যাত্রা, নাটক, কাওয়ালি থেকে সাধু মেলা, কী নেই ডিসেম্বরে
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এই আয়োজনগুলো রাজধানীর সমান্তরালে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে। গত বুধবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্যগুলো জানানো হয়।
ডিসেম্বরে থাকবে যাত্রা উৎসব থেকে শুরু করে যন্ত্রসংগীত উৎসব, গণ-অভ্যুত্থানের গান, নাট্য প্রদর্শনী, সাধু মেলা, কাওয়ালি, জুলাই অভ্যুত্থানের পারফরম্যান্স, মাল্টিমিডিয়া ভিআর প্রদর্শনী, বিভিন্ন জেলায় ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিজয় দিবস উদ্যাপন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের স্মরণানুষ্ঠান, ভাস্কর্য প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন।
মাসব্যাপী এই বিশেষ আয়োজনে আরও থাকবে পোশাকশ্রমিকদের পরিবেশনা। এসবের সঙ্গে থাকছে আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ, পাক্ষিক বাহাস সিরিজ, পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান, নতুন ওয়েব জার্নাল প্রকাশসহ নানা কার্যক্রম। শিল্পচর্চায় নতুনত্বের সন্ধান এবং একে গণমুখী করে তোলার লক্ষ্যে এই বিশদ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ের মাসে নেওয়া বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতিকে আমরা সমাজের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চাই। গণমুখী শিল্প সৃষ্টির পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। শিল্পের আশ্রয়ে নতুন চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাই। পাশাপাশি বাহাসের মাধ্যমে যেকোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই। সাধারণ মানুষকে সঙ্গী করে নতুন বাংলাদেশের পথপরিক্রমা তৈরি করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পকলার মহাপরিচালক বলেন, ‘শিল্পকলা কোনো কালোতালিকা করেনি। শিল্পকলা চায় সবার অংশগ্রহণ। কিন্তু যারা জুলাই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেনি, তাদের কারও কারও প্রতি মানুষের ঘৃণা রয়েছে।’ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে বিবৃতি দেওয়ার কথাও অনেকে ভোলেননি উল্লেখ করে জামিল আহমেদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সামনে এলে রোষের মুখে পড়তে পারেন এবং অপ্রীতিকর অবস্থা হতে পারে। তাই তাঁদের আপাতত কিছুটা আড়ালে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’
এ সময় জামিল আহমেদ জানান, শিল্পকলা একাডেমি থেকে চলচ্চিত্র বিভাগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। তাই একাডেমিতে চলচ্চিত্রবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ বিভাগ থাকবে।
ডিসেম্বর মাসের কর্মসূচি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিস্তৃত এই কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের চাঁদনী ঘাটে কাওয়ালি সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকার সমীর কাওয়াল ও তাঁর দল এবং স্থানীয় কাওয়ালি শিল্পীরা।
আজ শুক্রবার গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠে অনুষ্ঠিত হবে হবে ‘গণ-অভ্যুত্থানের গান’। এ আয়োজনে থাকবে পোশাকশ্রমিক শিল্পীদের পরিবেশনা।
একই দিনে নেত্রকোনার বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি মিলনায়তনে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, ছবির হাট, বটতলা ও হাকিম চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ‘শোন মহাজন আমরা অনেকজন’ শীর্ষক গণ-অভ্যুত্থানের পারফরম্যান্স। শনি ও রোববার জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বিভাগীয় শহর সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে।
৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর একাডেমির চিত্রশালা ভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে উপজীব্য করে গ্রাফিতি–বিষয়ক ‘জুলাই ২০২৪’ শীর্ষক নকশিকাঁথা তৈরির কর্মশালার আয়োজন করা হবে। ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে ফিল্ম অ্যাপ্রোসিয়েশন কোর্স। এ ছাড়া ৯ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে গৃহশ্রমিক, পোশাকশ্রমিক ও রিকশাচালকদের আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
১৩ ডিসেম্বর নাট্যদল দেশনাটকের নিত্যপুরাণ, যশোরের বিবর্তনের মাতব্রিং নাটক দুটি মঞ্চস্থ হবে কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। ১৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর বরগুনার মহিষকাটায় এবং ১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর খুলনায় যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদ্যাপন করা হবে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে। ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভিআর গ্যালারির উদ্বোধন করা হবে। ষষ্ঠ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীর ৩৬০ ডিগ্রি মাল্টিমিডিয়া ভিআর প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই গ্যালারির উদ্বোধন হবে।
এ ছাড়া ডিসেম্বরের বিভিন্ন দিনে ঠাকুরগাঁও, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নাট্য প্রদর্শনী, ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সাধু মেলা, ভাওয়াইয়া গানের আসর, হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।