জাতীয় নাট্যশালায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অচলায়তন’, মঞ্চায়নে প্রাচ্যনাট
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় প্রাচ্যনাটের নতুন নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অচলায়তন’। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের প্রণোদনায় প্রাচ্যনাটের ৪২তম প্রযোজনা এটি। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। আজও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে মঞ্চস্থ হবে নাটকটি।
প্রাচ্যনাটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাটকের গল্পটি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, ‘বহুদিন ধরে চলে আসা প্রথাকে কঠোর নিয়মের আবদ্ধে পালন করতে গিয়ে সময়ের আবর্তনে অচলায়তন বিদ্যায়তনের কোনো পরিবর্তন হয় না। এখানকার বিদ্যার্থীরাও কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবতীয় নিয়ম ও অনুশাসন মেনে চলে।
অচলায়তনের বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই, এমনকি যোগাযোগ করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ পাওয়াটাও তাদের জন্য “মহাপাপ”-এর নামান্তর! এই বিদ্যায়তনের দুই শিক্ষার্থী—পঞ্চক ও মহাপঞ্চক। তারা আপন ভাই হলেও তাদের জীবনদর্শন বিপরীত। পঞ্চক বিদ্রোহী মনোভাবসম্পন্ন, যে সব গতানুগতিকতাকে প্রশ্ন করে এবং অচলায়তনের নিয়মতান্ত্রিকতার ত্রুটিগুলোকে চিহ্নিত করে।
অপর দিকে মহাপঞ্চক গতানুগতিক চিন্তাপ্রবাহে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এবং বিদ্যায়তনের সব নিয়মকেই বিনা প্রশ্নে অনুসরণ করে। এই দুই ব্যক্তির মধ্যকার যে ইচ্ছার দ্বন্দ্ব, তা আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশিত হয়, যখন অচলায়তনে একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু নিয়মতান্ত্রিকতাকে অটুট রাখার স্বার্থে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে থাকে। এরই মধ্যে প্রেক্ষাপটে উপস্থিত হন গুরু বা দাদাঠাকুর এবং বাইরের বাস্তব জগৎ ও সেই জগতের মানুষদের সঙ্গে অচলায়তনের বিদ্যার্থীদের পরিচয় ঘটে প্রায় যুদ্ধের ডামাডোলের ভেতর। পুরোনো চিন্তার প্রাচীন দেয়াল ভেঙে পড়ে আর শুরু হয় নতুনের স্পন্দন।’
নির্দেশকের ভাষায়, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্ব নাটক, ‘প্রতীকী নাটক নিয়ে বড় বড় সমালোচকের যে অস্পষ্টতার অভিযোগ, তাকে খণ্ডন করে আমাদের অচলায়তন মঞ্চায়নের প্রয়াস স্পষ্ট এবং প্রতীকের ব্যবহার যথার্থ রূপে প্রকাশের ইচ্ছা কেবল। অচলায়তন বিদ্যাপীঠকে আমরা কল্পনা করেছি একটি বালিকা বা নারী শিক্ষাগৃহ হিসেবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই বিদ্যায়তনের সব নিয়মকানুন এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে বাইরের পৃথিবীর আলো-বাতাস বা মুক্তি চিন্তা কোনোভাবেই কোনো বিদ্যার্থীর ভাবনায়, মননে স্থান না পায়। এখানে কাজের গতি মন্থর এবং যন্ত্রবৎ, যেন দম দেওয়া পুতুল সবাই। ঠিক উল্টো চিত্র অচলায়তনের বাইরের জগৎ, সেখানে কর্মমুখর সাধারণ মানুষ গতিশীল। কখনো জীবন গতির চেয়ে এক ধাপ আগানো তাদের চলন।’
নাটকের মঞ্চ ও আলো মো. সাইফুল ইসলাম, সংগীত ভাবনা ও প্রয়োগ নীল কামরুল, কোরিওগ্রাফি স্নাতা শাহরিন এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন আফসান আনোয়ার।