এফডিসিতে উত্তেজনা বাড়ছেই
বিএফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে ইস্যু যেন থামছেই না। ধারণা করা হয়েছিল, নির্বাচনের আগে থেকে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত এফডিসির আঙিনা শান্ত হবে। কিন্তু না, তা আর হচ্ছে না আপাতত। নির্বাচন–পরবর্তী মিশা-জায়েদ প্যানেলের দুটি বিজয়ী পদের ফলকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে আবার নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বাতিলের ব্যাপারে ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নতুন দিকনির্দেশনা আসার পর এফডিসি ঘিরে দুই প্যানেলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পর ২৯ তারিখ ভোরে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ওই দিনই আগের ফলাফল রেখেই নিপুণের করা আপিল নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু সন্তুষ্ট না হওয়াতে নিপুণ শিল্পী সমিতির নির্বাচনী গঠনতন্ত্রবহির্ভূত ভোট কেনাবেচার অভিযোগ এনে জায়েদ খান ও চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বাতিল চেয়ে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
নিপুণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের একটি আবেদন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হয়ে পুনরায় আপিল বিভাগের কাছে দিকনির্দেশনার জন্য আসে। চিঠিতে বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আপিল বিভাগের চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে আপিল বিভাগের হাতে আসে চিঠিটি।
এদিকে চিঠির কথা প্রকাশ হওয়ার পর ওই দিনই সন্ধ্যা থেকে বিএফডিসিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দুই প্যানেল থেকেই বিষয়টি নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীসহ দুই প্যানেলের নেতা–কর্মীরা বিএফডিসিতে ছুটে যান। এ নিয়ে পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতির আঙিনা থেকে শুরু করে মান্না ডিজিটালের সামনের আঙিনা পর্যন্ত জটলা তৈরি হয়। এখন কী হবে? জায়েদ ও চুন্নুর প্রার্থিতার ফল তাহলে কি বাতিল হয়ে যাবে? উপস্থিত সবার মধ্যেই এই প্রশ্ন জোরেশোরে ঘুরপাক খেতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা জায়গায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সামনে আসে।
কিন্তু প্রার্থিতার ফল বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ক্ষমতা যাঁর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে, আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি ওই দিন। বুধবার সন্ধ্যায় যখন খবরটি জানাজানি হয়ে যায়, ওই সময় তিনি বিএফডিসিতে থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের আগেই বেরিয়ে যান। তবে ওই দিনই অভিযোগকারী নিপুণকে ফোনে পাওয়া যায়। মন্ত্রণালয়ের এমন দিকনির্দেশনা আসাতে খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
নিপুণ বলেছিলেন, ‘ডকুমেন্টসহ যে অভিযোগগুলো আমরা দিয়েছিলাম, তাতে পুরো নির্বাচনের ফলাফলই বাতিল হওয়ার কথা বলেছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু আমরা বলেছি, যে দুই পদ নিয়ে অভিযোগ, ওই দুই পদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। পরে অভিযোগের ডকুমেন্টগুলো দেখে ওই দুজনের ব্যাপারে আপিল বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।’ সেদিন তিনি এ–ও বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের অভিযোগগুলো আমলেই নেয়নি। বাধ্য হয়ে মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি আমরা।’
এদিকে এই উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যে বিষয়টির ব্যাপারে বাদী ও বিবাদী উভয়কে নিয়ে আগামী শনিবার বিকেলে বিএফডিসিতে বসবেন বলে জানিয়েছেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টির সুরাহা করতে মন্ত্রণালয় আমার ওপর সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছে। শনিবার দুই পক্ষের সঙ্গে বসব। অভিযোগগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি সামারি তৈরি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নিবন্ধন ওই মন্ত্রণালয়েই। সুতরাং সেখান থেকে আমাদের সামারি দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।’
এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে আপিল বিভাগের কাছে এমন চিঠির ব্যাপারে জায়েদ খান জানান, নির্বাচনের ফলাফলের পর ২৯ জানুয়ারি করা আপিলের নিষ্পত্তি ও চূড়ান্ত রায় নিপুণরা সবাই মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরের কাগজ আমার কাছে আছে। এরপর নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।’
প্রশ্ন রেখে জায়েদ খান বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনি নির্ধারিত সময় পরও আবেদন করলেন। করেছেন নির্বাচন কমিশনার বরাবর। তাহলে আপিল বিভাগ ওই আবেদন মন্ত্রণালয়ে কীভাবে পাঠায়?’ এই নায়ক বলেন, ‘এসব চিঠির কোনো ভিত্তি নেই। ফলাফল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এরপরও বাদীর কিছু বলার থাকলে মহামান্য কোর্টে গিয়ে বলতে পারেন।’
বিষয়টি নিয়ে তো আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান দুই পক্ষকে নিয়ে বসতে চান। আপনি কী বলবেন? এ প্রশ্নে জায়েদ খান বলেন, ‘আমাকেও সোহান ভাই ফোন দিয়েছিলেন। চিঠিও দেবেন বলেছেন। বসতে চান তিনি। আমি তাঁকে বলেছি, আমি কেন আপিল বোর্ডের সঙ্গে বসব। কারণ, আপিল বোর্ড তো এখন বিলুপ্ত। কার্যকারিতা ২৯ তারিখেই শেষ হয়ে গেছে। সামনে কমিটির শপথ। সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’
জায়েদ খানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘না বসতে চাইলে আমরা আমাদের মতো সিদ্ধান্ত দিয়ে দেব। তার পক্ষেও তো ফল যেতে পারে। যদি না আসেন, অভিযোগগুলোর যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণ নাই-ই করেন, তাহলে তার পক্ষে রায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সেটা আর থাকছে না।’ বিবাদী জায়েদ খান শনিবারের আলোচনায় না বসতে চাইলেও বাদী নিপুণ অংশ নেবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিষয়ে আপিল বোর্ডের একটি চিঠি আজ (বৃহস্পতিবার) হাতে পেয়েছি। তাতে শনিবার বিকেলে অভিযোগের প্রমাণাদি নিয়ে বিএফডিসিতে আমাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। আমি থাকব।’
এদিকে নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়িটা চলচ্চিত্রের বাইরের মানুষ পছন্দ তো করছেনই না, সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও অপছন্দ করছেন। এবারের নির্বাচনে জয়ী আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী বলেন, ‘এই নির্বাচন যে এত দূর গড়াবে, বুঝিনি। এত বাড়াবাড়ি করার কারণে সবাই আমাদের থুতু দিচ্ছেন। ঘরে–বাইরে সব জায়গায় অস্বস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের। আর ভালো লাগছে না এসব।’