সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সর্বশেষ খবর পাওয়া গেছে৷ এবারের নির্বাচনে ২০২২-২৪ মেয়াদের জন্য সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন জায়েদ খান।
জনপ্রিয় তারকাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে এবারের নির্বাচন। তারকাদের একনজর দেখার জন্য এফডিসির প্রধান ফটকে সকাল থেকেই ছিল ভিড়। ভিড় গিয়ে ঠেকে এফডিসির সামনের উড়ালসড়কের কাছে। বিভিন্ন বয়সী নারী–পুরুষকে দেখা যায় এফডিসির সামনে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকতে। একেকটা গাড়ি ঢোকে আর বের হয়, অমনি সাধারণ দর্শকের চিৎকার, দেখ দেখ কোন নায়ক–নায়িকা যায়। সারা দিনের এমন উৎসবমুখর পরিবেশের পর জানা গেল বিজয়ীদের নাম।
গতকাল শুক্রবার সারা দিন নির্বাচন এবং আজ শনিবার ভোররাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোট গণনা শেষে এগিয়ে থেকে আগামী দুই বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন। ইলিয়াস কাঞ্চন ও জায়েদ খান ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ১৯১ ও ১৭৬টি। তাঁদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি পদে মিশা সওদাগর ১৪৮টি ভোট পেয়েছেন। আর নিপুন ১৬৩টি ভোট।
এ ছাড়া অন্যান্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন সহসভাপতি পদে ডিপজল ও রুবেল। সহসাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক জয়ী হয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন অভিনেত্রী শাহানূর৷ সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মামনুন ইমন জয়ী হয়েছেন৷ আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন জয় চৌধুরী। দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আরমান।
এ ছাড়া কার্যকরী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে অঞ্জনা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, সুচরিতা, আলীরাজ, মৌসুমী, চুন্নু আর কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের ফেরদৌস, কেয়া, জেসমিন ও অমিত হাসান।
শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে ছিল শঙ্কাও। তাই কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল এ নির্বাচন ঘিরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে নির্বাচনের দিন প্রথম এফডিসিতে পা রাখেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। আস্তে আস্তে তারকাদের আনাগোনায় মুখর হতে থাকে বিএফডিসির আঙিনা। তবে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী এবং তারকা ভোটাররা মিস করেছেন তাঁদের অনেক তারকাবন্ধু, সহকর্মী ও প্রিয়জনকে। কেউ ছিলেন দেশের বাইরে, কেউবা দেশে থাকলেও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোট দিতে আসেননি। অন্যদিকে, ডলি জহুরের মতো অভিনয়শিল্পী জানালেন, শিল্পী সমিতির ভোট দিতেই তিনি দেশের বাইরে থেকে এসেছেন।
ডলি জহুর ভোট দিতে এসেছিলেন শর্মিলী আহমেদ ও দিলারা জামানকে নিয়ে। এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছিলেন জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী মিরানা জামানও। দিনব্যাপী এফডিসিতে অনুষ্ঠেয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোট ঘিরে ছিল চাপা উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ; ছিল উৎসব–উৎকণ্ঠাও। শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
বছরের অন্যান্য সময়ে চলচ্চিত্রের যেসব তারকাকে এফডিসিতে আসতে দেখা যায় না, তাঁরাও এদিনটায় একবার আসেন। দীর্ঘদিন যেসব শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয় না, তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দেন। কথা বলেন। ভালো–মন্দ জানার চেষ্টা করেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটদানের এই দিনে তেমনই এক উপলক্ষ তৈরি হওয়ায় দেখা হয় মঞ্চ-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী জাহিদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের।
ভোটদানের জন্য এফডিসিতে ঢোকার সময় জাহিদ হাসানের গাড়ি দেখতে পেয়ে ফেরদৌস সামনে এসে দাঁড়ান এবং কথা বলেন। জাহিদের উদ্দেশে ফেরদৌস বলেন, ‘ভাই, ভোট নয়; জাহিদ ভাই, আমাকে ভালোবাসা দেবেন। এটুকু ছোট ভাই হিসেবে আপনার কাছে আমার চাওয়া।’ এ সময় জাহিদ হাসান হাসতে হাসতে ফেরদৌসকে বলেন, ‘ছোট ভাই, তোমাদের জন্য আমার ভালোবাসা কোনো দিন ফুরাবে না। এ ভালোবাসা চলবে, চলতেই থাকবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচনে ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা–জায়েদ প্যানেলের মধ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, ভোটের দিন সেই উত্তেজনা অনেক কম ছিল। তবে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের মধ্যে ছিল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। দুপুরের বিরতির আগে হঠাৎ নিপুণ তাঁর বিরোধী প্যানেলের জায়েদ খানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট সংগ্রহের অভিযোগ করেন। এরপর জায়েদও জানান, নিপুণের প্যানেলের একজন প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট সংগ্রহ করছেন। তবে সেই সময় কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিপুণ বিষয়টি একাধিকবার নির্বাচন কমিশনের নজরে আনলে তারা লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে দুই প্যানেলের প্রার্থীদের সরিয়ে দেন।
অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের নির্বাচন ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। ভেতরে প্রবেশ ছিল বেশ কড়াকড়ি। এ কারণে এফিডিসির বাইরে যতটা না জটলা ছিল, তার চেয়ে বেশ জটলামুক্ত ছিল ভেতরের পরিবেশ। এ কারণে তারকা শিল্পীরা অনেকটাই নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে চিত্রনায়িকা বুবলী বলেন, ‘ভালো লেগেছে। স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিলাম। প্রার্থীদের মধ্যে বেশ টান টান উত্তেজনা দেখা গেছে।’
বিকেলের দিকে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে বসে ভোটের পরিবেশ নিয়ে নায়ক আলমগীর বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশে ভোট হয়েছে। এটি ভালো দিক।’ ভোট দিতে এসেছিলেন আনোয়ারা, জাহিদ হাসান, আসাদুজ্জামান নূর, নূতন, শহীদুজ্জামান সেলিম, আমিন খান, অপু বিশ্বাস, বিদ্যা সিনহা মিম, ববি, বাপ্পী, মুক্তি, সিমলা, দীঘি প্রমুখ।
গতকাল সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢিলেঢালা ভোট চলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এফিডিসির বাগান ও ১ নম্বর ফ্লোরের পাশের রাস্তা দিয়ে লাইন ধরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ভোট দেন ভোটার। ভোটদান শেষ হয় বিকেল পাঁচটার পর। ৪২৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৩৬৫ জন।