আমাদের ডিভোর্স হয়নি, আমি-শাকিব সময় নিচ্ছি: বুবলী
ঢাকাই সিনেমার বর্তমান সময়ের আলোচিত-সমালোচিত অভিনেত্রী শবনম বুবলী। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বড় পর্দায় আসছে নায়িকার দুটি ছবি ‘দেয়ালের দেশ’ ও ‘মায়া’। এর মধ্যে ধারণা করা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয়তা পাবে ‘দেয়ালের দেশ’ ছবিটি। তবে এবার ছবি নিয়ে নয়, ঈদের আগেই নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা সমালোচনা-গুজবের সোজাসাপটা উত্তর দিয়েছেন ‘প্রহেলিকা’ অভিনেত্রী। সন্তান শেহজাদ খান বীরের বাবা শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও আবরাম খান জয়কে নিয়েও নিজের অভিব্যক্তিগুলো প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী।
‘বলা না-বলা’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিতর্কিত প্রশ্নের জবাব দিতে হাজির হয়েছেন দেশের বেসরকারি টেলিভিশন নাগরিকের স্টুডিওতে। অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব গতকাল সোমবার প্রচারিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব প্রচার করা হবে।
টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান কামরুজ্জামান বাবুর সঞ্চালনায় নিজের জীবনটাকে খোলা ডায়রির মতো মেলে ধরেছেন বুবলী। শাকিব খানের সঙ্গে অভিনেত্রীর প্রেম-বিয়ের সময়কালীন স্মৃতিকথা জানতে চান সঞ্চালক।
এমনকি বুবলী শাকিব খানের রাগ দেখেছেন কি না, আর শাকিব খানই-বা কয়বার দেখেছেন বুবলীর রাগ—উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাদের দুজনের মধ্যে একটা মিল আছে, আমি যখন চুপচাপ থাকি তখন চুপচাপ। আবার পরিবারের সঙ্গে থাকলে খুব কথা বলি। শাকিব খান কিন্তু সেটে চুপচাপ থাকেন। আবার যখন বন্ধুমহলে থাকেন তখন খুব আড্ডাবাজ। বিষয়টি আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’ শাকিবের রাগ প্রসঙ্গে বুবলী বলেন, তাঁর রাগ প্রচুর। রেগে গেলে চুপ হয়ে যান, তবে প্রকাশ করেন না। বুঝে নিতে হয়। আমিও তখন চুপচাপ হয়ে যাই। তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করি। রাগটা সঠিক হলে বোঝাতে চাই। আর না হলে সময় নিই যে তিনি হয়তো বুঝতে পারবেন। আর উল্টো দিকে আমি সহজে রাগি না। খুব যৌক্তিকভাবে রাগ করি। রাগটা আসলে তেমন নয়, প্রতিক্রিয়া দেখাই। রাগ ভাঙাতে শাকিব খানই এগিয়ে আসেন।’
শাকিব খান বুবলীকে ভালোবেসে কী নামে ডাকতেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘এটা তাঁর মুডের ওপর নির্ভর করে। বেশির ভাগ সময়ই বুবলী বলে ডাকতেন। কখনো কখনো আদর করে লক্ষ্মী বলেও ডাকতেন।’ যদিও বুবলী কী নামে ডাকতেন সেটি স্পষ্ট করে বলেননি।
বীরের জন্মদিনে বাবা-সন্তানের শুয়ে থাকার ছবি প্রসঙ্গে বুবলী বলেন, ‘এ রকমটা প্রায়ই হয়। বাবা-সন্তানের খুনসুটির দৃশ্য আমি তুলে নিই। আসলে শাকিব খানতো ব্যস্ত থাকেন, সেখান থেকেই ছেলেকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে বাবা-মায়ের দূরত্বটা এখনো মনে করে না বীর। ও আমাদের বাবা-মা-ই মনে করে। আমাদের মাঝে মাঝে স্পেসও দেয়। ও বুঝে নেয়, বাবা-মা একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। আমরা তো বিশেষ দিনগুলোর ছবি শেয়ার করি, এই জন্মদিনেও বীরের বাবা-দাদির সঙ্গে কেক কেটেছে, ইফতার করেছি। আবার বাবার জন্মদিনেও একই ঘটনা ঘটেছে।’
শাকিব-বুবলীর বর্তমান সম্পর্কের অবস্থা কী—এমন প্রশ্নের জবাবে বুবলী বলেন, ‘আমরা টাইম নিচ্ছি। আমাদের ডিভোর্স হয়নি। একটি দাম্পত্য সম্পর্কে অনেক ভুল-বোঝাবুঝি হয়। শেহজাদকে নিয়ে একা সংগ্রাম করছি। সেখান থেকে সন্তানের বাবা হিসেবে তাকে কখনো অসম্মান করিনি। আমি কখনোই আক্রমণ করিনি, বরং সব সময় কিছু হলে তার জবাব দিয়েছি। আমি চাই বীর সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠুক। গণমাধ্যমে একটি খবর এসেছিল, শাকিবের বাসা থেকে আমাকে বের করা হয়েছিল। কিন্তু এটা কখনোই ঘটেনি। শাকিবের বাসার সবাই আমাকে সম্মান করে।’
