শুরু হয়েছে ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’, আজ চারটি নাটকসহ আরও যা থাকছে
এক সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবদুল্লাহ আল-মামুন ১৯৯৫ সালে লিখেছিলেন মঞ্চনাটক ‘মেরাজ ফকিরের মা’। নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে। জন্মের ৩৯ বছর পর আকস্মিকভাবে সে জানতে পারে, তার গর্ভধারিণী মায়ের ধর্ম আর তার ধর্ম এক নয়। ধর্ম পরিচয়ে যে ফারাক রচিত হয়, তা কি মা-ছেলের সম্পর্কে ফারাক তৈরি করে দিতে পারে? ধর্মের ভিন্নতার কারণে ছেলে কি অস্বীকার করতে পারে তার মাকে? মানবিক সম্পর্ক আর বাহ্যিক আচারসর্বস্ব সম্পর্ক—দুইয়ের মধ্যে কোনটির সঙ্গে রয়েছে নাড়িছেঁড়া টান? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এবং মানবের স্বরূপ প্রকাশের চেষ্টা হয়েছে নাটকটিতে।
গতকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এই নাটকের মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’। মূলত বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা মিলিত হন উৎসবে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শুক্রবার সন্ধ্যায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে ১২ দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকা ব্যক্তিত্ব অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ। উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্যসচিব আকতারুজ্জামান। বক্তারা উৎসবের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল নাটক। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এদিন মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার প্রযোজনা ‘মেরাজ ফকিরের মা’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ছিল বাতিঘরের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’। একই সময় স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় একতা নাট্যগোষ্ঠীর ‘১৯৭১’ নাটকটি। উৎসবের শেষ দিন পর্যন্ত এই তিন মঞ্চে একই সঙ্গে নাটক মঞ্চস্থ হবে। শিল্পকলা একাডেমির বাইরে মহিলা সমিতিতেও উৎসবের নাটক মঞ্চস্থ হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের ৪৫টি নাট্যদলের নাটক দেখা যাবে উৎসবে। ভারতের থাকছে ছয়টি প্রযোজনা।
পাশাপাশি একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে নৃত্যনাট্য, গীতিআলেখ্য ও আবৃত্তি প্রযোজনা। প্রতিদিন বিকেলে গান, কবিতা ও নৃত্যের আয়োজন থাকবে একাডেমির মুক্তমঞ্চে। সংগীতের জন্য জাতীয় নাট্যশালার বাইরে উন্মুক্ত মঞ্চ করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিনই থাকবে সংগীতায়োজন। কবিতাসহ সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি আয়োজন থাকবে মিলনায়তনে।
আয়োজকেরা জানান, উৎসবে বাংলাদেশ ও ভারতের ১১২টি সাংস্কৃতিক দল অংশ নেবে। শিল্পের নানা শাখার প্রায় চার হাজার শিল্পী অংশ নেবেন বিভিন্ন পরিবেশনায়। আজ শনিবার উন্মুক্ত মঞ্চের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে বিকেল চারটায়। উন্মুক্ত মঞ্চে পরিবেশনা করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পথনাটক ‘ঠিকানা’। শিশু সংগঠন—গেন্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচার মেলা। দলীয় আবৃত্তি—স্বর ব্যঞ্জন ও প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। দলীয় সংগীত—উজান ও মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি। দলীয় নৃত্য—বহ্নিশিখা। জাতীয় সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনের অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা সাতটায়।
অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে কথক নৃত্য সম্প্রদায় প্রযোজনা নৃত্যনাট্য ‘জেনির কার্ল’ এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী প্রযোজনা গীতিআলেখ্য ‘৭২–এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই’। জাতীয় নাট্যশালায় সংস্তব (ভারত) মঞ্চস্থ করবে ‘উড়ন্ত তারাদের ছায়া’। নাটকটি লেখা ও নির্দেশনায় দেবাশীষ রায়। পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘নানকার পালা’। আবদুল্লাহ আল–মামুনের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়েজ জহির। স্টুডিও থিয়েটারে রয়েছে বগুড়ার সংসপ্তক থিয়েটারের ‘ভাগীরথীর ভাগ্যরথ’। এটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন রাজা ফকির। এ ছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে রয়েছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘শিখণ্ডী কথা’। আনন জামানের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন রশীদ হারুন।