সৃজনশীল কেউ যদি সমালোচনা নিতে না পারেন, সেটা তাঁর দৈন্য
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রের নিয়মিত মুখ শতাব্দী ওয়াদুদ। হালের আলোচিত দুটি সিরিজ ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘কারাগার’-এ ছিলেন তিনি, আছেন ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দুটি সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ও ‘বিউটি সার্কাস’-এও। কাজসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন :
কোথায় আছেন?
পাতায়া।
প্রশ্ন :
কোনো শুটিংয়ে?
আমরা ৫২ পর্বের একটি টিভি ধারাবাহিক এমন যদি হতোর শুটিং করছি।
প্রশ্ন :
ধারাবাহিকে আপনার চরিত্রটি কেমন?
বাংলা সাহিত্য ও সিনেমার বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে গল্প। দেখা যাবে, হঠাৎ তারা পাতায়াতে এসে হাজির হয়েছে। আমি করেছি প্রাগৈতিহাসিক-এর ভিখু চরিত্র। এ ছাড়া দেখা যাবে কপিল, ভানুসহ অনেক পরিচিত চরিত্র। ধারাবাহিকটি পরিচালনা করছেন আবু হায়াত মাহমুদ ও সাইদুর রহমান রাসেল।
প্রশ্ন :
একই সপ্তাহে তো আপনার দুটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে...
খুবই ভালো লাগার ব্যাপার, দুটি ছবিই আমার কাছে বিশেষ কিছু। ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর কথা যদি বলি, এটার শুটিংয়ে সবারই প্রচণ্ড পরিশ্রম হয়েছে। সুন্দরবনের এমন সব দুর্গম জায়গায় শুটিং হয়েছে, যেখানে সচরাচর যাওয়ার সুযোগ হয় না। দুই শ-আড়াই শ জনের টিম নিয়ে পুরোপুরি নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে শুটিং করা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। আর ‘বিউটি সার্কাস’ তো আমাদের হারিয়ে যাওয়া সার্কাসের ঐতিহ্য নিয়ে। এ প্রজন্মের অনেককে হয়তো ছবিটি চমকে দিতে পারে। সার্কাস তো এখন হারিয়েই গেছে। আমাদের সন্তানেরা বড় হলে তো বিশ্বাসই করবে না এমন কিছু ছিল। দুটি ছবি নিয়েই আমি আশাবাদী।
প্রশ্ন :
আপনি তো ওয়েবে নিয়মিত কাজ করছেন। দেশে যত সিরিজ হয়, প্রায় সব কটিতেই আপনি থাকেন। আপনাকে নিতেই হবে, নির্মাতাদের জন্য এমন কোনো নিয়ম আছে নাকি?
কী যে বলেন (সশব্দ হাসি)!
প্রশ্ন :
‘আগস্ট ১৪’ ওয়েবে আপনার এ চাহিদার পেছনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কেবল আমার কেন, আমি তো বলব শিহাব শাহীনের সিরিজটি আমাদের ওয়েব দুনিয়ার জন্য একটা আলাদা মান তৈরি করে দিয়েছে। সিরিজটি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পর ওয়েব নিয়ে সবাই নড়েচড়ে বসেছেন।
প্রশ্ন :
কয়েক বছর আগেও অনেক অভিনয়শিল্পী আক্ষেপ করতেন, অভিনয়ের জন্য বৈচিত্র্যময় চরিত্র পাচ্ছেন না। ওয়েব সেই আক্ষেপ কতটা ঘোচাল?
অনেকটা। ওয়েব পুরো চিত্র বদলে দিয়েছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা দুনিয়াতেই তো ওয়েব সিরিজের জয়জয়কার। আমাদের দেশেও নানা ইন্টারেস্টিং কাজ হচ্ছে, অভিনয়শিল্পীদের জন্য ওয়েব নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। অনেক অভিনয়শিল্পী, যাঁরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন বা কমিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন ওয়েবের কল্যাণে নিয়মিত হচ্ছেন।
প্রশ্ন :
ওয়েবে আপনি প্রচুর কাজ করছেন। এত কাজের মধ্যে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেন?
