‘প্রতিনিয়ত এই কথাগুলো আমাদের শুনতে হয়’
১২ নভেম্বর সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘রেহানা’। তারপর থেকেই ছবিটি নিয়ে চলছে আলোচনা–সমালোচনা। পিছিয়ে নেই অভিনয়শিল্পীরাও। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মনে হয় অভিনেত্রীরা। নারী হওয়ার কারণেই কি না কে জানে, আলাদা করে তাঁদের যেন স্পর্শ করেছে রেহানার একাকিত্ব, সংগ্রাম। এখানে রইল অভিনেত্রী তানভীন সুইটির আলোচনা।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখলাম। আমি জাস্ট এক নিশ্বাসে পুরো সিনেমাটা দেখলাম। চোখের পলক ফেলতে পারছিলাম না, একধরনের অস্থিরতা এবং উৎকণ্ঠা নিয়ে দেখলাম। সিনেমাটা দেখতে বসে নিজের অজান্তে প্রতিবাদী হয়ে উঠলাম, রেহানার সঙ্গে মনে হচ্ছিল আমিও চিৎকার দিয়ে উঠি এবং সবার সামনে বলি, এটা অন্যায় হচ্ছে। তাঁর মানে আমাদের সমাজের চারপাশে যে ঘটনাগুলো ঘটে এবং প্রতিনিয়ত আমরা সেটা দেখছি, কিন্তু মুখ বন্ধ করে সব সহ্য করছি। কেউ কোনো প্রতিবাদ করছি না। প্রতিটি নারী বেশির ভাগ সময় অভিনয় করে এবং একটা বেদনার মধ্যে তাঁরা বসবাস করেন। আমাদের সমাজ কি বলবে।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ গল্পটা এত সুন্দর এবং সহজ করে বলেছে, সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সাদ, তুমি বিশ্বের কাছে আমাদের দেশকে সম্মানিত করেছ, সত্যি তুমি ব্রিলিয়ান্ট। এই সিনেমার প্রতিটি চরিত্র এত সাবলীল অভিনয় করেছে, মনে হচ্ছিল বাস্তব। আমাদের বাঁধন এককথায় অসাধারণ অভিনয় করেছে। পুরো সিনেমায় কোথাও তাকে রেহানার চরিত্রের বাইরে যেতে দেখিনি। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম রেহানাকে। আমি সাদকে ধন্যবাদ জানাই এবং কাস্টিং ডিরেক্টরকে ধন্যবাদ জানাই রেহানা চরিত্রে বাঁধনকে কাস্ট করার জন্য। নিশ্চয় কাস্টিং দেখে অনেকে হেসেছে, বলেছে, আরে ব্রো অভিনয় পারে যে একে নিয়েছে, আরও কত কথা। পথচলার সময় প্রতিনিয়ত এই কথাগুলো আমাদের শুনতে হয়। কিন্তু সময় সব কথার জবাব দিয়ে দেয়।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ ডিরেক্টরের মুখে শুনি, না এই অভিনেতা, অভিনেত্রী পারবে না। আরে ভাই ডিরেক্টর, আপনার কাজটা কী, যেই হোক অভিনেতা, অভিনেত্রী; তাদের কাছ থেকে অভিনয়টা বের করে আনেন। দশজন অভিনেতা, অভিনেত্রী তৈরি করুন। এক–দুইজনকে নিয়ে কখনো সিনেমার বাজার তৈরি হয় না। কম্পিটিশন দরকার, তখনই ভালো জিনিস তৈরি হয়। সিনেমার বাজারও বড় হবে। যাক, বাঁধন দুর্দান্ত অভিনয় করেছ, ইমু অসাধারণ, আমার মনে হয়েছে ইমু বাঁধনের মেয়ে। প্রতিটি চরিত্র এককথায় চমৎকার অভিনয় করেছে।
আমি এখনো ডুবে আছি রেহানা মরিয়মের মধ্যে, এই ঘোর যে কখন কাটবে বা আদৌ কাটবে কি না, কে জানে। সিনেমাটোগ্রাফি, শব্দ, লাইট সবকিছু অসাধারণ। কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি ছিল না। আমাদের বাংলা সিনেমার দর্শকেরা, প্লিজ, আপনারা হলে গিয়ে ধৈর্য নিয়ে সিনেমাটা দেখুন, যে সিনেমাটা এত আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আপনারা পরিবারে সবাইকে নিয়ে দেখুন, ভালো লাগবে। আমার বন্ধু, ফ্যান, ফলোয়ারস সবাইকে বলছি, অবশ্যই দেখবেন সিনেমাটা। শুভকামনা রইল রেহানা মরিয়ম নূর।