অনিশ্চয়তা নিয়ে হলের বাতি জ্বলবে আজ
প্রায় সাত মাস পর আজ সারা দেশের সিনেমা হলের দরজা খুলবে, পর্দায় আলো পড়বে। তবে মানতে হবে কিছু শর্ত। মোট আসনের ৫০ শতাংশের বেশি টিকিট বিক্রি করা যাবে না। বজায় রাখতে হবে দূরত্ব। নিয়মিত স্যানিটাইজও করতে হবে হল।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন জানিয়েছেন, যেহেতু সরকার বিনোদনকেন্দ্রগুলো খোলার নির্দেশ দিয়েছে, তাই সমিতির পক্ষে সারা দেশের সিনেমা হলমালিকদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
চলচ্চিত্র অনুরাগীদের কাছে খবরটা আনন্দের হলেও হলমালিকদের চিন্তা কমছে না। তারপরও ‘নিরুপায়’ হয়ে হল খুলছেন তাঁরা। কেউ কেউ আবার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরও হল খুলছেন না। তাঁদের মতে, হলে চালানোর মতো নতুন ছবি নেই। তা ছাড়া মাত্র ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হলে লাভের আশাও নেই। লাভ করতে চাইলে বাড়াতে হবে টিকিটের দাম। কিন্তু টিকিটের দাম বাড়ালে দর্শক আসবে কতজন, তা সংশয় আছে। তাহলে হল খুলে লাভ কী? সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এমনিতেই নতুন এবং বাণিজ্যসফল ছবির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির সিনেমা ব্যবসা। চলচ্চিত্রপিপাসুরাও নতুন নতুন মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। সংগত কারণেই কিছু হলমালিক এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকগুলো হলেই তাই আজ আলো জ্বলবে না। খুলবে না ঢাকার মধুমিতা, অভিসার, জোনাকী, যশোরের মনিহারের মতো বড় এবং পুরোনো সিনেমা হল। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সবারই এক কথা, হল চালানোর মতো জুতসই ছবি নেই।
আক্ষেপ নিয়ে মধুমিতা হলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ইফতেখার নওশাদ বলেন, ‘আগে একবার নবাব এলএলবি দিয়ে হল খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন আবার বন্ধের নির্দেশ আসল। প্রস্তুতি নিয়েও তাই হল বন্ধ রাখতে বাধ্য হলাম। এখন হল খোলার মতো নতুন কোনো ছবি পাচ্ছি না।’ যশোরের মনিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘শুধু পুরোনো ছবি দিয়ে কখনো হল চালানো সম্ভব না, আমরা নিরুপায়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ হলে মূল প্রবেশদ্বারে তালা। গেটে অলস সময় কাটাচ্ছে ভবঘুরে মানুষ, কেউ ঘুমাচ্ছে। কোনটি আবার ঝাড়ামোছা চলছে। অর্থাৎ এগুলো খোলার প্রস্তুতি চলছে। নতুন ও পুরোনো দুটি ছবি দিয়ে খুলবে চট্টগ্রামের সুগন্ধা, সিনেমা প্যালেস। সিনেমা প্যালেসের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন বলেন, ‘এত দিন স্টাফদের নিয়ে অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। শুক্রবার থেকে অনেক আশা নিয়ে হল খুলছি। একটি হলে চলবে নতুন ছবি আগস্ট ১৯৭৫, অন্য হলে পুরোনো ছবি আমি নেতা হব।’ মিরপুরের সনি স্কয়ারে আজ থেকে চালু হচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স।
জানা গেছে, হল খোলার ব্যাপারে প্রদর্শক সমিতি থেকে আহ্বান করেও সাড়া পাওয়া যায়নি অনেক প্রতিষ্ঠানের। পরিস্থিতি বিবেচনায় কেউ কেউ যেমন হল খুলছে না, তেমনি যাঁরা হল খুলছেন, তাঁরাও চিন্তিত। সবার মাঝে অনিশ্চয়তা। যদিও চলচ্চিত্রশিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হলগুলোর সংস্কার করে আধুনিকায়ন এবং নতুন হল বা সিনেপ্লেক্স তৈরির লক্ষ্যে এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ তহবিল গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে একটি হল সংস্কারে বা নির্মাণে ৪.৫-৫ শতাংশ সুদে ৮ বছর মেয়াদে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ঘোষণা করেছে। তবে এ ঘোষণার পরও হলমালিকদের দিক থেকে আগ্রম কম। এর কারণ কী? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘ঋণগ্রহীতা যেমন ঝুঁকি নেন, তেমনি দাতাও আগে ঋণ আদায়ের বিষয়ে ভাববেন। এটাই স্বাভাবিক। বহুদিন ধরেই উপযুক্ত স্থানীয় ছবির সরবরাহ নেই। ব্যবসাসফল ছবি ছাড়া উপায় নেই। দেশি ছবি দিয়ে যেহেতু হলগুলোকে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না, অবশ্যই তাই আমাদের আমদানি করা ছবির আশ্রয় নিতে হবে। আমরা মনে করছি, চাহিদাসম্পন্ন উপমহাদেশীয় ছবি আমদানি করে মুক্তি দিলে দর্শকদের আবারও হলমুখী করা সম্ভব হবে। দর্শক এলে হলমালিকেরাও ঋণ গ্রহণে সাহস পাবেন, ব্যাংকগুলোও আস্থা পাবে।’
সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, বারবার ধাক্কা খাওয়া সিনেমা শিল্পের জন্য আজকের দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতে মাসের পর মাস হল বন্ধ থাকার কারণে চাকরি হারিয়েছেন অনেকে, অনেকে আবার পেশা বদল করেছেন। আর্থিক তো বটেই, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে মালিকপক্ষ। এত কিছুর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে আজ আবার তাঁরা হল খুলবেন। একটাই আশা, যদি দিন ফেরে।