প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাই। আগে তো টিভির কাজ তিন-চার দিনেও হয়ে যেত। ওয়েবের কাজ ১৫-২০ দিন, কখনো ১ মাস বা তার বেশি লাগে। আগে থেকে চিত্রনাট্য পাই, প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থাকে।
প্রশ্ন :
এত কাজ করলে চরিত্রের বৈচিত্র্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা কি না?
পৃথিবীতে ৬০০ কোটির বেশি মানুষ, একেকজন একেক ধরনের। বিভিন্ন চরিত্রে কিন্তু আমি শতাব্দী ওয়াদুদই অভিনয় করছি। যখন যে চরিত্রই পাই, পরিচালকের চাহিদামতো সেটা পর্দায় তুলে আনি। এখানেই তো আমার মুনশিয়ানা। যদিও কাজটা সহজ নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন থিয়েটারের অভিজ্ঞতা থাকায় আমার জন্য সুবিধা হয়েছে। আমি পর্দায় নেতিবাচক-ইতিবাচক দুই ধরনের চরিত্রেই কাজ করছি। তবে আমার কাজ দেখে কেউ সমালোচনা করলে নিতে পারি। আমি মনে করি, সৃজনশীল কেউ যদি সমালোচনা নিতে না পারেন, সেটা তাঁর দৈন্য।
প্রশ্ন :
থিয়েটারের প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন জানতে চাই, টিভি, ওয়েব ও সিনেমার ব্যস্ততায় মঞ্চে সময় দিতে পারেন?
গত দুই বছর নতুন নাটক করতে পারিনি, পুরোনোগুলো করেছি। দেশে ফেরার পর নতুন নাটক করব, যদি সুযোগ পাই আরকি। আমাদের দলে (প্রাচ্যনাট) এত প্রতিযোগিতা, সুযোগ পাওয়ারও ব্যাপার আছে।
প্রশ্ন :
গত কয়েক বছরে আপনার করা অনেকগুলো চরিত্রই তো আলোচিত হয়েছে। এমন কোনো চরিত্র আছে, যেটি থেকে এখনো বের হতে পারেননি?
না। চরিত্র থেকে বের হতে না পারলে, মাথা খালি না করলে তো নতুন চরিত্রে ঢুকতে পারব না। তবে প্রিয় চরিত্রের কথা যদি বলেন, ‘আগস্ট ১৪’-এর খালিদ আমার অন্যতম পছন্দের চরিত্র।
প্রশ্ন :
সামনে আর কী কাজ করছেন?
কারাগার পার্ট টুতে থাকছি। এ ছাড়া অনেকগুলো প্রজেক্টের আলাপ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, এখনই বলা যাবে না।
প্রশ্ন :
‘কারাগার’-এর প্রথম কিস্তির একেবারে শেষে আপনাকে যাজকের চরিত্রে দেখে অনেকে চমকে গেছেন। দ্বিতীয় কিস্তিতে চরিত্রটির গতিপথ কী হবে?
এটা তো ভাই বলা যাবে না।
প্রশ্ন :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি খুব সক্রিয়। কবে কার জন্মদিন, ফুটবল-ক্রিকেটের আপডেট—আপনার ওয়াল দেখলে তো পত্রিকায় খেলার খবর না পড়লেও চলে...
(হা হা হা)...আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল। ক্রিকেট, ফুটবলের পাঁড় ভক্ত। এখনো রাত জেগে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল দেখি। সকাল সাতটায় শুটিং থাকলেও আগের রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে খেলা দেখি।
প্রশ্ন :
শুটিংয়ে সমস্যা হয় না?
না। আমার সুবিধা হলো, যখন চাই ঘুমিয়ে যেতে পারি। শুটিংয়ের ফাঁকে নিজের মতো করে বিশ্রাম নিয়ে নিই।