দিল্লিতে কী করছেন প্রবীর মিত্র
কয়েক বছর ধরে অসুস্থ নাটক ও চলচ্চিত্রের জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী প্রবীর মিত্র। যে কারণে চলচ্চিত্রের কোনো আড্ডা ও অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যেত না। এদিকে আজ বুধবার কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, প্রবীর মিত্র এখন আছেন ভারতের দিল্লিতে। সেখানে তিনি তাঁর বোনের বাড়িতে থাকছেন। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর তিন সন্তানও। প্রথম আলোকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনয়শিল্পীর পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন।
৭৯ বছর বয়সী প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। হাঁটুর ব্যথায় ঘর থেকে বের হন না এই অভিনেতা। ২০২০ সালের জুলাই মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পর্দায় নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও সমানভাবে আলো ছড়িয়েছেন প্রবীর মিত্র। এরপর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা।
পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘পুরো বডি চেকআপ করাতে বাবাকে (শ্বশুর) দিল্লি যেতে হয়েছে। যদিও এমনিতে ঢাকার দুটি হাসপাতালে তিনি নিয়মিত চেকআপ করাতেন। কিছুদিন ধরে দিল্লিতে থাকা বোনকে দেখতে চাইছিলেন। তাই বডি চেকআপের জন্য দিল্লি বেছে নেন। চিকিৎসা হলো, বোনকেও দেখে আসা হলো।’
সোনিয়া জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি প্রবীর মিত্র দিল্লিতে যান। যাওয়ার পর প্রথম তিন দিন শারীরিক পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা না থাকায় পরে বোনের বাসায় চলে যান। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে থেকে বডি চেকআপ করা লাগত না। যেহেতু এখন করোনার সময়, তাই ঝুঁকি নিতে চাননি বাবা। এখন তিনি ভালো আছেন।’
প্রবীর কুমার মিত্রের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুন বাজারে। পৈতৃক নিবাস কেরানীগঞ্জের শাক্তায়। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরে ওই পরিচালকের জলছবি সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক হয়। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় দেখা গেছে প্রবীর মিত্রকে। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্রে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সীমার’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘অঙ্গার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নয়নের আলো’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘আবদার’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ইত্যাদি।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।