আজ সন্ধ্যায় প্রেমপত্র পাঠ

লাভ লেটার্স নাটকে পাঠাভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার। গতকাল বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ছিল নাটকটির চূড়ান্ত মহড়া
ছবি: খালেদ সরকার

প্রেমের চিঠিগুলো পড়া হবে আজ সন্ধ্যায়। ই-মেইল আর খুদে বার্তার এই জমানা চিঠির শিহরণ-জাগানো যুগের ইতি ঘটিয়েছে। চিঠির সঙ্গে একসময় মিশে ছিল রোমান্টিক মনের আকুতি। যুগ গেছে। তবু প্রেমের চিঠি পেতে কার না এখনো আকাঙ্ক্ষা জাগে!

অনন্ত শাহেদ চৌধুরী আর মাইশা ইসলাম আজ বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে পড়ে শোনাবে চিঠি। ছবি, ঈদকার্ড আর নববর্ষের শুভেচ্ছাপত্রে তাদের প্রেমের ইশারাভরা লেখা। আর পুরোনো প্রেমের স্মৃতি বহন করা প্রৌঢ় এই চরিত্র দুটি মঞ্চে রূপ দেবেন বরেণ্য নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। সহকারী হিসেবে থাকবেন রবিন বসাক ও নাজমুন নাহার। আবদুস সেলিমের অনুবাদে মার্কিন নাট্যকার এ আর গার্নির লাভ লেটার্স-এর পাঠাভিনয়ে বহুদিন পর আজ মঞ্চে উঠবেন এই দুই নাট্যকুশলী। ত্রপা মজুমদারের নির্দেশনায় এটি থিয়েটারের ৪৮তম প্রযোজনা।

অনন্ত আর মাইশার এখন বিগতযৌবন। কী ছিল তাদের প্রেমপত্রে? চূড়ান্ত কোনো কথা নয়, শেষ কথা বলেও কিছু নয়। শুরুতে ছিল গোপনীয়তা, শেষেও যে গোপনীয়তা ভাঙে না। নিজেদের কাছে তারা বহুকাল গোপন রেখেছে এই প্রেম। আভাসে প্রকাশ পেয়েছে পরস্পরের কাছে লেখা অজস্র চিরকুটে। নিজেরাই আজ সেসব পড়ে তুলে ধরবেন প্রেমের শাশ্বত সৌন্দর্য।

একসময়ের ধীরস্থির তরুণ ব্যারিস্টার বীর মুক্তিযোদ্ধা অনন্ত এখন প্রবীণ ও প্রভাবশালী মন্ত্রী। দায়িত্বশীল স্বামী ও দুই পুত্রের পিতা। মাইশাও ছিল প্রাণবন্ত এক তরুণী। বাড়ির লনে টেনিস খেলতে দেখে প্রথম দেখায় অনন্তের তাকে মনে হয়েছিল রক্তমাংসের রাজকন্যা। স্বভাবে অনন্তের বিপরীত। খরস্রোতা নদীর মতো, সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বিত্তেও অনন্তের চেয়ে ঢের ওপরে। তবু নৈকট্য গড়ে উঠল তাদের, প্রথম দর্শন থেকেই।

নাটকের শেষ দৃশ্যে রামেন্দু মজুমদার–ফেরদৌসী মজুমদার জুটি
প্রথম আলো

গড়িয়ে যেতে লাগল বছরের পর বছর। অনন্তের ভালো লাগত মাইশাকে চিঠি লিখতে। মাইশাও আগ্রহ নিয়ে পড়ত। তার আগ্রহ লেখায় নয়, ছবি আঁকায়। চিঠির জবাবে মাইশা তাই এঁকে পাঠায় ছবি। একসময় অনন্ত পড়তে গেল ক্যাডেট কলেজে। মাইশা ভর্তি হলো কনভেন্ট স্কুলে। কলেজ শেষে অনন্ত বিলেতে গেল ব্যারিস্টারি পড়তে। দেশে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। লন্ডন থেকে এসে সরাসরি সে যুক্ত হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধে।

এদিকে স্কুল শেষে মাইশা ভর্তি হলো আর্ট কলেজে। সেখান থেকে উড়াল দিল প্যারিসে। দেখাশোনায় ছেদ পড়ল তাদের, তবে পত্রবিনিময়ে নয়। সেসব চিঠিতে কীভাবে বিস্ফোরিত হচ্ছে মানবহৃদয়, তা দেখতে হলে আজ সন্ধ্যা সাতটায় আসতে হবে মহিলা সমিতিতে থিয়েটারের প্রযোজনা এই প্রেমপত্রগুচ্ছের পাঠাভিনয়ে। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুটি পাঠাভিনয় হবে এ নাটকের। এর আগে বহু দেশে, বহু ভাষায় জনপ্রিয় এই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এর চূড়ান্ত মহড়া হলো মঞ্চে। নির্দেশক ত্রপা মজুমদার প্রথম আলোকে জানান, ২০১৭ সালে আবদুস সেলিম নাটকটি পড়ে শুনিয়েছিলেন প্রয়াত যশস্বী অভিনেতা আলী যাকেরকে। আলী যাকের তখন কর্কট রোগে আক্রান্ত। পাঠাভিনয়ে কায়িক শ্রম নেই বলে এমন একটি নাটকে তাঁকে মঞ্চে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, দেশের মঞ্চের দুই অনন্য মঞ্চকুশলী আলী যাকের আর ফেরদৌসী মজুমদার এতে অংশ নেবেন। উদ্যোগ নেওয়ার পরও আলী যাকের মহড়ায় আসতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি নিজেই রামেন্দু মজুমদারকে নিয়ে এর মহড়া শুরু করতে অনুরোধ করেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেই তিনি মহড়ায় এসে যোগ দেবেন। কিন্তু ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন। আলী যাকেরকে উৎসর্গ করেই মঞ্চস্থ হচ্ছে নাটকটি।

দুই বিপরীত স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মানব-মানবীর অনুরাগ, তাদের জীবনযাত্রা, দেশের সামাজিক পরিস্থিতি এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবময় ইতিহাসপর্বের বয়ানসহ মনোলোকের নানা আবছায়া উঠে এসেছে পাঁচ পর্বে প্রায় এক ঘণ্টার এই অভিনব আঙ্গিকের নাটকে।

তবে দর্শকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হবে রামেন্দু-ফেরদৌসী জুটিকে একত্রে মঞ্চে পাওয়া। নাট্যামোদীদের কাছে তা একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুত হয়ে অপেক্ষা করছে।