সেদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেঁদেছিলেন ফারুক আহমেদ
শীতের রাত। গ্রামের মাঠে যাত্রা হবে। সারা দিন পরিকল্পনা হলো, সন্ধ্যা নামলে বড় ভাইদের সঙ্গে যাত্রা দেখতে যাবেন। কিন্তু সন্ধ্যায় শুনলেন, বড়রা কেউ যাবেন না। মনটা ভেঙে যায় কিশোর ফারুক আহমেদের। রীতিমতো কান্না। যাত্রা দেখতে না পারার কষ্টে সেদিন মধ্যরাত পর্যন্ত কেঁদেছিলেন। তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এই অভিনেতা। পরে অবশ্য আরও বড় হয়ে ফারুক আহমেদ বেশ কয়েকবার যাত্রাপালা দেখেছেন। যাত্রা দেখে তাঁর খুব ইচ্ছা হয়, মুখে রংচং মেখে অভিনয় করবেন।
স্কুলে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়ে একসময় মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে থিয়েটারে নাম লেখান। হয়ে ওঠেন ভক্তদের কাছে অভিনেতা ফারুক।
তারপর কেটে গেছে চার দশকের বেশি। কিন্তু যাত্রায় আর অভিনয়ের সুযোগ হয়নি। এবার সেই সুযোগ পেয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যাত্রাটা শৈশব থেকে আমার মধ্যে মিশে আছে। আমাদের গ্রামের বাড়ি হরিরামপুর। সেখানে অনেক সাংস্কৃতিক আবহ ছিল। নিয়মিত যাত্রা হতো। তার মধ্যে বেড়ে উঠেছি। এখনো চোখের সামনে সেই যাত্রার দিনগুলো ভাসে। সেই যাত্রায় এবার অভিনয় করতে এসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি বারবার।’
ফারুক আহমেদ অভিনয় করবেন ‘প্রেয়সী আনারকলি’ যাত্রায়। তাঁর চরিত্রের নাম বীরবল। বেশ কদিন ধরেই তিনি ঢাকা থেকে গিয়ে অনুশীলন করছেন। একাধিকবার গিয়েছেন মানিকগঞ্জে।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যাত্রার শিল্পীরাও থাকবেন। এর মধ্যে বেশ কজন আমরা ঢাকা থেকে অভিনয় করছি। আগে লুকিয়ে যাত্রাশিল্পীদের মেকআপ নেওয়া দেখতাম, রংচং মাখা দেখে অন্য এক রঙিন জগৎ মনে হতো। সেসব দিনের কথা মনে পড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর যাত্রা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। এটা আমাদের আদি ফর্ম। সব মিলিয়ে অন্য রকম মনে হচ্ছে। আমি সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ। ৫০ বছর আগের একটি শখ পূরণ করতে পারছি, এটা ভেবে ভালো লাগছে।’
‘প্রেয়সী আনারকলি’ পালাটি লিখেছেন কলকাতার প্রসাদ কৃষ্ণ। নির্দেশনা দিচ্ছেন পরিতোষ কুমার সাহা। পালায় সেলিম চরিত্রে অভিনয় করবেন আলী মুরতজা পলাশ ও নামভূমিকায় আনারকলি চরিত্রে অভিনয় করবেন পূরবী দত্ত। আজ শুক্রবার রাত আটটায় মানিকগঞ্জের শিবালয়ে যাত্রাটি মঞ্চস্থ হবে।