'২৫৭ টাকা হাতে নিয়ে ঢাকা এসেছিলাম'
২০১৭ সালের জন্য শাকিব খানের সঙ্গে যৌথভাবে সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আরিফিন শুভ। এবারই প্রথম পেয়েছেন এই পুরস্কার। আজ ৮ ডিসেম্বর দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন তিনি। পাশাপাশি ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির প্রথম পোস্টার লুক প্রকাশিত হয়েছে। দর্শক আলোচনায় আছে পোস্টারটি। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আরিফিন শুভ।
অভিনন্দন। প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অনুভূতি কেমন?
রোমাঞ্চিত আমি। কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার কাছে। কৃতজ্ঞ ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির পুরো টিমের কাছে, দর্শকের কাছে। তবে এখানে একটা কথা বলতে চাই, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবি যে আমার জীবনের সেরা অভিনীত ছবি, সেই মানদণ্ডে যাব না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে সেরা অভিনয় করেছেন তাসকিন রহমান। এই স্বীকৃতি তাসকিনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাইব। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে অভিনয় করে আমি যদি শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের পুরস্কার পাই, তাহলে তাসকিনেরও পাওয়া উচিত। কারণ, আমি এ পর্যন্ত ২৩ থেকে ২৪টি ছবিতে কাজ করেছি। কিছুটা হলেও অভিনয় বোঝার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।
শাকিব খানের সঙ্গে যৌথভাবে এ পুরস্কার পেয়েছেন। কীভাবে দেখেন?
বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। আমি খুবই ভাগ্যবান যে শাকিব খানের মতো একজন অভিনেতার সঙ্গে আমাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ইতিহাসে যাঁদের নাম লেখা থাকবে, তাঁদের একজন শাকিব খান। তাঁর সঙ্গে জাতীয় স্বীকৃত পাওয়াকে আমি খুবই সম্মানের সঙ্গে দেখছি।
প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই স্বীকৃতি নেবেন। নিশ্চয়ই আনন্দের?
অবশ্যই। আমি একজন বাংলাদেশি। সেই দেশের প্রধানের কাছ থেকে আমি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার গ্রহণ করব, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী আছে! তবে এই পুরস্কার নেওয়ার দৃশ্য যখন ভাবছি, তখন আমার সেই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসার জার্নিটা চোখে ভেসে উঠছে। ২৫৭ টাকা হাতে নিয়ে ঢাকা এসেছিলাম। এসে দেশপ্রধানের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করব, কোনো দিন ভাবিনি।
‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির প্রথম পোস্টার লুক এসেছে। সবাই কীভাবে নিয়েছেন?
আমার ঠোঁট কাটা স্বভাব। অপ্রিয় হলেও সত্য কথাটা সব সময় বলে ফেলি। সিনেমার অনেক পোস্টারের বিষয়ে গলাকাটা ফটোশপের বিষয়টি চিরকালই অভাগা কিছু দর্শক বলে আসছেন। ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর পোস্টারের সবকিছুই যে আসল, তা অনেক হতভাগা দর্শক বিশ্বাস করতে চাইছেন না। আমাদের ছবিকেও পোস্টারে গলাকাটা ফটোশপ বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি চরিত্রের জন্য ছবির প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পীকে এভাবে নিজেকে ভাঙতে দেখিনি। বাজি ধরতে পারি, চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যদি কেউ একটি চরিত্রের জন্য এভাবে সময় দিয়ে নিজেকে ভাঙতে পেরেছেন, আমি চলচ্চিত্র ছেড়ে দেব। নিজের শারীরিক পরিবর্তন এভাবে কেউ করেননি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটি অনেকই বিশ্বাস করছেন না, মানছেন না। তবে বিশ্বাস করবেন টিজার, ট্রেলার আসার পর। ছবি মুক্তির আগে আমার ১১ মাসের প্রস্তুতির শারীরিক পরিবর্তনের ভিডিও প্রকাশ করা হবে। তখন আমার পুরো পরিবর্তন দেখতে পাবেন সবাই। আমার রুটিন, ডায়েট, শরীরচর্চা, কত দিন লেগেছে চরিত্রের প্রস্তুতি—সবকিছুই ওই ভিডিওতে দেখা যাবে। তাই পোস্টারের প্রথম লুক নিয়ে একদিকে আনন্দ পাচ্ছি, অন্যদিকেও দুঃখও পাচ্ছি।
আপনার কি মনে হয় ‘ঢাকা অ্যাটাক’ থেকে ‘মিশন এক্সট্রিম’ এগিয়ে যেতে পারে?
এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সময়ই বলে দেবে। এটা ঠিক যে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির চেয়ে অনেক বেশি সময় দিয়েছি, কষ্ট করেছি ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিতে। কিন্তু এই সিনেমা যে এগিয়ে যাবে, তা বলা কঠিন। কারণ, সিনেমা হিট-ফ্লপ একটি অনিশ্চিত বিষয়। মুক্তির আগে কেউই সঠিকভাবে তা বলতে পারেন না।
এই ছবি নিয়ে পরবর্তী আয়োজন কী?
ছবির ১০ ভাগ কাজ এখনো বাকি আছে। জানুয়ারিতে কাজ শেষ হবে। এরপর আরও কয়েকটি লুকের পোস্টার বের হবে। মুক্তির আগে আগে ট্রেলার, টিজার ও গানগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। প্রচারের পরিকল্পনাও সাজানো হয়ে গেছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে ঈদ উৎসবে শুধু শাকিব খানের ছবিই মুক্তি পেয়েছে। আগামী ঈদে শাকিব খানের ছবির সঙ্গে অন্য তারকাদেরও বড় বাজেটের বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পাবে। সিনেমার জন্য আগামী ঈদটা কেমন হবে বলে মনে করছেন?
আমার কাছে মনে হয়, আগামী ঈদটা অনেক দিন পর দর্শকের জন্য কাছে আনন্দঘন হবে, মজার হবে। একটা আনন্দমেলা হবে। বড় বড়, ভালো কিছু ছবি একসঙ্গে মুক্তির প্রক্রিয়ায় আছে। এবার দর্শকের জন্য ছবি দেখার অপশন থাকবে। যে ছবিতে মেরিট পাবেন, দর্শক সেই ছবি উপভোগ করবেন।
আপনার অভিনীত কলকাতার ছবি ‘আহারে’ ৮ ডিসেম্বর কলকাতার জি বাংলায় প্রচারিত হবে। দেখবেন কি?
কলকাতার কোনো জাতীয় চ্যানেলে প্রথম আমার কোনো ছবি প্রচারিত হবে। এই ছবি আমার প্রাণের ছবি, কাছের ছবি। দেখার ইচ্ছা থাকলেও হয়তো পুরোটা দেখতে পারব না। কারণ, এ সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করব।