শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমা আমদানির প্রশ্নে একমত হয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রযোজক, প্রেক্ষাগৃহমালিক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের ১৯টি সংগঠন। গত রোববার দুপুরে ১৯ সংগঠনের মোর্চা সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ একটি চিঠি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের হাতে তুলে দিয়ে জানিয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের প্রস্তাব অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরেও আনতে হবে। আপনারা যে আজ আসবেন, সেটিও তাঁকে জানিয়েছিলাম। আমরা এখন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব।’
বাংলাদেশে হিন্দি ছবি আমদানির বিষয়টি এখন সরকারের অনুমতির অপেক্ষায়। চলতি সপ্তাহেই অনুমতি মিললে ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলাদেশে মুক্তি পাবে ‘পাঠান’। তবে চলচ্চিত্রের প্রযোজক, প্রেক্ষাগৃহমালিক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের ১৯টি সংগঠন হিন্দি সিনেমা আমদানির বিষয়ে একমত হলেও বিষয়টি নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। হিন্দি সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একদল গণমাধ্যমকর্মীর সামনে খেপে গেলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমরাই একমাত্র জাতি, ভাষার জন্য গুলি খেয়ে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও এই নজির নেই। এ জন্য মাথা উঁচু করে আমরা কথা বলি। আমার দেশে উর্দু, হিন্দি ছবি চলবে কেন? আমাদের ওই সব কালচারের প্রয়োজন নেই।’
বক্তব্যে ঝন্টু আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ দেশে “পাঠান” চালাতে দেবেন না। বঙ্গবন্ধুকন্যা এই উর্দু, হিন্দি ছবি এ দেশে আসতে দেবেন না।’
উর্দু, হিন্দি ছবি এ দেশে চলা নিয়ে অতীতের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ঝন্টু বলেন, ‘অনেক দিন আগে এ দেশে যখন উর্দু–হিন্দি ছবি চলছিল, তখন আমরা চলচ্চিত্রের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এ দেশে উর্দু–হিন্দি ছবি চলুক, আমরা চাই না। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, “যা তাহলে চলবে না।’”
বঙ্গবন্ধু এ কথাও বলেছিলেন, “‘তোরা কটি ছবি দিতে পারবি?” তখন আমরা বলেছিলাম, প্রতি সপ্তাহে একটা করে নতুন ছবি দিতে পারব। তখন তিনি দৃঢ় কণ্ঠে আমাদের বলে দিলেন, “যা হিন্দি চলবে না।”’
তবে সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে গণমাধ্যমের কাছে এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘সিনেমার অভাবে অনেক সিনেমা হলের মালিকেরা হল ভেঙে ফেলেছেন। তাঁদের ব্যবসা হচ্ছে না। কারণ, একটি হলে মাসে অনেক খরচ। কর্মচারীদের বেতন, ট্যাক্সসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে এক-দেড় লাখ টাকা থাকে হলমালিকদের। কিন্তু হল ভেঙে যদি মার্কেট হয়, তাহলে কয়েক শ দোকান হবে সেখানে। আয়ও আসবে বেশি।’
এ সময় এক সংবাদকর্মী দেলোয়ার জাহান ঝন্টুকে প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আপনারা সিনেমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন? প্রশ্ন শুনেই খেপে যান ঝন্টু। উত্তেজিত হয়ে ওই সংবাদকর্মীকে তিনি বলেন, ‘তুমি তো আক্রমণাত্মক। তুমি অ্যাটাক করার জন্য প্রশ্ন করো। তুমি আর প্রশ্নই করবে না। এসব কথা বলো কেন তুমি? কেন ব্যর্থ হবো? ব্যর্থতার কী বুোঝো তুমি?’
এরপর ওই সংবাদকর্মী তাঁকে জানান, তথ্যমন্ত্রী তো হিন্দি ছবির ব্যাপারে মত দিয়েছেন। এ কথা শুনে তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী যদি অনুমতি দেন, আমরা প্রতিবাদ করব। আমাদের কথা তাঁরা শুনবেন। না শুনলে বাঙালিরা মেনে নেবে না। এর বিরুদ্ধে কথা বলবে।’
‘পাঠান’ ছবি নিয়ে যখন এফডিসিতে ১৯ সংগঠনের মিটিং হয়, তখনকার কথা উল্লেখ করে এই নির্মাতা বলেন, ‘একদিন ১৯ সংগঠনের মিটিং হচ্ছিল। আমাকে ডাকা হলো, গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কীসের মিটিং? তাঁরা বললেন, “পাঠান” এখানে আসুক আমরা চাচ্ছি।’ এ কথা শুনে বের হয়ে আসলাম। কারণ, আমি তর্ক এড়াতে চেয়েছি। আমি জানি, ওখানে আমি বেশি সাপোর্ট পাব না।’
এই পরিচালকের মত, ‘যাঁরা এসব নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের ধারণা ভুল। তাঁরা মনে করছেন “পাঠান” ছবিতে দর্শক আসবেন।এতে করে আমাদের সিনেমাতেও একসময় দর্শক বাড়বে। সিনেমা বাড়বে আমাদের। আমি বলি, নো। ওঁদের ধারণা ভুল। কারণ, “পাঠান” দেখার পর আরেকটি হিন্দি ছবি আসার অপেক্ষা করবেন দর্শক। এভাবে একটা একটা করে হিন্দি ছবি যখন আসতে থাকবে, আমার বাঙালি ভাইদের ৪০ লাখ বা ৫০ লাখ বা ৬০ লাখ টাকার সিনেমা আর চলবে না। দুই কোটি টাকার হিন্দি ছবির কাছে আমাদের এই ছবি দেখতে দর্শক হলে যাবেন না।’
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু আরও বলেন, ‘বড় বাজেটের হিন্দি ছবি সাজানো–গোছানো। দর্শক ওটাই দেখতে চাইবেন। আমাদের ছবি তলে পড়ে যাবে। এর আগেও একবার তলে পড়ে গিয়েছিল। আমি মনে কবি, যাঁরা হিন্দির পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সিদ্ধান্ত ঠিক হতে পারে, কিন্তু ধারণা ভুল।’
এই নির্মাতার ভাষ্য, ‘হিন্দির মতো আমাদের পরিচালকদের হাতে বাজেট ধরিয়ে দেন, দেখবেন মুম্বাইয়ের চাইতেও ভালো ছবি তৈরি করতে পারবে আমাদের পরিচালকেরা।’