সিনেমা টিকে থাকে ভালো কাজের কারণে, প্রচারে নয়
সকাল সাতটায় ঘর ছাড়েন তৌকীর আহমেদ। স্ফুলিঙ্গ ছবির টুকটাক শট নেওয়া বাকি ছিল। সেসবের ফাঁকে সারা দিন বন্ধুবান্ধবের শুভেচ্ছা গ্রহণ করেছেন ফোন, মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপে। পর্দা আর ক্যামেরার মানুষ তৌকীর আহমেদের জন্মদিন ছিল কাল। একান্তে সময় কাটাতে এই দিনে ছুটি নেন অনেকে। কিন্তু জন্মদিনের সকালে অ্যাকশন–কাটে বেরিয়ে পড়েছিলেন এই নির্মাতা। কাজ দিয়েই শুরু হয় তাঁর জন্মদিন।
স্ত্রী বিপাশা হায়াত ও ছেলেমেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে। তবে মানসিকভাবে তাঁরা অনেক কাছেই থাকেন, মনে করেন তৌকীর। জন্মদিনের প্রথম প্রহরে স্ত্রী ও সন্তানেরাই প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘অনেক দিন হলো বিপাশা ও বাচ্চারা আমেরিকায়। রাত ১২টায় বিপাশা আমাকে উইশ করেছে। লোকমারফত রাতেই গিফট ও ফুল পাঠিয়েছে। রাতে বাচ্চাদের সঙ্গেও অনেকক্ষণ কথা বলেছি।’
তৌকীরের বিশ্বাস, জন্মদিনটা প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটি মাইলফলক। বিশেষ এই দিনকে ঘিরে আগামীর প্রত্যাশার কথাও বললেন তিনি। তৌকীর বলেন, ‘শুধু জন্মদিন নয়, প্রতিটি দিনেই মানুষের প্রত্যাশা থাকে। প্রতিটি দিনই মানুষকে ঋদ্ধ করে, প্রতিটি দিনই মানুষকে নতুন অভিজ্ঞতা দেয়। আমাদের প্রতিটি দিনই একটু একটু করে পরিপূর্ণ হয়। জন্মদিন জীবনের নিয়মেই আসে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়।’
প্রতিটি দিনই মানুষকে ঋদ্ধ করে, প্রতিটি দিনই মানুষকে নতুন অভিজ্ঞতা দেয়। আমাদের প্রতিটি দিনই একটু একটু করে পরিপূর্ণ হয়
স্ত্রী বিপাশা হায়াত ও ছেলেমেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে। তবে মানসিকভাবে তাঁরা অনেক কাছেই থাকেন, মনে করেন তৌকীর। জন্মদিনের প্রথম প্রহরে স্ত্রী ও সন্তানেরাই প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
স্ফুলিঙ্গ মুক্তির আগে এ ছবির একটি গান ‘লিখে দিলাম’ প্রকাশিত হয়েছে ইউটিউবে। দর্শক–শ্রোতারা বেশ পছন্দও করেছে এটি। তবে প্রচারকৌশলে কি পিছিয়ে পড়লেন তিনি?
এ ব্যাপারে তৌকীর বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রচারে দুর্বলতা আছে। বলতে পারেন, আমি বরাবরই প্রচারের ক্ষেত্রে আনস্মার্ট। আর এ ব্যাপারে আনস্মার্টই থাকতে চাই। এসব ব্যাপারে বেশি স্মার্ট হলে ভালো ছবি হয় না। আমার সব ছবির বেলায় এমনটিই হয়েছে। আমার ছবিগুলো কিন্তু কাজের মানে পিছিয়ে নেই।’ তৌকীরের কথা থেকে এটাই দাঁড়াল—একটি সিনেমা টিকে থাকে ভালো কাজের কারণে, প্রচারে নয়। কাজ যদি ভালো হয়, সেটি টিকে থাকবে। মানুষ খুঁজে ছবিটি দেখবেন বলে বিশ্বাস এই নির্মাতার।
১৯ মার্চ স্ফুলিঙ্গ মুক্তি পাচ্ছে। এই ছবি নিয়ে প্রত্যাশার কথা ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন তৌকীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এটি একটু অন্য ধরনের ছবি। বর্তমান তারুণ্যের চোখে ৭১ সালের তারুণ্যকে দেখানো। এ সময়ে বসে একজন দর্শক মুক্তিযুদ্ধের সময়কে খুঁজে পাবেন, যেখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সংগ্রামের কথাও উঠে এসেছে।’
ঢাকার চলচ্চিত্রে তৌকীর আহমেদকে একটু আলাদা করে দেখেন অনেকেই। বাজেট যত বড় হয়, ছবি তত ভালো হয়, এ ধারণা অনেকেরই। তৌকীরের বেশির ভাগ ছবির বাজেট কোটি টাকার নিচে, তাতে তাঁর ছবিগুলো ‘ভালো’ নয়, সে রকম কথা তেমন কাউকে বলতে শোনা যায়নি। এ ব্যাপারে তৌকীরের বক্তব্য হচ্ছে, আগে পরিকল্পনা, সততা ও কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। পরিকল্পনা করে একটানা শুটিং করলে স্বল্প সময়ে ভালো কাজ নামানো যায়। এতে কাজও ভালো হয়, বাজেটও কমে।
আপাতত আর কোনো কাজে হাত দিচ্ছেন না তৌকীর। তবে ভাবনার শেষ নেই তাঁর। স্ফুলিঙ্গ মুক্তির পর নতুন ভাবনা ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবেন তিনি। সেসব মার্চের পরের কাজ।