জন্মদিনে মান্না ভাইয়ের কথা মনে পড়ে
‘আহা রে সবাই আমাকে কত ভালোবাসে। সবার ভালোবাসায় চোখ ভিজে গিয়েছে।’ জন্মদিনে বন্ধু-স্বজন ও ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কথাগুলো বললেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মুক্তি। আজ ছিল তাঁর জন্মদিন। যদিও দিনটি নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। ফেসবুকে যাঁরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, তাঁদের লাভ রিঅ্যাক্ট দিয়েই দিনটা কাটিয়েছেন। ১৯৯২ সালে ‘চাঁদের আলো’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মুক্তি।
মুক্তি এখন আর অভিনয় করেন না। যখন করতেন, তখন শুটিং সেটেই দিনটা কাটাতেন। জন্মদিনের সেরা উপহার কী ছিল? জানতে চাইলে তিনি চলে যান শুটিংয়ের দিনগুলোতে। ‘পিতা–মাতার আমানত’ ছবির শুটিং চলছিল সেদিন। লোকেশন ছিল ডিপজলের সাভারের শুটিংবাড়ি। মুক্তির সহশিল্পী ছিলেন মান্না। শুটিং শেষ করে বাসায় ফিরবেন, এমন সময় শুনতে পান মান্নার ডাক, ‘মুক্তি একটু এদিকে এসো।’ ভেতরের একটি ঘরে গিয়ে দেখেন কেক, ফুলসহ তাঁর জন্য বিশাল আয়োজন সেখানে। সেটের সবাই তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। মুক্তি বলেন, ‘সেদিন আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভাবছিলাম, শুটিং সেটের কেউ আমার জন্মদিনের কথা জানেন না। মান্না ভাইয়ের সেই সারপ্রাইজ এখনো আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। জন্মদিন এলে মান্না ভাইকে ভুলতে পারি না। তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। তাঁকে প্রায়ই মনে পড়ে।’
মুক্তি অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘চাঁদের আলো’ ছিল সুপারহিট। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন শেখ নজরুল ইসলাম। এই ছবি দেখে দর্শক সিনেমা হল থেকে বের হচ্ছিলেন ‘তুমি আমার চাঁদ আমি চাঁদেরই আলো’ গাইতে গাইতে। পরে এই গান ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। ‘চাঁদের আলো’ ছবিতে জুটি হয়েছিলেন ওমর সানী ও মুক্তি। ছবিটির সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে মুক্তি জানান, এই ছবি মুক্তির পর অনেক ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। শুটিং হয়েছিল সিলেটে খাসিয়া জাতিগোষ্ঠীর এলাকায়। এক মাস সেখানেই থাকতে হয়েছিল সবাইকে। তখন খাসিয়াদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় শুটিং ইউনিটের সবার। মুক্তি বলেন, ‘খাসিয়া কিছু মেয়ের সঙ্গে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। যেদিন আমরা চলে আসি, সেদিন তাঁদের কান্না দেখে আমার ও মায়ের কান্না থামছিল না। আর কোনো দিন দেখা হবে কি না, এ জন্য তাঁদের ছেড়ে আসতে খুব খারাপ লাগছিল। তাঁদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি, কিন্তু তাঁদের কথা খুব মনে পড়ে।’
প্রথমবার গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবির ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান মুক্তি। প্রথম দিনের কথা এখনো মনে আছে তাঁর। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তিনি জানান, কোনো জড়তা ছিল না তাঁর। ভাবটা এমন যেন, ক্যামেরার সামনে অভিনয় করবেন, এ আর এমন কি। মনে হয়েছিল, অভিনয় কিছুই না। কিন্তু ক্যামেরা সামনে দাঁড়ালে ঘটে বিপত্তি। মুক্তি বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর পর কোনো ডায়ালগ আসছিল না। তখন প্রচণ্ড ভয় ও আতঙ্কে ছিলাম। আমার সামনে হাজার হাজার মানুষ। পরে একটু ভালো করলে গৌতম ঘোষসহ সবাই আমার অনেক প্রশংসা করতেন।’ তবে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবিটি হলে দেখতে গিয়ে সিনেমার শুরুতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ঘুম ভেঙে দেখেন ছবি শেষ।
বেশ কিছু ছবি করার পর অভিনয়ে বিরতি দেন মুক্তি। পরে যখন ফেরেন, তখন বেছে নেন নাচ-গানের বাইরে বিকল্প ধারার ছবি। সেই সময়ে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় মুক্তি অভিনয় করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে। পরে তাঁকে দেখা যায় চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘হাসন রাজা’। বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরের ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি একটু ভিন্ন ধারার গল্প পছন্দ করতাম। সে জন্য নাচ-গানের বাইরের ছবিতে আগ্রহ তৈরি হয়। কারণ, আমি অভিনয় করতাম শখে।’
মুক্তি এখন বনশ্রীতে থাকেন। ব্যবসায়ী স্বামী আরিফ ও অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে কারিমাকে নিয়ে তাঁর সংসার। একই বাড়ির নিচতলায় থাকেন মুক্তির মা অভিনেত্রী আনোয়ারা। মুক্তি জানান, বাসায় মেয়েকে দেখাশোনা ও লেখালেখি করেই তাঁর সময় কাটে। একটি ধারাবাহিক নাটকের গল্প লিখছেন তিনি। অনেক দিন হলো সিনেমায় অভিনয়ে অনিয়মিত। নাটকও ছেড়েছেন চার-পাঁচ বছর হলো। অভিনয়ে ফিরবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিনয়কে আমি ভালোবাসি এবং সম্মান করি। কিন্তু অভিনয়ে আর ফেরার ইচ্ছা নেই। তবে আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি ও নাটক প্রযোজনা করব।’