২৩ বছর পর বাবার হত্যাকারী গ্রেপ্তার, কী বললেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মেয়ে
২৩ বছর পর চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ঘটনায় আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের খবরটি গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই আলোচনায় আসে। আজ বুধবার সকাল থেকে পরিচিতজনেরা একের পর এক ফোন করতে থাকেন তাঁর মেয়ে লামিয়া চৌধুরীকে। এভাবে তিনি জানতে পারেন, তাঁর বাবার হত্যাকারী গ্রেপ্তারের খবরটি।
পরিচিতজনদের কাছ থেকে বাবা সোহেল চৌধুরীর হত্যাকারী গ্রেপ্তারের খবর জানতে পারলেও এটি নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি নন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে আজ দুপুরে তিনি শুধু এটুকুই বললেন, ‘এত বছর পর আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, দেখলাম। দেখতে চাই কী হয়। আই ক্যানট শেয়ারিং এনিথিং অ্যাট দ্য মোমেন্ট। সরি অ্যাবাউট দ্যাট। কিছুই বলার নাই, দেখছি কী হচ্ছে। অনেক বছর পর আসামি গ্রেপ্তার করছে তারা, দেখি কী হয়।’
গতকাল রাত ১১টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে আশীষ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১ নম্বর আসামি। তিনি একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন পদে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ছিলেন।
১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের পর আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করেন এবং এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন। গত ২৪ মার্চ এ মামলায় আদালতে হাজিরা দেন জামিনে থাকা আসামি ফারুক আব্বাসী। জামিনে থাকা অপর আসামি আদনান সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে হাজিরার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করেন আদালত। এ ছাড়া কারাগারে থাকা আসামি তারিক সাঈদ মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে পলাতক রয়েছেন আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই, সানজিদুল হাসান, সেলিম খান ও হারুন অর রশিদ। তাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে দিতি ও সোহেল চৌধুরী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরিচালক এফ কবীর চৌধুরী ‘পর্বত’ নামের চলচ্চিত্রে সোহেল চৌধুরী ও দিতিকে নিয়ে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্রে দুজনের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। পরের বছর ১৯৮৫ সালে আমজাদ হোসেনের ‘হীরামতি’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন সোহেল চৌধুরী ও দিতি। ওই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েই প্রেমে পড়েন দুজন। এরপরই বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী আর ১৯৮৯ সালে জন্ম নেয় ছেলে দীপ্ত।