ওদের আছে আইএমডিবি, আমাদের বিএমডিবি
আইএমডিবি (ইন্টারন্যাশনাল মুভি ডেটাবেইস) থেকে সারা বিশ্বের সিনেমা সম্পর্ক সহজেই জানা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমা সম্পর্কে জানার এমন কোনো সাইট আমাদের ছিল না। এযাবৎকালে দেশে কত সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, সে–সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে সহজে জানার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। সেসব সিনেমার মুক্তির তারিখ, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী কারা—এসব তথ্য তেমন একটা পাওয়া যেত না। বাংলা সিনেমা নিয়ে আইএমডিবির মতো একটা সাইট করলে কেমন হয়? এই ভাবনা থেকেই তরুণ চলচ্চিত্রপ্রেমী নাজমুল হাসান দারাশিকো ২০১০ সালে বিএমডিবির (বাংলা মুভি ডেটাবেইস) কাজ শুরু করেন। দুই বছর প্রস্তুতির পরে ২০১৩ সালে ‘প্রেম প্রেম পাগলামি’ সিনেমা দিয়ে শুরু হয় তথ্য লিপিবদ্ধের কাজ।
প্রধান উদ্যোক্তা দারাশিকো বলেন, ‘মুখ ও মুখোশ’–পরবর্তী অনেক সিনেমার সেভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আমরা চেষ্টা করেছি কাকরাইলের প্রযোজনা ও ডিস্ট্রিবিউশন অফিস, এফডিসির অফিস, প্রডাকশন হাউস থেকে পোস্টার, ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতে। অনেক প্রযোজক, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীর কাছে আমরা সাহায্য চেয়েছি। আইএমডিবি কী তাঁরা জানেনই না। যে কারণে অনেকের সেভাবে সহায়তা করতে চাননি। মনে করেছেন এটা ইউটিউবের মতো কোনো সাইট, যেখানে বাংলাদেশের সব সিনেমা আপলোড করা হবে।’ তিনি আরও জানালেন, তাঁর বন্ধু আইটি স্পেশালিস্ট নেজাম উদ্দীন প্রযুক্তিগত সহায়তা করেছেন। তবে পরে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় দারাশিকো সরাসরি দেখভালের দায়িত্ব থেকে সরে যান। বিএমডিবির দায়িত্ব নেন তার সহযোগী ওয়াহিদ সুজন। পরে যোগ দেন মাহবুবুল হক ওয়াকিম।
এই মুভি ডেটাবেইস গত ৯ বছরে ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৮ ও ২০০২ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮৬০টির বেশি সিনেমার তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব সিনেমার ৫ শতাধিক অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। এর মধ্যে শতাধিক কলাকুশলীর কাজের বিস্তারিত তথ্য যোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া কোন সিনেমা এখন হলে চলছে, কোনটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে, কোন সিনেমার শুটিং ও পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ চলছে—এসব তথ্য বিএমডিবিতে পাওয়া যাবে।
তথ্য সংরক্ষণে তাঁরা অনুসরণ করেন আইএমডিবি সাইট। প্রথমে সিনেমাটির গল্পের সারাংশ দেন। পরে সিনেমাটি পোস্টার সংগ্রহ করেন। যোগ করেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীর নাম এবং তাঁদের অন্যান্য কাজ। সিনেমাটির ব্যবসায়িক দিক ও কোনো পুরস্কার জয় করেছে কি না, সেই তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া চার হাজারের বেশি সিনেমার তথ্য লিপিবদ্ধ করা। এ জন্য তাঁরা বাংলা চলচ্চিত্রের ওপর সব বই সংগ্রহ করেছেন। বিশ্বস্ত ইউটিউব ও সিনেমা নিয়ে যাঁদের খুঁটিনাটি ভালো জানা আছে, তাঁদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।
তখন সিনেমা নিয়ে বিভিন্ন ব্লগে লিখতেন ওয়াহিদ সুজন, সিনেমাবিষয়ক লেখা সম্পাদনাও করতেন। এসব কাজ করতে গিয়েই দারাশিকোর সঙ্গে পরিচয়। তিনি মনে করেন, ‘এখনো সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোছনা’। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। অনেক বইতেও এসব সিনেমা সম্পর্কে তথ্য নেই।
আবার সবার পক্ষে এত এত সিনেমার বই সংগ্রহে রাখা কঠিন। এ জন্য আমরা অনলাইনের এই কাজটিকে গুরুত্বসহকারে নিই।’ তিনি বলেন, ‘বহুবার আমাদের থেমে যেতে হয়েছে। বাংলা মুভির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই সিনেমা নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখান না। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময় কথাও শুনতে হয়েছে। আট বছর ধরে কাজ করার পরে একবার ভেবেছিলাম বন্ধ করে দিই। পরে মনে হলো বাংলা সিনেমার জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। যতই কষ্ট হোক বাংলাদেশের সব সিনেমার তথ্য সংরক্ষণ করব।’
এই সাইট থেকে আপনাদের কোনো আয় হয় কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গুগল অ্যাডসেন্স থেকে অল্প টাকা আসে। সেটা থেকে ডোমেইন, হোস্টিংয়ের খরচ উঠে আসে। মাঝেমধ্যে রাইটারদের বই গিফট করি। আর পুরো সাইট স্বেচ্ছাশ্রমে চলে।’ অনেকেই কোনো তথ্য ভুল থাকলে সংশোধন করে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন ওয়াকিম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা দুই থেকে তিনটি সিনেমার তথ্য সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি। সিনেমার পাশাপাশি অনেক জনপ্রিয় নাটক রয়েছে। এখন ওয়েভ ফিল্ম, সিরিজ হচ্ছে। সেসব নিয়ে তথ্য দিতে চাই। এ ছাড়া সিনেমা নিয়ে নিউজ আকারেও আমাদের তথ্য সরবরাহের কাজ চলছে। আমরা চাই নাটক, সিনেমা, ওটিটি নিয়ে সবাই জরুরি তথ্যের জন্য আমাদের বিএমডিবিতে সার্চ করুক।’