কাউকে আটকে রাখা যায়নি : সাদ
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের কাছে প্রশ্ন, ‘আপনার তো কাল পাবলিক পরীক্ষা। প্রস্তুতি কেমন?’ তাঁর উত্তর, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি...।’ অর্থাৎ বাকিটা দেখা যাবে পরীক্ষার ‘হলে’। আড়াল ভেঙে অবশেষে গত সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাদ। উদ্দেশ্য, রেহানা মরিয়ম নূর–এর স্বদেশ অভিষেক ও আরও একটি অর্জনের খবর জানানো। পাশাপাশি সাংবাদিকদের কাছ থেকে ছবির প্রতিক্রিয়া জানা।
গতকাল বিকেলে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে পাওয়া গেল শান্ত, সৌম্য, বিনয়ী এক তরুণকে। দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি বলে সত্যিই দুঃখিত। আমরা আসলে অপেক্ষায় ছিলাম। আপনারা ছবিটি দেখেছেন, আপনাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।’ আজ শুক্রবার দেশের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে রেহানা। কান, অ্যাপসাসহ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হওয়ার পর গত বুধবার ঢাকায় ছিল ছবিটির প্রেস শো।
চলচ্চিত্রকার হবেন, শৈশবে এমন স্বপ্ন ছিল না সাদের। সিনেমায় এসেছেন এক নবস্বপ্নে তাড়িত হয়ে। তবে শোরগোল এড়িয়ে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে আড়ালে ছিলেন এত দিন। নিজের দিকে সবার দৃষ্টি ফেরাতে চাননি, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাও খুব একটা স্বস্তি দেয় না তাঁকে। নীরবে কেবল কাজটাই করে যেতে চেয়েছিলেন। রেহানার দলের লোকজনও তাঁকে সেভাবে পেয়েছেন। ছবির অন্যতম অভিনয়শিল্পী আফিয়া তাবাসসুম বললেন, ‘শুটিংয়ে উচ্চ স্বরে কাউকে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখিনি। আমরা সবাই অনেকটা ইশারায় অন্যদের ভাষা বুঝে কাজ করে যেতাম। চিত্রগ্রাহকের দৃশ্য পছন্দ না হলে, আবার করতে হতো। বাঁধন আপু কখনই বিরক্ত হতেন না, বরং সহযোগিতা করতেন। সাদ ভাইয়া চরিত্রটা বুঝে নিতে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন।’
শুরুতে একটি চেয়ার ছিল ফাঁকা। সংবাদ সম্মেলন শুরু হতেই নাটকীয় কায়দায় মিলনায়তনে প্রবেশ করেন আজমেরী হক বাঁধন। দূর থেকে জানান, ‘আমি একটি পুরস্কার জিতেছি।’ জানা গেল, এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসের (অ্যাপসা) ১৪তম আয়োজনে যৌথভাবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার গ্র্যান্ড জুরি জিতেছে রেহানা। একই সঙ্গে বাঁধন জিতেছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।
রেহানায় বাংলাদেশের নারীদের সংকটময় পথচলার গল্প শব্দ, রং আর অভিনয়ের বুননে পর্দায় তুলেছে সাদের দল। পরিচালক সাদ বলেন, ‘যখন যাকে দরকার ছিল, পেয়েছি। যখন যে কাজটা করা দরকার ছিল, করতে পেরেছি। কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে এটা সম্ভব ছিল না। সব ক্ষেত্রে আমার লাক ফেবার করেছে।’ দেশে সিনেমা বানানোর পরিবেশ কতটা কঠিন? এ প্রশ্নে সাদ বলেন, ‘যে যার সিনেমাটা কিন্তু ঠিকই বানাচ্ছে। কাউকে আটকে রাখা যায়নি।’
পরিচালনায় আসার আগে সাদ ছিলেন সিনেমার সাধারণ এক দর্শক। তাই জানতে চাই, সাধারণ দর্শকের কাছ থেকে রেহানা নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করেন? সাদ বললেন, ‘দর্শক যদি ভালো বলে, ভালো লাগবে। মন্দ বললে খারাপ লাগবে।’ সবশেষে নিজের ছবি নিয়ে কতটা তৃপ্ত জানতে চাইলে সাদ বলেন, ‘হয়তো আরও অনেক কিছু করার ছিল। কিন্তু আমি খুশি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছবির নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক, কাস্টিং ডিরেক্টর ইয়াছির আল হক, অভিনয়শিল্পী জোপারি লুই, চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল, কালারিস্ট চিন্ময় রায় প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সাংবাদিক নূর সাফা জুলহাজ।