‘একেবারে অফট্রাকের ছবি বলতে আমরা যা বুঝি, লাল মোরগের ঝুঁটি তেমনই। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানিক মানুষের যে সংগ্রাম, সেই দুঃসময়ের জীবন যেমন, পরিমিতভাবে এবং ভিন্ন এক ভাষায় সেটা এই চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। আমার চমৎকার লেগেছে।’ কথাগুলো চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলামের। লাল মোরগের ঝুঁটি ছবিটি সম্পর্কে প্রথম আলোকে গতকাল বুধবার এভাবেই বললেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নূরুল আলম আতিকের সিনেমা লাল মোরগের ঝুঁটি মুক্তি পেয়েছে ১০ ডিসেম্বর। দর্শক উপস্থিতি নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষের সন্তুষ্টি অন্য রকম। হাউসফুল না হলেও যে ধরনের দর্শক ছবিটি দেখতে আসছেন, একে ইতিবাচক মনে করছে তারা। সাধারণ দর্শক ছাড়াও ছবিটি দেখতে যাচ্ছেন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকেরা। কেউ কেউ যাচ্ছেন পরিবার নিয়েও। এ পর্যন্ত যাঁরাই ছবিটি দেখেছেন, তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন। তাঁদের ফেসবুক ওয়াল সে কথাই বলছে।
মুক্তির প্রথম দিন পান্থপথের স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবিটি দেখেছেন অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ছবি “লাল মোরগের ঝুঁটি” দেখে সত্যি মুগ্ধ। সবাইকে দেখার অনুরোধ থাকল। সবাই যাঁর যাঁর জায়গায় শতভাগ ভালো করেছেন।
বিশেষ করে ভাবনার কথা বলতেই হয়, আমাকে আবারও মুগ্ধ করেছে। এ যেন অন্য এক ভাবনার আত্মপ্রকাশ। সিনেমাটোগ্রাফিও ভালো লেগেছে। নূরুল আলম আতিককে অভিনন্দন, নেপথ্য অনুপ্রেরণায় আতিককে এগিয়ে দেওয়ার জন্য শুকুকে ধন্যবাদ।’
অনুদান পাওয়া, শুটিং শুরু করে মাঝপথে থেমে যাওয়া, বিরতি দিয়ে আবার শুরু করাসহ নানা কারণে অনেক দিন ধরে আলোচনায় লাল মোরগের ঝুঁটি। এর আগে বড় পর্দায় আতিকের শেষ কাজ ডুবসাঁতার মুক্তি পায় ২০১০ সালে। তাঁর ছবির অপেক্ষায় ছিলেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।
‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ মুগ্ধ করেছে পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীকেও। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বললেন, ‘এই ছবিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন ধরনের ন্যারেটিভ আছে। ভিন্ন ন্যারেটিভে আগেও স্বাধীনতাযুদ্ধের ছবি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এটি একেবারে ভিন্ন এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত বেদনা ও হাহাকারের গল্প আমরা শুনতে চাই না। শোনা দরকার, তাহলেই বুঝতে পারব মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের কত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তান আর্মির চরিত্রে শাহজাহান খুব ভালো করেছে। দোয়েলের অভিনয়ও ভালো।’
বিকল্প ধারায় এই ধরনের চলচ্চিত্রই হওয়া উচিত বলে করছেন মোরশেদুল ইসলাম। আরও এক সপ্তাহ দেশের প্রেক্ষাগৃহে এটি প্রদর্শিত হোক—এমনটাই আশাবাদ তাঁর। তিনি বলেন, ‘এমন ছবি দেখতে দর্শক আস্তে আস্তে হলে যাবেন, প্রথম সপ্তাহে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন তা নয়। আমরা একটু সময় যদি না দিই এবং প্রেক্ষাগৃহে আরও বেশি সময় না রাখি, তাহলে ভালো মানের ছবির প্রতি অন্যায় করা হবে।’
ছবি দেখে তানভীন সুইটি বলেন, ‘অসাধারণ সিনেমা, দেখে মুগ্ধ হলাম। নতুন প্রজন্মের অবশ্যই দেখা উচিত।’ পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বলেন, ‘কোন এক অদ্ভুত কারণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখতে গেলই কেমন একটা পাতানো খেলার অনুভূতি হয়। লাল মোরগের ঝুঁটি ব্যতিক্রম। একটি সুনির্মিত চলচ্চিত্র।’
পরিচালক জানালেন, ছবির প্রতিটি চরিত্র আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন চরিত্রে এতে অভিনয় করেছেন লায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, আশীষ খন্দকার, ইলোরা গহর, শিল্পী সরকার অপু, জয় রাজ, অশোক ব্যাপারী, ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, দীপক সুমন, দিলরুবা দোয়েল, স্বাগতা প্রমুখ।
এদিকে মুক্তির ছয় দিনের মাথায় আরও বেশি দর্শক টানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। ১৪-১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৫০ শতাংশ ছাড়ে ছবিটি দেখতে পারবেন দর্শকেরা। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরেকটি ছবি কালবেলাও চলছে সেখানে।