প্রতিবাদ সমাবেশে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি
অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে চলছে বিতর্ক। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবু নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। এমনকি যাঁরা নতুন কমিটির কথা বলছেন, তাঁদেরও বিভিন্নভাবে হেয় করছে এই কমিটি। একের পর এক অবৈধ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তনে লাইট, সাউন্ডসহ নানাবিধ কারিগরি ও পরিবেশগত সমস্যা রয়েছে। এসব অভিযোগ জানিয়ে ‘সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ' নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আজ শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ‘স্বেচ্ছাচারিতা, অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ কার্যক্রম’ এবং ৬৭ নাট্যজনকে ‘কদর্য ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণের’ জবাবে নাট্যকর্মীদের এই প্রতিবাদ সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন তাঁরা।
সমাবেশে জানানো হয়, এই ফেডারেশনের সাবেক চার সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, ম. হামিদ ও সারা যাকেরও দ্রুত এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠান বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকীকে। সেই চিঠির উত্তর দেওয়া হলেও তাতে চিঠিদাতাদের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়। এরপর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এই সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে ৬৭ নাট্যজন একটি বিবৃতি দেন।
বিবৃতির প্রেক্ষিতে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চরম অশালীন ও কদর্য ভাষায় শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বিবৃতি দেওয়া হয়।
শুক্রবার বিকেলের সমাবেশে অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, শুধু এই সংকট নয়, নাটকের দর্শক বাড়ানোর কোনো চেষ্টাই নেই এই কমিটির। উল্টো কীভাবে নাটকের দর্শক কমানো যায়, তার দিকে নজর তাদের। শিল্পকলার মাঠে অর্থের বিনিময়ে অথবা বিনা মূল্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেলার অনুমতি দিয়ে আসছে তারা। এতে করে যাঁরা নাটক দেখতে আসেন, বাইরের শব্দের কারণে তাঁদের আরও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই ফেডারেশনের কাজ নাট্যাঙ্গনের উন্নয়ন করা কিন্তু তারা করছে তার বিপরীত কাজ।
সমাবেশে বলা হয়, চলমান সংকট দূরীকরণে লিয়াকত আলী লাকীকে আলোচনার জন্য বারবার আমন্ত্রণ জানালেও তিনি তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি শুধু অভিযোগ করে যাচ্ছেন, কামাল বায়েজীদের ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার অর্থ জালিয়াতির কথা। এ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘এই অভিযোগের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। এতে যদি কামাল বায়েজীদ দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে ফেডারেশন যথাযথ শাস্তি দিক।’ বক্তব্যে তিনি জানান, কামাল বায়েজীদ দোষী হলে ঢাকা থিয়েটারও তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। এই সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীকে এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
প্রতিবাদ সমাবেশে দেওয়া ৯ দফা দাবির মধ্যে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ আরও দাবির মধ্যে আছে—বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সারা দেশে ১৭ থেকে ২৩ জুনের প্রতিবাদ সমাবেশের যে ডাক দিয়েছে তা প্রত্যাহার করা; বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, ম. হামিদ ও সারা যাকেরের চিঠির উত্তরে যে বিভ্রান্তিকর চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং ৬৭ নাট্যজনকে অশালীন ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করা; ব্যক্তিস্বার্থে বারবার ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন না করা; অভিযোগ ওঠা আর্থিক অনিয়মের তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা; দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নাট্যজনদের সমন্বয়ে নতুন করে হল বরাদ্দ কমিটি গঠন করা ইত্যাদি।
এই প্রতিবাদ সভা থেকে জানানো হয়, এসব দাবি অবিলম্বে পূরণ করা না হলে নাট্যকর্মীরা একটি নাট্য ঐক্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার উদ্যোগ নেবেন। প্রতিবাদ সমাবেশে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা বিভাজন চাই না, এক হয়ে নাট্যাঙ্গনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তাই প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে এই নেতৃত্ব গঠন করা হোক।’
এই প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সারা যাকের সংহতি প্রকাশ করে মুঠোফোনে বক্তব্য দেন এবং রামেন্দু মজুমদার লিখিত বিবৃতি পাঠান। চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নাট্যকর্মীরা এসেছেন এই সমাবেশে। এ ছাড়া বিবৃতি প্রদানকারী ৬৭ জনের অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন।