উৎসবের নামে তাণ্ডবলীলা চালানোর সময় মনে পড়বে কি শিশু উমায়েরের কথা...
নতুন বছর বরণ করতে ঢাকা শহরজুড়েই দেখা যায় আতশবাজি আর ফানুসের দাপট। অনেকে এতে মেতে উঠলেও সাধারণ মানুষ ও পশুপাখির জীবনের জন্য হয়ে ওঠে হুমকির কারণ। সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। একদিন পরই আবার সেই নতুন বছর। অতীতের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে জয়া লিখলেন, ‘কিন্তু সেই রাতে কী যেন হয় মানুষের। তারা ঘুমায় না। তীব্র হট্টগোল শুরু হয়, যেন যুদ্ধ!’
জয়া তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রাণীcool নামে একটি পেজের লিংক শেয়ার করেছেন। সেখানে লেখা, ‘মানুষের মতো পাখিদের কোনো ক্যালেন্ডার নেই। তারা থার্টি ফার্স্ট কবে, জানে না। অন্য আর দশটা সন্ধ্যার মতোই তারা যে যার নীড়ে ফিরে যায়। রাতে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে উঠে আবার কিচিরমিচির করবে বলে। কিন্তু সেই রাতে কী যেন হয় মানুষের। তারা ঘুমায় না। তীব্র হট্টগোল শুরু হয়, যেন যুদ্ধ!’
থার্টি ফার্স্টের রাতে চারপাশের বিকট শব্দ ও আকাশে আতশবাজি দেখে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে অনেক মানুষ ও পশুপাখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকা, বনানীসহ দেশের নানা প্রান্তে প্রতিবছর অসংখ্য পাখি মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সেগুলো তুলে ধরে লেখা হয়েছে, ‘বিকট শব্দ, আকাশে শত শত ফানুস এসে পুড়িয়ে দেয় গাছে থাকা সমস্ত পাখির ঘর। কেউ কেউ পুড়ে মরে, কেউ আতঙ্কিত হয়ে আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু আকাশটাই তো নিরাপদ নয়। কোনো কোনো পাখি মারা পড়ে তীব্র শব্দে, আবার কারও গায়ে লাগে আতশবাজি। এরপরও যেসব ভাগ্যবান পাখি তখনো বেঁচে থাকে, তাদের কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে বিল্ডিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারায়।’
এর আগে ফানুসে অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সামনে এসেছে। আতশবাজির বিকট শব্দে মানুষের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক শিশু–কিশোর অসুস্থ হয়। সব মিলিয়ে এই ফানুস ও আতশবাজি ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘জানি, এই শহরে প্রচুর মানুষও মারা যায়, কারও কারও কাছে পাখির মৃত্যু তাই আদিখ্যেতা মনে হয়। পাখিরা মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট হয় না, জানা যায় না মৃত্যুর কারণ। এমনকি মৃত পাখিদের সংখ্যাটাও জানি না আমরা কেউ। এর ফলে এই শহরের মতোই অনেক নাগরিক ভাবে, পাখির মৃত্যু? ও আর এমন কী! কিন্তু মানুষ কেন ভাবে না যে প্রতিটি প্রাণের গুরুত্ব সমান!’—লিখেছেন জয়া।
জয়ার মতে, শুধু পাখিই নয়, এই শহরের কুকুর-বিড়াল-মুরগি-কীটপতঙ্গসহ অনেক প্রাণী অস্থির হয়ে যায় নগরবাসীর আতশবাজি আর ফানুস উৎসবে। এমনকি ডিমের ভেতর বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়।
মানবিক ঘটনার উদাহরণ টেনে নগরবাসীর কাছে প্রশ্ন বলা হয়েছে, ‘আর মানুষ? তারা তো মানুষের কথাও ভাবে না। ২০২২-এর জানুয়ারির ১ তারিখ যখন নগরবাসী সারা রাত আতশবাজি উৎসব করে ঘুমাচ্ছে, তখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল চার মাস বয়সী উমায়ের। একসময় সে পরাজিত হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ছোট্ট উমায়েরের এই মৃত্যুর দায় কেন এই নগরবাসী নেবে না? আপনারা যাঁরা আতশবাজি ফুটিয়েছিলেন, তারা কেউ কি এই দায় থেকে মুক্ত?’
নতুন বছর বরণ করতে একই ঘটনা হয়তো এবারও ঘটবে। তারপরও সচেতনতার কথা তুলে ধরে জয়া লিখেছেন, ‘এ বছরও হয়তো আপনারা আতশবাজি আর ফানুসের ঝলকানিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। উৎসবের নামে এই তাণ্ডবলীলা চালানোর সময় মনে পড়বে কি শিশু উমায়েরের নিষ্পাপ মুখটির কথা? এই শহরের কুকুর-বিড়াল-পাখিসহ অসহায় প্রাণীদের করুণ মুখগুলো আপনাদের মনে পড়বে? যদি এদের কারও কথা আপনার মনে না পড়ে, অথবা মনে পড়ার পরও যদি আতশবাজি আর ফানুসের তাণ্ডব চালিয়ে যান, তাহলে জেনে রাখুন, এই প্রাণী হত্যার দায় আপনারও।’