পূর্ণিমার স্কুটির শিক্ষক ফেরদৌস!
চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার স্কুটি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ঢাকার ফ্লাইং ক্লাবের পাশের একটি রাস্তায় আজ বিকেলে পূর্ণিমাকে স্কুটি চালানোর কাজ শুরু করেন ফেরদৌস। কাল থেকে একটানা ১০ দিন কাজটি করতে হবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই নায়ককে।
‘গাঙচিল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পূর্ণিমাকে স্কুটি চালানো জানতে হবে। ছবির শুটিং শুরুর আগে সহশিল্পী পূর্ণিমাকে চরিত্রের উপযোগী করে তোলার কাজে সহযোগিতা করতে পেরে ফেরদৌস আনন্দিত। এই আয়োজনে সঙ্গে আছেন ছবির পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল। আজ শুক্রবার বিকেলে তেমনটাই দেখা গেল।
পূর্ণিমা একটি স্কুটিতে বসে আছেন। পাশে থেকে চালানোর কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছিলেন ফেরদৌস। একটু পরপর দৌড়ে আসছেন পরিচালকও। আগামী ডিসেম্বর থেকে ছবিটির শুটিং শুরু হচ্ছে বলে আজ প্রথম আলোকে জানালেন পরিচালক ও নায়ক-নায়িকারা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘গাঙচিল’ ছবির শুটিং শুরুর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে পূর্ণিমা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় শুটিং পিছিয়ে দেন পরিচালক।
‘গাঙচিল’ ছবিতে পূর্ণিমা এনজিওকর্মী আর ফেরদৌস সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করবেন। ফেরদৌসের চরিত্রের নাম সাগর আর পূর্ণিমার মোহনা। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দাদের জীবনের নানা ঘটনা এই ছবির প্রধান উপজীব্য। এই অঞ্চলে এনজিওকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পূর্ণিমা। নিজের চরিত্র দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত করে তুলতে সময় বের করে স্কুটি চালানো শিখছেন। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা বেশ মজার। বললেন, ‘আমি জীবনে কোনো দিন সাইকেল আর স্কুটি চালাইনি। আজই প্রথম উঠলাম। শুরুতে কিছুটা ভয় ছিল, কাত হয়ে পড়ে যাবে না তো। আস্তে আস্তে ফেরদৌস ভয় দূর করতে পেরেছেন। পুরোপুরি শিখতে কত দিন যে লাগবে, বুঝতে পারছি না।’
চরিত্রের প্রয়োজনে এভাবে নিজেকে তৈরির ব্যাপারটিতে খুবই সন্তুষ্ট পূর্ণিমা। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন বিরতির পর একসঙ্গে দুটি ছবিতে সাইন করেছি। দুটি ছবিরই পরিচালক একজন। এখন কিন্তু ছবি বানানোর পুরো পদ্ধতিই বদলে গেছে, যা আমাদের এখানে আগে পাইনি। এখন সিনেমা বানানোর আগেই অনেক কিছু করা হচ্ছে। স্ক্রিপ্ট নিয়ে অনেকবার বসা হচ্ছে। সুন্দরভাবে ছবির কাজ শেষ করার প্রস্তুতি শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনা করে শুটিং শুরুর আগে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টিকে দারুণ ইতিবাচক মনে হয়েছে।’
২০ বছরের অভিনয়জীবন ফেরদৌসের। এই দীর্ঘ সময় কখনোই তাঁর কোনো সহশিল্পীকে চরিত্রের উপযোগী করে তোলার কাজে সহযোগিতা করতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘চরিত্রের জন্য পূর্ণিমার স্কুটি চালানো শেখাটা খুব প্রয়োজন। তবে এই কাজটি ডামি দিয়ে করানো যেত। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আমরা জানি, এনজিওকর্মীরা স্বাবলম্বী হন, তাঁরা স্কুটি চালিয়ে গ্রামগঞ্জে চলেন। সে জন্য এই পরিশ্রম করছি। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে কখনো এভাবে সহশিল্পীকে চরিত্রের জন্য তৈরি করে দেওয়ার ঘটনা আমার জীবনে প্রথম।’
ফেরদৌস আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে এমনিতে যেটা হয়, নতুন শিল্পীরা চলচ্চিত্রে এলে ক্যামেরার সামনে দৃশ্যটা কীভাবে করবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। কিন্তু ছবির শুটিং শুরুর আগে এভাবে চরিত্র নিয়ে ভাবা অথবা শিল্পীকে সহযোগিতা করার কাজ করা হয় না। পরিচালক ভীষণ নাছোড়বান্দা। তিনি যখন চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেছিলেন, আমাদের বলেছিলেন, শুটিংয়ের আগে এই কাজগুলো নিজেদের করতে হবে। পরিচালকের ঐকান্তিক আগ্রহে আমরাও অনুপ্রাণিত হয়ে কাজটা করছি।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘গাঙচিল’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘গাঙচিল’ সিনেমায় পূর্ণিমা একজন এনজিওকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করবেন। নির্মাতা নেয়ামূল জানান, নোয়াখালীর চরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-আনন্দের গল্প এই সিনেমায় দেখা যাবে। এনজিওকর্মী হিসেবে পূর্ণিমাকে অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হবে। সাধারণত মাঠপর্যায়ের এনজিওকর্মীরা স্কুটি চালিয়ে এসব অঞ্চলে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। পূর্ণিমার চরিত্রটিকে বাস্তবসম্মত করে ফুটিয়ে তুলতে স্কুটি চালানো শেখা দরকার। তাই আমরা বাস্তবসম্মত করার জন্য তাঁকে স্কুটি চালাতে শিখতে অনুরোধ করেছি। তিনিও সানন্দে রাজি হয়েছে। ফেরদৌস ভাইও দারুণ সহযোগিতা করছেন।’
‘গাঙচিল’ ছবিটি প্রযোজনা করবে নুজহাত ফিল্মস।