উন্মাদনা আগে খুবই কম দেখেছি। দর্শকদের ভালোবাসা বুক ভরে গ্রহণ করেছি। খুবই ভালো লেগেছে। এই ভালোবাসার শুরু কল্যাণী থেকে। চার জায়গায় ছয়টি শো করেছি। এক দিনে ডাবল শো কখনোই ভাবিনি। কিন্তু এবার দর্শকদের চাপে করতে হয়েছে।’
আরণ্যক নাট্যদল এর আগে তাদের বেশ কিছু নাটকের এক দিনে দুটি করে শো করেছে। কিন্তু ‘রাঢ়াঙ’–এর ক্ষেত্রে প্রথমবার এমনটি ঘটেছে। কীভাবে সম্ভব হবে, সেটা নিয়ে অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল।
‘দর্শকেরা আমাদের এত ভালোবাসবে, এটা অনেক অপ্রত্যাশিত ছিল। আমাদের এই যে দীর্ঘ পথচলায় কখনোই এক দিনে দুটি শো করার সাহস পাইনি। সেখানে এবার এক দিনে দুটি লোকেশনে দুটি শো করেছি। সেখানে উপচে পড়া দর্শক। দর্শকদের এমন স্বতঃস্ফূর্ততা আগে দেখিনি,’ বলেন মামুনুর রশীদ।
মঞ্চে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর পথচলা ২৫ বছরের। এই সময়ে তিনি একাধিকবার আরণ্যকের হয়ে দেশ–বিদেশে নাট্যোৎসবে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে চঞ্চলের কাছে এবারের দিনগুলো স্মরণীয়। ‘রাঢ়াঙ’ দিয়েই এই প্রাপ্তি।
চঞ্চল বলেন, ‘এবার যে শোগুলো করেছি, সেখানে প্রতিটি শো আলাদা অভিজ্ঞতা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দলগুলো এখানে এলেই শো হাউসফুল হয়। কিন্তু এবার রাঢ়াঙ নিয়ে দর্শকদের যে উচ্ছ্বাস, সেটা দেশের দর্শকদের মধ্যেও দেখিনি। শত শত মানুষ রাস্তায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ১৫ দিন আগে টিকিট শেষ। আমার টোটাল লাইফে থিয়েটার নিয়ে এমন উন্মাদনা দেখিনি। এই শক্তিকে কীভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি, সেটাই ভাবছিলাম।’ চঞ্চল মনে করেন, বাংলাদেশের দর্শকদের এভাবে মঞ্চমুখী করা দরকার। তাহলে ঠিকমতো মঞ্চনাটক বেঁচে থাকবে। আর মঞ্চনাটক বেঁচে থাকলে অভিনয়শিল্পী তৈরি হবে। তখনই মিডিয়া শক্ত হবে। তিনি বলেন, ‘অভিনয়শিল্পী তৈরির জন্য আমাদের থিয়েটারটা এখনো গুরুত্বপূর্ণ।’