মা হিসেবে একটি কষ্ট রয়ে গেল
শুটিংয়ের পাশাপাশি সন্তানদের জন্য আলাদা করে সময় বের করতেন অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা। পর্দায় বেশির ভাগ সময় তাঁকে মায়ের ভূমিকায় দেখা যেত। পর্দার এই মা শুটিংয়ে যাওয়ার আগে এবং পরে নিজের সন্তানদের জন্য রান্না করে যেতেন। অবসরে তাঁদের নিয়ে বেড়াতে বের হতেন। তবে মা হিসেবে তাঁর একটা কষ্ট রয়েই গেছে।
অভিনয় করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় করেছেন কল্পনা। কিন্তু নিজের ভুলেই খুইয়েছেন প্রায় সবই। বাকিটা গেছে চিকিৎসার খরচে। দীর্ঘদিনের অপূর্ণ ইচ্ছে, সন্তানদের জন্য একটি ফ্ল্যাট কেনা। মা হিসেবে এই সামান্য ইচ্ছে পূরণ না হওয়া পোড়ায় তাঁকে।
কর্মজীবনে নিয়মিত শুটিংয়ে অংশ নিতেন। শুটিং না থাকলে পরিবারকে সময় দিতেন। সন্তানদের সব কাজ নিজে হাতে করতে ভালো লাগত তাঁর। কল্পনা জানান, প্রথম দিকে ছেলে–মেয়েদের বাসায় রেখে শুটিংয়ে যেতে খারাপ লাগত। পরে অভ্যস্ত হতে থাকেন। মা হিসেবে তিনি সব সময় চেয়েছেন, সন্তানদের কথা ভেবে কাজ করতে। তিনি বলেন, ‘সন্তানেরা যেন মাকে কাছে পায়, সে জন্য সব সময় কাজের শিডিউল করতাম কৌশলে, যাতে বাসায় ফিরে সন্তানদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পারি। আমি নিজেই তাদের জন্য রান্না করতাম, নিয়ম করে ঘুরতে যেতাম। মায়ের অনুপস্থিতিটা বুঝতে দিতাম না। পরিবারের অন্যরাও আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করত।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা। চলচ্চিত্রে মায়ের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য এখনো তিনি সবার প্রিয়। ক্যারিয়ারে প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আয় করেছেন প্রচুর টাকা। সেই অর্থ পরিবারের সবার জন্য দুই হাতে খরচ করেছেন। শুটিংয়ে দেশ–বিদেশে যেখানেই যেতেন, লাগেজ ভর্তি করে উপহার এনেছেন সবার জন্য। তিনি বলেন, ‘অন্যদেরও দিতে হবে বলে, সন্তানদের সব সময় কেবল প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই দিয়েছি। অনেক সময় সন্তানদের বঞ্চিত করে অন্যদের জন্য করেছি। নিজের সন্তানদের আরও দিতে পারতাম। দিলে হয়তো তাদের শৈশবটা আরও ভালো কাটত। তখন যাদের দিয়েছি, তারা এখন মনেও রাখেনি, আমাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। অসুস্থ হলাম, কেউ কোনো দিন ফোন করে খবরও নেয়নি।’
খালেদা আক্তার কল্পনার দুই সন্তান। সবার বড় মেয়ে শারমিন আক্তার সেতু ১৫ বছর হলো প্রবাসী। ছেলে শাহেদ ইমাম বন্ধন দেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কল্পনা থাকেন ছেলে বন্ধনের সঙ্গে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো আফসোস আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বহু সিনেমায় অভিনয় করেছি। অনেক টাকা আয় করেছি। আমার নিজের ভুলের কারণে টাকাগুলো নষ্ট হয়েছে। মাঝে আমি অসুস্থ হওয়ায় বাকি টাকাগুলো খরচ হয়ে গেছে। সরকারের সহায়তায় আমার চিকিৎসা করাতে হয়েছে। আমাদের গাড়ি, বাড়ি নেই, এ নিয়ে ছেলে–মেয়েদের মধ্যে আফসোস নেই। আমার অপূর্ণ ইচ্ছে, টাকা থাকলে ছেলে–মেয়েদের জন্য একটা ফ্ল্যাট কিনে দিতাম। ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে অনেকেই কথা শোনায়। তারা তো ভেতরের খবর জানেন না। এখন কাজ নেই, কিন্তু এই একটি কষ্ট রয়ে গেল।’
অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে কল্পনা অভিনয়ে ডাক পান কম। মাঝে বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু সেগুলো শেষ হয়নি। সেসব কাজের পারিশ্রমিকও পাননি। করোনার কারণে বর্তমানে এই অভিনেত্রী শুটিং থেকে বিরত আছেন। তিনি জানান, শুটিং করলেও অনেকেই ঠিকমতো পারিশ্রমিক দেয় না। এ জন্য এখন তাঁকে শুটিং সেভাবে টানে না। বরং ঘরে বসে লেখালিখি করছেন তিনি।