সমাধান কি এফডিসিতে, নাকি আদালতে
সমিতির পদ নিয়ে সিনেমার মানুষদের দ্বন্দ্বই এখন সাধারণ মানুষের ‘বিনোদন’–এর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ–সংক্রান্ত খবরে পাঠক–দর্শকের মন্তব্যই বলে দিচ্ছে সে কথা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ নিয়ে সুরাহা হয়নি এখনো। সংশ্লিষ্ট অনেকেরই আশঙ্কা, ব্যাপারটির সুরাহা কি এফডিসিতেই হবে, নাকি গড়াবে আদালত পর্যন্ত।
নির্বাচন–পরবর্তী মিশা-জায়েদ প্যানেলের দুটি বিজয়ী পদের ফল ঘিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগেই সৃষ্টি হয়েছে সংকট। গত ২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পর ২৯ তারিখ ভোরে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আপিল করেন নিপুণ। আগের ফল ঠিক রেখেই নিপুণের আপিলের নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু অসন্তুষ্ট নিপুণ ভোট কেনার অভিযোগ এনে জায়েদ ও চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বাতিল চেয়ে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত চেয়ে চিঠি পাঠায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হয়ে পুনরায় আপিল বিভাগের কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকনির্দেশনা আসে। সেখানে বলা হয়, আপিল বিভাগের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এরপর দুই প্যানেলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এ দিকনির্দেশনায় খুশি নিপুণ। তিনি বলেন, ‘ডকুমেন্টসহ যেসব অভিযোগ আমরা দিয়েছিলাম, তাতে পুরো নির্বাচনের ফলাফলই বাতিল হওয়ার কথা বলেছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু আমরা বলেছি, যে দুই পদ নিয়ে অভিযোগ, ওই দুই পদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। পরে অভিযোগের ডকুমেন্টগুলো দেখে ওই দুজনের ব্যাপারে আপিল বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।’ তিনি এ–ও বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের অভিযোগগুলো আমলেই নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম।’
আজ শনিবার বিকেলে এ নিয়ে আলোচনার জন্য বিএফডিসিতে বসবেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাকে বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব দিয়েছে। আমি দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের ডেকেছি। দুই পক্ষের সঙ্গে বসব। অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে একটি সারাংশ তৈরি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নিবন্ধন ওই মন্ত্রণালয়েই। সারাংশ দেখে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।’
এ প্রসঙ্গে জায়েদ খান বলেন, ২৯ জানুয়ারি করা আপিলের নিষ্পত্তি ও চূড়ান্ত রায় মেনে নিয়ে নিপুণরা সবাই স্বাক্ষর করেছেন। তাঁর দাবি, এরপর নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের আর কোনো কার্যকারিতা নেই। জায়েদ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের পর আবেদন করা হয়েছে, সেটাও নির্বাচন কমিশনার বরাবর। তাহলে আপিল বিভাগ ওই আবেদন মন্ত্রণালয়ে কীভাবে পাঠায়? আমরা সেই চিঠি বের করে দেখেছি, সেটা ১ ফেব্রুয়ারি পাঠানো। ১ ফেব্রুয়ারির চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারেন না তাঁরা। মন্ত্রণালয়ের কাছেও ওই চিঠি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ এসব চিঠির কোনো ভিত্তি নেই। ফলাফল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এরপরও বাদীর কিছু বলার থাকলে মহামান্য কোর্টে গিয়ে বলতে পারেন।’ আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান দুই পক্ষকে নিয়ে বসতে চান। এ প্রসঙ্গে জায়েদ খান বলেন, ‘আমি কেন আপিল বোর্ডের সঙ্গে বসব? আপিল বোর্ড তো এখন বিলুপ্ত। এর কার্যকারিতা ২৯ তারিখেই শেষ হয়ে গেছে। সামনে কমিটির শপথ। আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তিনি জানান, এসব ‘ভুল’ কার্যক্রম বন্ধ করতে মন্ত্রণালয় ও আপিল বিভাগের পাঁচজনের নামে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জায়েদ খান বসতে না চাইলেও চাইলেও বাদী নিপুণ অংশ নেবেন আজকের সভায়। সোহানুর রহমান বলেন, ‘বসতে না চাইলে আমরা আমাদের মতো সিদ্ধান্ত দিয়ে দেব। যদিও ফল তাঁর পক্ষেও যেতে পারে। তিনি যদি না আসেন, অভিযোগগুলোর যুক্তি–তর্কে অংশ না নেন, তাহলে তাঁর পক্ষে রায় যাওয়ার সম্ভাবনা কম।’