‘পরী তুমি ভাঙবে না প্লিজ’
ঢালিউড অভিনেত্রী পরীমনির পাশে দাঁড়িয়েছেন নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। পরীমনির নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।
জয়া আহসান, চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী
পরীমনির খবরটি শোনার পর থেকে বেদনা ও ধিক্কারে মনটা ভরে উঠেছে। আমি কষ্ট পাচ্ছি মানুষ হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, অভিনয়জগতের একজন সদস্য হিসেবে।একবিংশ শতকের অনেকটা পথ পার হয়ে এসে এখনো মেয়েদের এমন লাঞ্ছনা দেখতে হবে? কোনো মানুষ, কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করার মন–মানসিকতা বা দুঃসাহস কোত্থেকে আসে? যে চলচ্চিত্রশিল্পকে রক্তে-ঘামে আমরা তিল তিল করে গড়ে তুলছি, তা এতই নাজুক, এতই খেলো? এ ঘটনা আমরা তলা পর্যন্ত বুঝতে চাই। আমরা দেখতে চাই, এমন দুর্বৃত্তপনার বিচার হয়েছে। দেখতে চাই, কোনো মেয়ে—তা সে যে-ই হোক—তার সঙ্গে এমন আচরণের অবসান হয়েছে।
অনিমেষ আইচ, চলচ্চিত্র ও নাট্য নির্মাতা
পরীমনির সঙ্গে আমার জীবনেও দেখা হয়নি, কথা হয়নি, কাজ তো হয়ইনি। তবু সে আমার কলিগ। যেকোনো দুঃসময়ে আমি আমার কলিগের পাশে থাকাটাই স্বাভাবিক মনে করি। সুতরাং, আমি আছি তোমার পাশে। দেখা যাক আসল সত্যটা কী? এখন আইনের হাত কতটা শক্তিশালী।
রুনা খান, অভিনয়শিল্পী
অন্যায় হলে বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে, সবার। পরীমনির জন্য ন্যায়বিচার চাই।
খিজির হায়াত, নির্মাতা
‘তনু, নুসরাত আর মুনিয়াদের বিচারহীন আত্মারা যখন ডুকরে কাঁদে, বিবেকহীন জাতির নায়িকা পরীমনিও তখন সম্ভ্রমহানির ফাঁদে।
দেবাশীষ বিশ্বাস, চলচ্চিত্র নির্মাতা
আমার মামণির জন্য বিচার চাই!
রওনক হাসান, অভিনয়শিল্পী
সে যে–ই হোক...কোনো নারীর প্রতিই এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না! আমরা পুরো ঘটনা জানতে চাই। দোষী ব্যক্তি আইনের আওতায় এসেছে, তার বিচার হচ্ছে, তা দেখতে চাই।
ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, অভিনেত্রী
আমরা কোথায় আছি? এ কোন দেশে আমরা বাস করছি। স্বনামধন্য চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। নারীর প্রতি কোনো সহিংসতা ও অত্যাচার সহ্য করব না, মানব না।
অপূর্ব রানা, চলচ্চিত্র নির্মাতা
আমি সাত বছর যাবৎ যে পরীমনিকে দেখেছি, আজকের পরীমনি তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাথরের মতো শক্ত একটি মেয়ে বরফের মতো গলে যায় কতটা আঘাত পেলে, তা পরীমনিকে দেখে বুঝলাম। অপরাধী যে-ই হোক, যত বড়ই হোক, তার বিচার হতেই হবে। অনেকে যা পারে না, পরীমনি তার প্রতিবাদ করে দেখিয়েছে। শুধু নীরব প্রতিবাদ নয়, এখন প্রয়োজন কঠিন প্রতিরোধ।
সামরোজ আজমি আলভী, অভিনয়শিল্পী
পরীমনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সম্মানটা কোথায়? এ ঘটনার বিচার চাই।
আশনা হাবীব ভাবনা, অভিনয়শিল্পী
পরীর এই কান্না নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একজন নারী হিসেবে, একজন সহকর্মী হিসেবে। সম্মান একটা পিঁপড়ারও আছে। পরীমনি একজন নায়িকা, হ্যাঁ, বাংলা সিনেমার নায়িকা। তো? তার সঙ্গে যা খুশি, তা-ই করা যাবে? এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে যত বড় হচ্ছি, তত নিজেকে অতি ক্ষুদ্রভাবে দেখতে পাচ্ছি। সে একজন নারী। সে ঘরের বউ হোক, পারলারে কাজ করা মেয়ে হোক, বিশাল কাচের রুমে বসে অফিস করা মেয়ে হোক, গার্মেন্টসকর্মী হোক, ডাক্তার হোক, লেখক হোক, আর যদি নায়িকা হয় তাহলে তো কথাই নেই। সবাইকে সহ্য করতে হয় অসম্মান, সবাইকে। পরীর পাশে আছি। পরী তুমি ভাঙবে না প্লিজ।
মিশু চৌধুরী, মডেল ও অভিনেত্রী
পরীমনি, পাশে আছি। এ মুহূর্তে আপনাকে আরও শক্ত হতে হবে। বিচার আপনি পাবেন। আপনি নিজেই আপনার মনোবল। দোয়া করি, এই কঠিন সময় যেন খুব তাড়াতাড়ি পার হয়।
কোনাল, সংগীতশিল্পী
আমরা যেকোনো কিছুতেই হাসি। কেউ ধর্ষণের শিকার হলেও হাসি, কেউ মরে গেলেও হাসি, কেউ কান্না করছে, তা দেখেও হাসি, কেউ কষ্ট পাচ্ছে, তা দেখেও হাসি। হাসাহাসি খুবই ভালো। কিন্তু আপনার-আমার এই স্বার্থপরতার হাসিটা বোধ হয় আসে নিজের অক্ষমতা, নিজের ব্যর্থতা থেকে। মানে আমি যে একজন লুজার, তা ঢাকতে জোরে জোরে হাসতে থাকব আরেকজনের দিকে আঙুল তুলে। এটাই শ্রেষ্ঠ উপায় নিজেকে বাঁচানোর। ব্রাভো পরীমনির এই আর্তনাদ, এই কান্না দেখে, ‘রেপ’ এবং ‘আত্মহত্যার’ মতো এক্সটিম অনুভূতির কথা শুনেও যাঁরা হাসেন, অভিবাদন আপনাদের। আপনি একজন সফল লুজার! আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরীর পাশে দাঁড়াবে। সঠিক বিচার পাবে পরী। আবার সেই প্রাণোচ্ছল প্রাণচঞ্চল সুন্দর পরীকে আমরা পর্দায় দেখব।
কায়েস আরজু, তরুণ চলচ্চিত্র অভিনেতা
আমার বন্ধুর ওপর অন্যায়ের বিচার চাই। অপরাধী যে-ই হোক, যত বড়ই হোক, তার বিচার হতেই হবে। অনেকে যা পারে না, পরীমনি তার প্রতিবাদ করে দেখিয়েছে। আর প্রতিবাদ নয়, এখন প্রয়োজন কঠিন প্রতিরোধ।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পরীমনি তাঁর ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে অভিযোগ করেন, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিচার চেয়ে চিঠি লেখেন পরীমনি।