এই বর্বরতা বন্ধ করার জন্য আমরা বহুবার বন বিভাগকে অনুরোধ করেছি: জয়া আহসান
বিনোদনের কাজে হাতিকে ব্যবহার ও হাতিকে বাধ্য করতে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা জয়া আহসান এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পরে প্রথম আলোকে রিটের কথা নিশ্চিত করেন জয়া আহসানও।
পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে বলা হয়েছে, বন্দী হাতিকে সার্কাসে ব্যবহার, হাতির পিঠে ভ্রমণ, বিয়েবাড়িতে শোভাবর্ধনে ব্যবহারসহ বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের র্যালিতে বিজ্ঞাপনের মতো বিভিন্ন বিনোদনমূলক কাজে ব্যবহার করা এবং এই ব্যবহারের জন্য হাতিকে বাধ্য করতে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্থপতি রাকিবুল হক। রিটকারীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব আজ রোববার জনস্বার্থে রিটটি আদালতে শুনানির জন্য দাখিল করেন।
রিট নিয়ে জানতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ভয়েস মেসেজে জয়া আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতিদের যেভাবে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়, কয়েক মাস ধরে কঠিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়; এটা আমার কাছে একেবারেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা মনে হয়। একটা আধুনিক বাংলাদেশে আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এ ছাড়া হাতি একটি বিপদাপন্ন প্রাণী, এটা নিয়ে খেলা দেখানো অপরাধ ও নৈতিকতার পরিপন্থী। হাতি নিয়ে চাঁদা নিতে গিয়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। এই বর্বরতা বন্ধ করার জন্য আমরা বহুবার বন বিভাগকে অনুরোধ করেছি। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে আমাদের দেশের এই সম্পদকে রক্ষা করতে আমরা মহামান্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আশা করছি মহামান্য আদালত আমাদের রাষ্ট্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য যুগান্তকারী রায় দেবেন।’
বাংলাদেশের বন্দী হাতিকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধে, তাদের দিয়ে বিনোদনের কাজে ব্যবহার এবং হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সংগঠনটি বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আসছে।
এর মধ্যে দুইবার বন ভবন ঘেরাও করেন প্রাণী অধিকারকর্মীরা। এ সময় বন বিভাগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তার কোনো ফলপ্রসূ ভূমিকা লক্ষ করা যায়নি বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন মনে করে, হাতিকে বিনোদনের কাজে ব্যবহার এবং হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ এবং প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯-এর পরিপন্থী।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের লাল তালিকাভুক্ত প্রাণী হিসেবে এশিয়ান হাতি বর্তমানে মহা বিপদাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও এই হাতিকে বন বিভাগ কর্তৃক ব্যক্তিমালিকানায় সার্কাসের কাজে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।