চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুজহাত ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৭ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এফডিসির বর্তমান পরিচালকের দ্রুত অপসারণ চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন ১৭ সংগঠনের নেতারা। তাঁরা এফডিসি এমডির কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছেন।
সমাবেশে পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, ‘এই এমডি আমাদের চলচ্চিত্রের সবাইকে অপমান করেছেন। বারবার তাঁর কাছে নানা ইস্যু নিয়ে গেলে তিনি ভালো ব্যবহার না করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আমাদের কোনো কথাই কোনো দিন শোনেননি। আমরা এমন এমডি চাই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করে তিনি আমাদের এফডিসিতে ঢুকতে দেননি। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। তিনি এখানে থাকলে আমরা কোনো কাজ করব না। তিনি আমাদের গেটের বাইরে রেখেছেন, এবার আমরা তাঁকে গেটের বাইরে পাঠাব।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করে আসছিলেন চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁর কারণে নির্বাচনের দিন প্রযোজক, পরিচালকসহ ১৭ সংগঠনের কেউ এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারেননি! এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজকসহ ১৭ সংগঠনের সবাই। গতকাল শনিবার তাঁরা ঘোষণা দেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আর কোনো নির্বাচন এফডিসিতে হতে পারবে না। বিষয়টি অপমানজনক দাবি করে এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিনের পদত্যাগ ও শিল্পী সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ কিছু কর্মসূচি দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার ১৭ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা সমাবেশের ডাক দেন।
সমাবেশে চলচ্চিত্র পরিচালক এস এ হক অলিক বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে আমাদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা একাধিকবার এফডিসির এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি কোনো ধরনের কর্ণপাত করেননি। তিনি আমাদের ঢুকতে দেননি। তিনি কেন এমনটা করেছেন, এটা পরিষ্কার করতে হবে। এখানে থাকতে পারবেন না, তাঁর অপসারণ চাই।’
চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম বলেন, ‘প্রযোজকেরা টাকা লগ্নি করেন বলে আমরা পরিচালকেরা সিনেমা বানাই। আর পরিচালকেরা সিনেমা বানাই বলেই এফডিসি সচল থাকে, আপনি বেতন পান। সেই প্রযোজক-পরিচালকদের আপনি অপমান করেছেন। গেটের বাইরে সারা দিন বসিয়ে রেখেছেন! বারবার তাঁর সঙ্গে মিটিং করেছি শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এফডিসিতে আমাদের প্রবেশ করা নিয়ে, তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। নির্বাচনের দিন তাঁর এমন সিদ্ধান্ত কার ইশারায় হয়েছে, তা আমরা জানতে চাই। তিনি একজন নীতিভ্রষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এফডিসিতে আমাদের প্রবেশে সরকারের আদেশ থাকলেও তা মানেননি তিনি। খুব বাজে ব্যবহার করে আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছেন—“যা পারেন করেন” বলে। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। নির্বাচন প্রভাবিত করতেই তিনি এমনটা করেছেন।’
জ্যেষ্ঠ পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘পরিচালকেরা ভোটের দিন এফডিসিতে এসে যদি ভোট চাইতেন, তাহলে অনেক শিল্পীই আমাদের কথা ফেলতে পারতেন না। আমরা যাতে ভোট চাইতে না পারি, সে জন্য এমডি জেনেবুঝে আমাদের এফডিসিতে প্রবেশ করতে দেননি। এই নির্বাচনে বিশেষ কাউকে জেতাতে তিনি এফডিসিতে আমাদের ঢুকতে দেননি। এ জন্য আমরা এফডিসি থেকে তাঁর অপসারণ চাই। আমরা যদি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে থাকি, তাহলে এই এমডি এফডিসিতে থাকতে পারবেন না। আমরা রাস্তায় শুয়ে থাকব। এই এমডিকে নিয়ে আমরা এফডিসিতে কাজ করতে চাই না।’
এদিকে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন প্রযোজকনেতা মোহাম্মদ ইকবাল, আলিমুল্লাহ খোকনসহ চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠনের নেতারা। এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলন করে তা নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিন। আজ দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে শিল্পী সমিতির ভোটারদের বাইরে অন্য ১৭টি সংগঠনের সদস্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওপর মহলের নির্দেশেই এটা করা হয়েছে। করোনার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। এখানে আমার কিছু করা নেই। যে ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, আশা করছি, শিগগিরই তার অবসান হবে।’