‘১৬ দিন ধরে আইসিইউতে। ১৪ দিনে আব্বু কোনো কথা বলেননি। হালকা–পাতলা হাত–পা নাড়াচ্ছেন কিন্তু কোনো কথাই বলছেন না। চোখ মেলেও তাকাচ্ছেন না। আব্বু অচেতন হয়ে আছেন।’ কথাগুলো বরেণ্যে অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের ছেলের। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বাবার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে এসব বলেন তাঁরই ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ।
সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে কয়েক দিন ধরেই ফারুকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো খবর মিলছিল না। সাধারণত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার শুরুতে শারীরিক খবরাখবর জানাতেন। অবশেষে তাঁদের পরিবারের খোঁজ মিলল। শরৎ জানান, তাঁর বাবা ২১ তারিখ থেকে আবার আইসিইউতে ভর্তি। একদম অচেতন। কোনো কথা বলছেন না। চোখ মেলে তাকাচ্ছেনও না। ভীষণ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে ফারুকের পরিবারে।
শরৎ বললেন, ‘মার্চের ১৬ তারিখে আব্বুর একটা খিঁচুনি হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আবার খিঁচুনি হয়। এরপর তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। একটা সময় চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করলে আব্বুর মস্তিষ্কে সমস্যা ধরা পড়েছে। এরপরও মোটামুটি একটু ভালো ছিল। মুভমেন্ট কম হলেও করত, কথা কম বলত। এ অবস্থায় ১৮ মার্চ আব্বুকে কেবিনে নেওয়া হয়। তিন দিন পর ২১ মার্চ থেকে আব্বু অচেতন হতে থাকেন। ২৩ মার্চ থেকে সেন্স পুরোপুরি চলে যায়। এরপর আর কোনো নড়াচড়া করেননি। রক্তচাপও কমে যায়। আবার তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এবার চিকিৎসকেরা আব্বুর মস্তিষ্কের নার্ভে এক ধরনের খারাপ জীবাণুর সন্ধান পান। একই সময়ে রক্তে দুটি সংক্রমণে খবরও পান। সেই থেকে এখনো আইসিইউতে। শেষ ১৪ দিনে কোনো কথা বলেননি আব্বু। আজ থেকে শরীরের ইন্টারনাল রক্তক্ষরণও হচ্ছে। অবস্থা সংকটাপন্ন। চিকিৎসকেরাও তাই বলছেন।’
কথায় কথায় শরৎ জানালেন, ফারুকের রক্তের সমস্যা দুটি নিয়ন্ত্রণে আছে বলা যায়। কিন্তু মস্তিষ্কের সমস্যার উন্নতি হচ্ছে খুব ধীরে। তাঁর একটা সমস্যা ঠিক করতেই আরেকটা ধরা পড়ছে বলেও জানালেন ছেলে। তবে কোনো অক্সিজেনের দরকার পড়ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে নিশ্বাস নিতে পারছেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান বরেণ্য অভিনেতা ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। পরীক্ষায় তাঁর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে নিজের পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
ফারুককে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন লাইয়ের তত্ত্বাবধানে। আট বছর ধরে সিঙ্গাপুরে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসছেন ফারুক।
গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন ফারুক। এরপর থেকে তিনি সুস্থই ছিলেন। চিকিৎসকেরা আগেই বলে দিয়েছিলেন, বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা থাকায় ফারুকের শরীর খারাপ হতে পারে। সে জন্য তিন মাস পরপর রুটিন চেকআপ করাতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সেই নিয়মিত পরীক্ষা করাতে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অবশেষে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্ত্রী ফারহানা পাঠানকে নিয়ে সেখানে যান তিনি।
প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রেখেছেন অভিনেতা ফারুক। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।