কলকাতায় মোশাররফের ফ্যান ক্লাব, শাকিবের স্টেজ শোতে উপচে পড়া ভিড়
শিল্পীর কোনো সীমারেখা নেই। শিল্পের টানে শিল্পী ছুটে চলেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে আর সীমানা ছাড়িয়ে সুবাস ছড়ান নিজের দেশের। শিল্প আর শিল্পীর সঙ্গে দেশের নাম উচ্চারিত হয় গর্বের সঙ্গে। শিল্পীরাও নিজের দেশের চেতনাকে ধারণ করেই উজাড় করে মেলে ধরেন সিনেমায়। জায়গা করে নেন দর্শকের মনে। ভিনদেশে দর্শকচাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার প্রযোজক-পরিচালকেরা তারকাদের পেছনে অর্থলগ্নি করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
মাসখানেক আগে ভারতে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি অভিনেতা মোশাররফ করিমের সিনেমা ডিকশনারি। ভারতে এই অভিনেতার প্রথম ছবি মুক্তির পরই হইচই পড়ে যায়। করোনা মহামারির এই সময়েও দল বেঁধে প্রেক্ষাগৃহে ছোটেন তাঁর কলকাতার ভক্তরা। কলকাতায় দর্শকচাহিদার কারণে রাস্তায় সাঁটানো পোস্টার আর বিলবোর্ডে মোশাররফ করিমকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছেন প্রযোজক আর পরিচালকেরা। ভারতীয় গণমাধ্যমে মোশাররফ করিমকে বাংলাদেশের শাহরুখ খান হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে জয়া আহসান, শাকিব খান কলকাতায় দারুণ জনপ্রিয়। তারও আগে থেকে চিত্রনায়ক ফেরদৌস প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করে চলছেন সেখানে।
‘ভালোবেসে গড়ে তুলেছে “মোশাররফ করিম ফ্যান ক্লাব”ও। সেই ক্লাব থেকে জানানো হয়, ক্লাবের সদস্যরা নতুন ছবিটা দেখার জন্য একটি প্রদর্শনীর সব টিকিট কিনে নিয়েছেন। তাঁরা আমার ছবি নিয়ে খুবই এক্সাইটেড।’মোশাররফ করিম
নাটকে অভিনয়ের সুবাদে কলকাতায় মোশাররফ করিমের অসংখ্য ভক্ত তৈরি হয়েছে। মাঝেমধ্যে যখন কলকাতায় যান, খবর পেলেই তাঁরা ছুটে আসেন, দেখা করেন। ছবি তোলেন। এবার যখন ‘ডিকশানারি’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, কলকাতার মোশাররফ ভক্তদের মধ্যে যেন ঈদের আনন্দ। এই অভিনেতা বললেন, ‘কলকাতায় এলে আগে নাটক, ছবি নিয়ে ওখানকার ভক্তদের সঙ্গে কথা হতো। ভালোবেসে গড়ে তুলেছে “মোশাররফ করিম ফ্যান ক্লাব”ও। সেই ক্লাব থেকে জানানো হয়, ক্লাবের সদস্যরা নতুন ছবিটা দেখার জন্য একটি প্রদর্শনীর সব টিকিট কিনে নিয়েছেন। তাঁরা আমার ছবি নিয়ে খুবই এক্সাইটেড। এ ঘটনায় আমি আপ্লুত।’
ঢালিউডে দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। পাঁচ বছর আগে ভারত–বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শিকারি’র মধ্য দিয়ে তিনি ভারতেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। সেখানকার তারকাদের তুমুল প্রতিযোগিতার বাজারে ঠিকই নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে সেখানকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাঁকে নিয়ে আরও ছবি নির্মাণে আগ্রহী হয়। ‘নবাব’, ‘নাকাব’, ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিতে অভিনয় করে শাকিবের জনপ্রিয়তার পারদ বাড়তে থাকে হু হু করে। দর্শকচাহিদার কারণে ভারতে স্টেজ শোতে পারফর্ম করতে আমন্ত্রণ আসতে থাকে।
‘সেই দেশে এত মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, স্টেজ শোতে না গেলে বুঝতাম না। স্টেজ শোতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে হিমশিম হতে দেখেছি।’শাকিব খান
ভারতের দর্শক তাঁকে কতটা আপন করে নিয়েছেন, স্টেজ শো না করলে তা বুঝতেনই না এই ঢালিউড তারকা। বললেন, ‘ভারতে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। তবু সেখানকার দর্শক আমাকে দুহাত ভরে গ্রহণ করেছেন। করোনা মহামারি না এলে এত দিনে আরও বেশ কয়েকটি কাজ হয়ে যেত। সিনেমার কাজ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের আশপাশে বেশ কয়েকটি স্টেজ শো করেছি। সেই দেশে এত মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, স্টেজ শোতে না গেলে বুঝতাম না। স্টেজ শোতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে হিমশিম হতে দেখেছি। আমার ছবি মুক্তির পর সেখানকার দর্শকদের উচ্ছ্বাস আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
‘বাংলাদেশে ট্যালেন্টের অভাব নেই। আমি তো বলব, কোনো অংশে ভারতের চেয়ে কম নয়।’অশোক ধানুকা, প্রযোজক
শাকিব খানকে নিয়ে একাধিক ছবি বানিয়েছে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস কে মুভিজ। জয়া আহসান, শাকিব খানসহ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী যে ভারতেও সমান জনপ্রিয়, তা ভালোভাবেই জানেন এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অশোক ধানুকা। প্রথম আলোকে এই প্রযোজক বললেন, ‘বাংলাদেশে ট্যালেন্টের অভাব নেই। আমি তো বলব, কোনো অংশে ভারতের চেয়ে কম নয়।’