২৪-এর গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে চলচ্চিত্র বানাবেন রাফী

রায়হান রাফী চলচ্চিত্রে তাঁর আগমন, নির্মাতা হয়ে ওঠা, চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেনশফিকুল ইসলাম

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে চলচ্চিত্র বানাবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফী। আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ একাডেমিক ভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ’ নিয়ে এক আলোচনায় এই ঘোষণা দেন তিনি। চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ও সংগঠন ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’ এই আলোচনার আয়োজন করে। বার্ষিক এই আলোচনায় অতিথি হয়ে এসেছিলেন রায়হান রাফী।
শুরুতে রায়হান রাফী চলচ্চিত্রে তাঁর আগমন, নির্মাতা হয়ে ওঠা, চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনার পর তিনি উপস্থিত দর্শকের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে চলচ্চিত্র বানাবেন কি না, জবাবে রাফী চলচ্চিত্র বানানোর ঘোষণা দেন।
রাফী বলেন, ‘এই জুলাই অভ্যুত্থানে এত এত গল্প। এই জুলাই নিয়ে অনেকগুলো সিনেমা বানাতে হবে। আমি আমার জায়গা থেকে খুব চেষ্টা করব। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো নির্মাণ করব। সেটা মুগ্ধকে নিয়ে হোক বা পুরো ঘটনা নিয়ে হোক। কিংবা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া নিয়ে হোক। আর আমার তো সত্য ঘটনা বলতে ভালোই লাগে। এত এত টুইস্ট, গল্প, কেন আমি বানাব না।’

রাফী আরও বলেন, ‘সিনেমা এমনই শিল্প, যার মাধ্যমে প্রতিবাদ করা যায়, সমাজব্যবস্থাকে তুলে আনা যায়, এর মাধ্যমে একটা গল্পকে একটা জায়গায় বন্দী করা যায়। এই যে আমাদের একটা আন্দোলন হলো, একটা সময় গিয়ে কিন্তু মানুষ ভুলে যাবে। মানুষ দেখবে না, জানবে না। কিন্তু এগুলো কোনো সিনেমাতে যখন এই দৃশ্যগুলো থাকবে, তখন কিন্তু মনে থাকবে।’

তরুণদের উদ্দেশে রাফী বলেন, সিনেমার ভবিষ্যৎ আপনারাই
শফিকুল ইসলাম

আলোচিত ‘তুফান’ চলচ্চিত্র নিয়েও রায়হান রাফী কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি আমি খুব চালাকি করে বানিয়েছি। তুফানে আমরা কী দেখিয়েছি। তুফান একজন বড় সন্ত্রাসী। সে কীভাবে দেশ দখল করছে। সে একটা দলকে খুন করে আরেকটা দলকে ক্ষমতা দিয়ে দিছে ভোট ডাকাতি করে। এটা কিন্তু আগের গভর্মেন্ট এই কাজই করেছিল। কিন্তু আমি এমনভাবে গানে গানে শাকিব খানের ভাবচক্কর দিয়ে দেখিয়েছি, ওরা অনেকেই বুঝতেই পারেনি যে আসলে কী। আপনারা তুফান যদি আরেকবার খেয়াল করে দেখেন। তুফানের গল্প কিন্তু ডার্ক পলিটিকস। তো আমি পলিটিকসটাকে, ডার্ক পলিটিকসটাকে এমনভাবে দেখানোর চেষ্টা করছি সেন্সর বোর্ড বুঝতেই পারেনি যে আমি আসলে একটা ডার্ক পলিটিকসের গল্প বলছি। ভোট ডাকাতির গল্প বলছি। আমি এভাবেই সিনেমা বানানোর চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে পার পাই, মাঝেমধ্যে পাই না। যেমন অমীমাংসিত পাইনি। এই গল্পটা বললাম এ কারণে যে মানুষ যদি চায়, তাহলে সবকিছুই অর্জন করতে পারে।’

সিনেপ্লেক্স হওয়ার পর থেকে তাঁর চলচ্চিত্র বেশি দিন চলছে জানিয়ে রাফী বলেন, ‘ওই দিন সিনেপ্লেক্স একটা রিপোর্ট দিয়েছে। সিনেপ্লেক্স হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি নির্মাতাদের মধ্যে আমার চলচ্চিত্র বেশি দিন চলেছে। তুফান তো দুই মাস ধরে চলতেছে। পরাণ ছিল ৩০০ দিন, সুড়ঙ্গ ছিল ২০০ দিন। একসময় সিনেপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারলে আমার স্বপ্ন পূরণ হতো। এখন যখন দেখি সিনেপ্লেক্সে আমার সিনেমার টিকিট থাকে না। তখন খুব গর্ব হয়।’

রায়হান রাফী
কোলাজ

তরুণদের উদ্দেশে রাফী বলেন, সিনেমার ভবিষ্যৎ আপনারাই (দর্শক)। আপনাদের মতো নতুন নতুন লেখক, নতুন নতুন নির্মাতার যখন সিনেমা বানাবে, তখন ভবিষ্যৎ পরিবর্তন হবে। আপনারা যদি আমাদের সিনেমা দেখেন, কথাবার্তা বলেন, লেখেন, তাহলেই আমাদের সিনেমা পরিবর্তন হবে। তা না হলে হবে না। যেমন আমরা এত দিন পলিটিকসে যেতাম না, পলিটিকস মানে ভালো না। এ কারণে আমাদের এখানে ডার্টি পলিটিকস ঢুকে গেছে। সব ছাত্র যখন নেমে গেল, তখন কিন্তু নতুন করে আবার যাত্রা শুরু হয়ে গেল। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও একই রকম। আপনারা কেন ভালো সিনেমা হচ্ছে না, কেন হল নেই, কেন ভালো ভালো সিনেমা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, কেউ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে যাচ্ছে না।  

অনুষ্ঠানে ম্যাজিক লণ্ঠন সদস্য রোখসানা আরশি ও জেরিন আল জান্নাতের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক রীতা জান্নাত। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচককে সম্মাননা, ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন ম্যাজিক লণ্ঠন সদস্যরা। আয়োজনে সমাপনী বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ম্যাজিক লণ্ঠন সম্পাদক কাজী মামুন হায়দার।