পৃথিবীতে করোনা বলে কিছু না থাকলে বর্তমান সময়টা নিঃসন্দেহে অন্য রকম হতো। অন্তত মেঘলা, মিথিলা, শান্তার জীবন যে বদলে যেত, এটি হলফ করেই বলা যায়। কারণ, এই তিন বাংলাদেশি অভিনেত্রী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বলিউড ও তামিল সিনেমার খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। হাতে ছিল বড় বড় চলচ্চিত্র প্রকল্প। কিন্তু করোনাভাইরাস পৃথিবীতে জেঁকে বসার কারণে এই তিন বাংলাদেশি অভিনেত্রীর বলিউড ও তামিল ছবিতে অভিনয়ের সুযোগে বাধা পড়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার আগে মেঘলা মুক্তা তাঁর দ্বিতীয় তামিল ছবির শুটিং শেষ করেছিলেন। ছবির নাম ছিল ‘ইয়েরা চেরা’। সেই ছবির কাজ শেষ হতে না হতেই তৃতীয় ছবির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মার্চ মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরতে হয় তাঁকে। ১৫ দিনের জন্য তিনি এসেছিলেন। কিন্তু এরপর আর ফেরা হয়নি ভারতে। এ কারণে তৃতীয় তামিল ছবির কাজে আর যোগ দেওয়া হয়নি। মেঘলা মুক্তা বলেন, ‘খুব অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ১৫ দিনের জন্য এসেছিলাম, সেটা এখন ৭ মাসে গড়াচ্ছে। এত বড় সময়ের গ্যাপ হয়ে গেল, জানি না তৃতীয় ছবিটা করা হবে কি না। করোনার আগে সাউথ ইন্ডিয়ায় খুব ভালোই কাজ করছিলাম। সবকিছু জটিল হয়ে গেল।’ ২০১৯ সালে মেঘলা মুক্তা অভিনীত প্রথম তামিল ছবি ‘সাকালাকালা ভাল্লাবুড়ু’ দক্ষিণ ভারতের প্রায় দেড় শ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। গত বছরের শেষে তিনি তাঁর দ্বিতীয় ছবির শুটিং শুরু করেন। কথা ছিল, এ বছরের এপ্রিলে সে ছবিও মুক্তি পাবে। কিন্তু মহামারিকাল সেই ছবির মুক্তিও পিছিয়ে দিয়েছে। হতাশ কণ্ঠেই মেঘলা বলেন, ‘জানি না, আবার কবে সব ঠিক হবে। কবে আবার কাজে ফিরতে পারব।’
তানজিয়া মিথিলাও করোনাকাল শুরুর ঠিক মাসখানেক আগে নিজের প্রথম বলিউড ছবির শুটিং শেষ করেন। ডিসেম্বরে ‘রোহিঙ্গা’ নামের ছবির শুটিং করে জানুয়ারিতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর নতুন আরেকটি বলিউড ছবির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য মার্চ মাসে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
এদিকে বাংলাদেশি মডেল তানজিয়া মিথিলাও করোনাকাল শুরুর ঠিক মাসখানেক আগে নিজের প্রথম বলিউড ছবির শুটিং শেষ করেন। ডিসেম্বরে ‘রোহিঙ্গা’ নামের ছবির শুটিং করে জানুয়ারিতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর নতুন আরেকটি বলিউড ছবির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য মার্চ মাসে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কথা ছিল, সেখানে এক মাসের জন্য একটি অভিনয়ের কর্মশালায় অংশ নেবেন। কিন্তু করোনায় ভেস্তে গেল সব পরিকল্পনা। এই যাত্রায় ভারতীয় গায়ক টনি কাক্কারের ‘কুর্তা পায়জামা’ নামের একটি গানের ভিডিওর মডেল হওয়ার কথাও ছিল মিথিলার। কিন্তু মার্চে মুম্বাই ফিরে যেতে না পারায় সুযোগটি তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়। মিথিলা জানান, জুন মাসে ‘কুর্তা পায়জামা’ গানের ভিডিওর শুটিংয়ের জন্য সময় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে মুম্বাইয়ে যেতে না পারার কারণে তাঁর জায়গায় নেওয়া হয় ‘বিগ বস’খ্যাত শাহনাজ গিলকে।
করোনা না থাকলে হয়তো এত দিনে আরও কিছু প্রকল্পে যুক্ত হতে পারতাম, দেশের জন্য কিছু সুখবর নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু এখন সব থেমে আছে। পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে সুসময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
বাংলাদেশি মডেল শান্তা পালও আছেন এই তালিকায়। তেলেগু ছবিতে তাঁর অভিষেকও আটকে গেছে। সব ঠিকঠাক ছিল। অডিশন, লুক টেস্ট দিয়ে মার্চ মাসের দিকে ভারত থেকে দেশে ফেরেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ ও ভারতে লকডাউন শুরু হয়। এ কারণে ৩৫ দিনের শুটিং শিডিউল দিয়েও কাজে যোগ দিতে পারেননি শান্তা। তিনি বলেন, ‘করোনা না থাকলে হয়তো এত দিনে আরও কিছু প্রকল্পে যুক্ত হতে পারতাম, দেশের জন্য কিছু সুখবর নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু এখন সব থেমে আছে। পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে সুসময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’
শান্তা পাল ‘ইয়ে রা লা ভা’ নামের একটি তেলেগু ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। এর পরিচালক বিশ্বনাথ রাও। এ ছাড়া এই বাংলাদেশি মডেলের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বাংলা ছবিতেও অভিনয়ের কথা ছিল। তাঁর বিপরীতে ছিলেন টালিউডের অঙ্কুশ।
কিন্তু এখন বাংলাদেশি এই অভিনেত্রীরা আদৌ কোনো কাজে যুক্ত হবেন, তাঁদের জন্য ভিনদেশের শুটিং টিম অপেক্ষা করবে কি না, এ নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। করোনা এই মডেল ও অভিনেত্রীদের ক্যারিয়ারকে রীতিমতো অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।