মেয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় ওয়াসিম
১৫ বছর আগে স্কুলভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বুশরা। তাঁর পাশেই চিরনিদ্রা গেলেন বুশরার বাবা অভিনেতা ওয়াসিম। আজ রোববার বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা ও বনানী মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার পর বেলা তিনটায় বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে অভিনেতা ওয়াসিম রাত ১২টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
২০০৬ সালে মেয়ের আত্মহত্যার পর থেকে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন ঢালিউডের রাজপুত্র ওয়াসিম। যাপন করছিলেন অবসাদগ্রস্ত নিঃসঙ্গ জীবন। মানুষের এত ভালোবাসা পেয়েও রীতিমতো নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন তিনি। গত জানুয়ারি মাস থেকে চোখের যন্ত্রণায় ভুগতে শুরু করেন। সে সময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওয়াসিমকে। তাঁর অসুস্থতা ক্রমেই বাড়তে থাকে, একপর্যায়ে দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে তিনি কিডনি, ফুসফুস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। চোখের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সুগারসহ বেশ কিছু সমস্যা চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ওয়াসিমের ছেলে ব্যারিস্টার দেওয়ান ফারদুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসার পর বাবা ডান চোখে ভালোভাবে দেখতে পারতেন না। জটিল এই সমস্যার চিকিৎসা না করালে বাবা যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যেতেন। আবার চিকিৎসা করালে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, চিকিৎসা না করালে তিনি অন্ধ হয়ে যাবেন। পরে তিনি ওষুধ নেওয়া শুরু করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। গত রাতে হঠাৎ করেই তিনি কাঁপতে ও বমি করতে থাকেন। নাজুক শারীরে কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। সঙ্গে সঙ্গে আমি হাসপাতালে যোগাযোগ করি। কোথাও আইসিইউ পাচ্ছিলাম না। একটি হাসপাতালে আইসিইউ পাওয়া গেল, সেখানে নেওয়ার পরও বাবা বমি করছিলেন। তারপর হঠাৎ তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আইসিইউতে নেওয়ার আগেই চিকিৎসকেরা জানান বাবা আর নেই।’
ফারদুন বলেন, ২০০০ সালে তাঁর মা মারা যান। ২০০৬ সালে আত্মহত্যা করেন একমাত্র বোন। এরপর থেকে তাঁর বাবা ভেঙে পড়েছিলেন। তিনিই বাবার দেখভাল করতেন, সময় দিতেন। ওয়াসিম ধর্মকর্ম ও পড়াশোনা করে সময় কাটাতেন। ঘরের বাইরেও তেমন বের হতেন না। ফারদুন বলেন, ‘বাবা চাইতেন পরিবারের সদস্যদের পাশেই তাঁর কবর হোক। তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতেই তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’
ওয়াসিমের জন্ম পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে হলেও তাঁর পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর। আনন্দ মোহন কলেজে পড়াকালীন তিনি মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে চলচ্চিত্রের দিকে পা বাড়ান। সুদর্শন ওয়াসিম সহজেই চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজকদের দৃষ্টি কাড়েন। দ্রুত তিনি নিয়মিত হন সিনেমায়। প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর বেশির ভাগ সিনেমাই ছিল ব্যবসাসফল। নানা আক্ষেপ ও অভিমানে এক সময় অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ওয়াসিম।
ওয়াসিম খেলাধুলা পছন্দ করতেন। ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রথম জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন বডি বিল্ডিং ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে। শেষ বয়সে চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না তাঁর। ফারদুন বলেন, ‘আব্বুর শরীর এমনিতেই খারাপ ছিল। কবরী আন্টির মারা যাওয়ার খবর আব্বুকে দিইনি। শুনলে হয়তো আরও বেশি কষ্ট পেতেন।’