অপু ও বুবলী একসঙ্গে শাকিব খানের বাসায় গিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বুবলী বলেন, ‘দেখা হয় আমাদের। খুব স্বাভাবিক। যখন দেখা হয়েছে, আমি সর্বোচ্চ সম্মানটা দিতে চেষ্টা করেছি। এ সময় শাকিব খান বাচ্চাদের সঙ্গে খুবই ইতিবাচক থাকে। বীর বড় ভাই হিসেবে জয়কে চেনে। সবাই মিলেই বাচ্চাদের নিয়ে একটি সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। বাচ্চাদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়। জয়-বীর একই স্কুলে পড়ে। বাবা হিসেবে শাকিব চেয়েছেন দুই ভাই যাতে সম-অধিকার নিয়ে বড় হয়। সন্তানেরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আমি জয়কে খুব ভালোবাসি।’
অপু-বুবলীর মধ্যে কি ভালো বন্ধুত্ব হবে কখনো—প্রশ্নের জবাবে নায়িকা বলেন, ‘শাকিব খান একজন ম্যাচিউর মানুষ। এমন তো নয় যে উনি ফিডার খাচ্ছেন। এখানে সবাই সবার জায়গা থেকে খুব চিন্তাভাবনা করে কাজ করে। কারও দাম্পত্য জীবন সুখের হলে সেখানে অন্য কেউ ঢুকতে পারে না। আমার আর শাকিব খানের সম্পর্ক দুজনের সিদ্ধান্তে। অপুর সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ব্যাপারে সব সময়ই ওপেন স্পেস দিয়ে রেখেছি। উনি শাকিব খানের প্রশংসা করেন, কিন্তু আমাকে একা দোষারোপ করছেন। শাকিব খান ও আমার চেনাজানা ১০ বছর। এখনো আমাদের একই ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে। এটা তো কেউ কাউকে জোর করে করাতে পারে না। আমাকে সর্বোচ্চ বুলিং করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একটি ছবি পোস্ট করলেও তা নিয়েই গুজব-বিতর্ক-প্রপাগান্ডা ছড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’
অপু বিশ্বাস বুবলীকে ঘৃণা করেন—এই মন্তব্যের জবাবে বুবলীর ভাষ্য, ‘আমার কাছে মনে হয় যে প্রথমত কোনো মানুষ কখনোই অন্য মানুষকে ঘৃণা করতে পারে না। ঘৃণার বদলে আমি ঘৃণা ছড়াতে চাই না, ভালোবাসা ছড়াতে চাই। উনি ঘৃণা কেন করেন, ওই প্রশ্ন উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে করতে পারেন। কোনো মানুষ ডিভোর্সের পর বিয়ে করছে, এটা তো প্রথম না। পৃথিবীতে অহরহ হচ্ছে।’
বুবলীর সন্দেহের জেরে নাকি শাকিব খানের সঙ্গে পূজা চেরির একটি সুন্দর জুটি হয়নি—এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে নায়িকা বলেন, ‘পূজার সঙ্গে কখনোই আমার কোনো সমস্যা হয়নি। হাতাহাতি-মারামারি কিছুই হয়নি। শাকিব খান কার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করবে, সেগুলো নিয়ে আমি কখনোই বাধা দিইনি। এগুলো আসলে নোংরামির জন্য করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিপর্যায়ের শত্রুতা বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। এগুলো কেন করা হচ্ছে, আমাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ না করতে দেওয়ার জন্য? অবশ্যই কোনো না কোনো লক্ষ্য আছে। গানবাংলায় যখন আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো, সেই ইস্যুটা নিয়েও প্রপাগান্ডা ছড়ানো হলো। কারও নাম আসল না, কিন্তু আমার সিনেমা প্রসঙ্গটি আসার পরই নোংরামি শুরু হয়ে যায়। আমাকে আমার কাজ-পরিবার ছাড়া কোথাও কোনো বাজে আড্ডাতে দেখবে না। তাপস ভাই ও মুন্নি ভাবির সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব স্বাভাবিক। এই ইস্যুতে শাকিব খান মাঝেমধ্যে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। রাগের বশে অনেক সময় শোনা কথায় অনেক কিছু বলে ফেলেন। পরে অবশ্য শাকিব বিষয়টি বুঝেছেন।’