শেষবার এফডিসিতে ‘ছুটির ঘণ্টা’র পরিচালক

সত্য ঘটনা অবলম্বনে ‘ছুটির ঘণ্টা’ এর পরিচালক আজিজুর রহমান
কোলাজ

কথা ছিল দিনের আলোয় আসবেন। এফডিসিতে যাবতীয় প্রস্তুতিও সেভাবে নিয়ে রাখা হয়। কানাডা থেকে ঢাকার উড়োজাহাজের পথে বিলম্ব হয়। এরপর বিমানবন্দর থেকে এফডিসি পৌঁছাতে সময় লেগে যায় আরও কয়েক ঘণ্টা। ‘ছুটির ঘণ্টা’খ্যাত পরিচালক আজিজুর রহমানকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন এফডিসি পৌঁছায় তখন ঘড়ির কাঁটা রাত আটটার ঘরে। বাদ আসরের আনুষ্ঠানিকতা এসে ঠেকে বাদ এশায়।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) প্রশাসনিক ভবনের সামনের খোলা জায়গায় আজিজুর রহমানকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একটি মঞ্চ আগে থেকে তৈরি ছিল। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা তাঁকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে আসেন। কেউ কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। চিত্রনায়ক বাপ্পারাজকে এফডিসিতে খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু তিনিও এসেছিলেন চিত্রনায়ক ছোট ভাই সম্রাটকে নিয়ে। আজিজুর রহমানকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন বরেণ্য গীতিকার, প্রযোজক ও পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

এফডিসিতে আজিজুর রহমানের জানাজা

কানাডার স্থানীয় সময় ১৪ মার্চ সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ‘ছুটির ঘণ্টা’খ্যাত পরিচালক আজিজুর রহমান। মারা যাওয়ার পর টরন্টোর স্কারবোরোতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এই পরিচালকের প্রথম জানাজা হয়। ২০ মার্চ দুপুরে তাঁর মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। এফডিসিতে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ও জানাজা শেষে এই পরিচালকের মরদেহ নেওয়া হয় ধানমন্ডির বায়তুল আমান জামে মসজিদে, সেখানেও আরেকবার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার সকালে হেলিকপ্টারে করে আজিজুর রহমানের মরদেহ নেওয়ার কথা বগুড়ার সান্তাহারের কলসা গ্রামে। সেখানে বাদ জোহর চতুর্থ ও শেষ জানাজার পর আজিজুর রহমানের মা আবেজান বেগমের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে তাঁকে। মেয়ে আলিয়া রহমান জানালেন, তাঁর বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে। মৃত্যুর পর কী কী করতে হবে, তা তিনি ডায়েরিতে লিখে গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে আজিজুর রহমান শ্বাসকষ্ট ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। শেষ এক বছর কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়া চলাফেরা করতে পারতেন না। আজিজুর রহমান প্রায় এক যুগ ধরে স্ত্রীসহ কানাডায় তাঁর দুই সন্তানের সঙ্গে থাকতেন।

এফডিসিতে আজিজুর রহমানের জানাজা

আজিজুর রহমান ১৯৩৯ সালের ১০ অক্টোবর বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রূপচান প্রামাণিক, মা আবেজান বেগম। তিনি স্থানীয় আহসানউল্লাহ ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। চারুকলা আর্ট ইনস্টিটিউটে কমার্শিয়াল আর্টে ডিপ্লোমা করেছেন। অনেক সফল চলচ্চিত্রের পরিচালক আজিজুর রহমান ১৯৫৮ সালে ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে এহতেশামের সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মৈমনসিংহ গীতিকার’ লোককথা নিয়ে ‘সাইফুল মূলক বদিউজ্জামান’ মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে।
আজিজুর রহমান ৫৪টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘অশিক্ষিত’, ‘মধুমালা’, ‘অপরাধ’, ‘পরিচয়’, ‘সাম্পানওয়ালা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘গরমিল’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘রঙ্গিন কাঞ্চন মালা’, ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’, ‘মায়ের আঁচল’, ‘মেহমান’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘যন্তর মন্তর’, ‘মাটির ঘর’, ‘মহানগর’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘সোনার তরী’, ‘অনুভব’, ‘প্রতিদান’, ‘সাত বান্ধবী’, বস্তির রাণী’, ‘দিল’, ‘জমিদার বাড়ির মেয়ে’, ‘ঘর ভাঙা সংসার’, ‘কথা দাও’, ‘লজ্জা’ ও ‘সমাধান’।